মুক্তি সংগ্রামের ছয় মাস পূর্ণ হল
আজ আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ছ’মাস অতিবাহিত হল। ছ’মাস আগে এই দিনটিতে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ ইয়াহিয়ার ঔপনিবেশিক জঙ্গী-শাসন থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। এর আগের দিন ২৫শে মার্চ রাতে ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী চোরের মত অতর্কিতে সুপ্ত বাংলার নিরীহ নিরস্ত্র জনগণের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। পূর্ব ষড়যন্ত্র অনুসারে সুপরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মেশিনগান, মটারের গুলিতে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ শহীদ হন। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ট্যাঙ্কের সাহায্যে আক্রমণ চালানাে হয়। হানাদার বাহিনী চট্টগ্রামে বিমান হামলা চালায়।
পাঞ্জাবী শাসন চক্রের মােসাহেব কসাই ইয়াহিয়া ও লম্পট ভুঠো আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতার হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং এই ষড়যন্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটল ২৫শে মার্চ রাতে। ২৫শে মার্চ মানবেতিহাসের সব চেয়ে কলঙ্কিত দিন। বিশ্বের ব্যাপকতম গণহত্যার শুরু হল এই দিনেই। ইয়াহিয়া-ভুট্টো-টিকা চক্র ২/৩ দিনেই বাংলাদেশের জনসাধারণকে শায়েস্তা করে তাদের শােষনশাসন অনায়াসে চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু তারা বাংলার মানুষকে চিনতে ভুল করেছিল। আজ ছ’মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু বাংলার মানুষ অমিত বিক্রমে তাদের বেইমানীর জবাব দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সম্মুখে আজ বহু সমস্যা-বন্যা, দুর্ভিক্ষ, অসুখ, বিসুখ, শত্রুর মেশিনগানের গুলী, তবু বাংলার মানুষ পরােয়া না করে চীনা মার্কিন অস্ত্রে সুসজ্জিত ঘাতকদের চরম আঘাত হেনে যাচ্ছে।
এ ছ’মাসে আমাদের সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কর্ণেল এম, এ, জি উসমানি জানিয়েছেন যে, মুক্তিবাহিনী এ পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর ২৫ হাজার সৈন্য ও প্রায় তিনশ অফিসার খতম করেছেন। তুলনামূলকভাবে আমাদের পক্ষে হতাহতের পরিমাণ খুবই সামান্য। প্রতি ৪০ জন শত্রুর জন্য আমাদের একজন বীর সেনানী শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব খােন্দকার মােস্তাক আহমেদ এ উপলক্ষে বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পূর্ণ স্বাধীনতা। আমরা কোন সমাধান বা মীমাংসাতে রাজী নই। তিনি বাংলাদেশের জনগণের একান্ত ইচ্ছাই প্রকাশ করেছেন। এ ছ’মাসে বিশ্ববাসী উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে মুক্তিকামী মানুষকে পৃথিবীর কোন শক্তিই দমিয়ে রাখতে পারে না। সে শক্তি যত দুর্বারই হােক না কেন সংগ্রামী মানুষের জীবনপণ সংকল্পের কাছে তার পরাজয় অনিবার্য। সেই পরাজয়ের দিনটির জন্য আমাদের বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।
সাপ্তাহিক বাংলা ১: ২
২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯