আজাদ
২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
মুক্তমানব শেখ মুজিব
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
দুর্জয় সংগ্রামের সেনানী শেখ মুজিব আজ মুক্ত মানব। গতকাল শনিবার দুপুরে কুৰ্ম্মিটোলাস্থ সেনানিবাসের আটকাবস্থা হইতে তিনি মুক্তিলাভ করিয়াছেন। খাইবার হইতে কক্সবাজার পর্য্যন্ত সচেতন মানুষের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মুখে সরকার শেখ মুজিবকে মুক্ত করিতে বাধ্য হইয়াছে।
সরকার তথাকথিত রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্যদের মামলা তথা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করিয়াছেন। এই মামলা প্রত্যাহার করার ফলে শেখ মুজিব সহ পয়ত্রিশজন অভিযুক্ত বন্দী মুক্তি লাভ করিয়াছেন। তবে গত শনিবার আটকাবস্থায় সার্জেন্ট জহুরুল হক সেনানিবাসে গুলীবিদ্ধ হইয়া মারা গিয়াছেন।
গত বছর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মে মাসের শেষের দিকে ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়।
আগরতলা মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় এবং শেখ মুজিব মুক্তি লাভ না করার ফলে গত ১৭ই ফেবরুয়ারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হইতে পারে নাই। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার না করায় শেখ মুজিবই ইতিপূর্ব্বে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এমন কি তিনি প্যারোলে বা জামিনে মুক্তি লাভ করিতেও অস্বীকৃতি জানান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারসহ প্রদেশের বিভিন্ন জেল হইতে মণি শিং, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, মতিয়া চৌধুরী, হাতেম আলী খান, শুধাংসু বিমল দত্ত, নগেন সরকার, রবি নিয়োগী, সন্তোষ ব্যানার্জ্জীসহ গতকাল চৌত্রিশজন রাজনৈতিক বন্দীও মুক্তি লাভ করিয়াছেন।
বেলা প্রায় বারটার দিকে সেনানিবাসে শেখ মুজিবকে প্রথম মুক্তিদানের পর তিনি তথাকথিত মামলায় অভিযুক্তদের আনুষ্ঠানিক মুক্তির জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি তাহাদের মুক্তির পর একটি জীপে করিয়া বেলা একটার সময় ধানমণ্ডীর নিজ ভবনে আগমন করেন।
তাহাকে দেখিবার জন্য সমগ্র শহরের লক্ষ লক্ষ আবাল বৃদ্ধজনতা রাস্তায় নামিয়া আসেন।
মুক্তির পর নিজ বাসভবনে আগত বিপুল জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন যে, আমার মুক্তি ও আগরতলা মামলা প্রত্যাহার সংগ্রাম ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক- জনতার বিজয়।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯