রণাঙ্গনে ঃ দুষমণের উপর চলছে আঘাতের পর আঘাত
মুক্তি বাহিনীর তরুণ যােদ্ধারা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শত্রু সেনার ওপর প্রচণ্ড চাপ অব্যাহত রেখে প্রচুর খান সেনা হতাহত, রাস্তা ঘাট, রেল সেতু, ট্রাক, জীপ, ট্রেন ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছেন। মুক্তি যােদ্ধারা ঢাকার বৈদ্যের বাজার, কইকারদের, সােনারগাঁও এবং আনন্দবাজার এলাকা শত্রু কল মুক্ত করেছেন। তাছাড়া কুমিল্লা জেলার সালদা নদী এবং সেখের বাজার এলাকাও মুক্ত করা হয়েছে। মুক্তি যােদ্ধারা ঐ সব এলাকায় বাংলাদেশ পতাকা উডীন করেছেন। গত ৪ঠা ও৫ই সেপ্টেম্বর যশাের, রাজশাহী, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তি বাহিনীর কমান্ডাে আক্রমণে ১০ জন রাজাকার নিহত হয়েছে।
গত ৩রা সেপ্টেম্বর যশাের জেলার ধুলিয়ানিঘাট গ্রামে হানাদার সৈন্যরা যখন লুঠতরাজ চালাচ্ছিল, মুক্তি যােদ্ধারা তখন সেখানে গিয়ে তাদের আক্রমণ করেন। আক্রমণে ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য খতম হয়। রাজশাহী সেক্টর থেকে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ, নাটোরের দুর্গাপুর থানা এলাকায় মুক্তি বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে পাক সেনাদের পদলেহী দালাল, রাজাকার এবং বর্বর সৈন্যরা ভীত সন্ত্রস্ত এবং বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের সংবাদদাতা রণাঙ্গন থেকে জানাচ্ছেন যে, গত ২২শে আগষ্ট অত্র থানার একটি এলাকায় ৫০/৬০ জনের একটি রাজাকার দল মুক্তি বাহিনীর ওপর আক্রমণের দুঃসাহস করলে স্বাধীনতাকামী তরুণ গেরিলা যােদ্ধারা তা প্রতিহত করে তীব্র পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ৯ জনকে খতম ও ১২ জনকে মারাত্মকভাবে জখম করেছেন। ঐ একই দিনে তথাকথিত শান্তি কমিটির সদস্য গণধিকৃত কুখ্যাত আবদুল কাদেরকে গেরিলা যােদ্ধারা হত্যা করেছেন।
গত ২৩শে আগস্ট নাটোরের দুর্গাপুর থানার কাশিপুর স্কুলে অবস্থানরত একদল তরুণ যােদ্ধা এক অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১১ জন হানাদার সৈন্যকে খতম ও বহু সংখ্যক সৈন্যকে আহত করেছেন। গেরিলা যােদ্ধারা উক্ত স্থান থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছেন। এদিকে গত ২৫শে আগষ্ট দুর্গাপুর থানার অধীন আমগ্রামে গেরিলাবাহিনী রাজাকারদের একটি দলের উপর চোরাগােপ্তা আক্রমণ চালিয়ে ৪ জনকে খতম করেন। এছাড়া তথাকথিত শান্তি কমিটির কুখ্যাত দালাল আবিদ আলীকেও খতম করেছেন। আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, গত ২৪শে আগষ্ট গেরিলাযােদ্ধারা রাজশাহী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিলে সারা শহর গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যায়। অন্যদিকে পাক সেনাদের পদলেহী দালাল বেতার পরিচালক (মােহাম্মদ সাইফুল্লাহ) দুদিন বেতার চালু করতে ব্যর্থ হয়। ফলে দখলদার খান সেনারা দিশেহারা ও বিব্রত হয়ে পড়ে। বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, মুক্তি বাহিনীর তরুণ যােদ্ধারা গত ১৬ই আগষ্ট বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানা আক্রমণ করে ৩০টা রাইফেল দখল করে নেয়। গেরিলা যােদ্ধারা পরে থানা ও পােষ্ট অফিসে অগ্নি সংযােগ করে দেন। আমাদের তরুণ যােদ্ধারা খানসেনাদের পাঁচটা দালাল মমিন খাঁ, চেয়ারম্যান ফহিমউদ্দীন ও অন্য দু’জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছেন।
পূর্ব রণাঙ্গন থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন যে, গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী সিলেটের পাচারা, চরনল, আজনপুর ও চাদপুর এবং কুমিল্লার নয়ানপুর, চানলা, মন্দভাগ এলাকায় শত্রু ঘাটির ওপর সাফল্যজনক আক্রমণ চালিয়ে ৫৭ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের পদলেহী ২৪ জন রাজাকারকে খতম করেছেন। এই সব আক্রমণে ২৫ জন খান সেনা গুরুতর রূপে আহত এবং ৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও ৯ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী হয়। এছাড়া স্বাধীনতাকামী তরুণ যােদ্ধারা কলাচোরা ও সুলতানপুরে শত্রু সেনার কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নিয়েছেন। আর একজন কর্ণেল খতম সম্প্রতি মুক্তিবাহিনীর পোতা মাইনে একজন কর্নেল সরফরাজ খান খতম হয়েছেন।
জয়বাংলা (১)১: ১৮ ।
১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –জয়বাংলা