দস্যুবাহিনীকে প্রতিরােধের তাগিদে ফরিদপুরে গড়ে উঠেছিল সংগ্রাম পরিষদ
শক্তিগুলাের সংযুক্ত ফ্রন্ট তিনি রাজবাড়ি থেকে এসে মুক্তিবাহিনীতে যােগ দিয়েছেন ফরিদপুর শহর থেকে আগত এক বন্ধু জানালেন একুশে এপ্রিল বিকেল তিনটেয় পাকবাহিনীসহ প্রবেশ করে। সাধারণ ঘরবাড়ী মন্দির (জগদ্বন্ধু মাঠ) মসজিদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (সারদা-সুন্দরী মহিলা কলেজ) ধুলিসাৎ করে দেয়। হিন্দু এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় … আক্রমণে ফরিদপুরের স্বাধীনতাকামী জনগণ শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে বেচে আছে। প্রতিক্ষায় রয়েছে মুক্তিবাহিনীর অবশ্যম্বভাবী বিজয়ের। দলে দলে হিন্দু-মুসলমান যুবকেরা মুক্তি বাহিনীতে যােগ দিয়েছেন, দিচ্ছেন। মিলিটারির হত্যা যজ্ঞ, জামাত মুসলিম লীগ গুণ্ডাদের লুটতরাজ ও গােয়েন্দাগিরি, লক্ষ লক্ষ লােকের দেশত্যাগ, শবের গন্ধ, শশ্মান হয়ে যাওয়া গ্রাম-শহর, তারই মাঝে বিদ্যুৎ চমকের মতাে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ। পাক দস্যু বাহিনীর হাতে লক্ষ লক্ষ লােক শহীদ হয়েছে। পাকবাহিনীও মরেছে, মরছে মুক্তিবাহিনীর হাতে, গ্রামবাসীদের হাতে। ফরিদপুর জেলার গােপালগঞ্জ শহরের আশ পাশে এমনি কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। মকসুদপুর সাতপাড়, গােপালগঞ্জ এলাকা পাক দস্যুদের হামলায় শশানে পরিণত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লােক গৃহহারা হয়েছে। তারই মাঝে গড়ে উঠেছে মুক্তিবাহিনীর এক বিস্ময়কর অভিযান। প্রাক্তন সামরিকবাহিনীর লােক ই পি আর, স্থানীয় যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এই গেরিলাবাহিনীর সংগঠন। তারা চাঁদেরহাট এলাকায় গোপন ঘাটি প্রতিষ্ঠা করে শত্রুসেনার গতিবিধির উপর তীক্ষ দৃষ্টি রাখছিল। সুযােগমত একটা স্টিমার মুক্তিবাহিনীর আওতায় এসে গেল। ১৭/১৮ জন পাক দস্যুবাহিনী নিহত হলেন। মুক্তিবাহিনীর হাতে এলাে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র । এটা ঘটলাে চাঁদেরহাট গ্রামে। খারদিয়া গ্রামে ৭/৮ জন দালাল খতম হয়েছে মুক্তিবাহিনীর হাতে। জনসাধারণ বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করলেন। এরপর এলাে মিলিটারি। পুড়িয়ে দিল ২০/২৫টা গ্রাম। ৫০০/৬০০ লােক শহীদ হলাে। ঘটনাটি ঘটেছিল জুন মাসের মাঝামাঝির দিকে। এসব এলাকায় ইয়াহিয়ার দালাল শান্তি কমিটি’ এখন খুবই ভীত সন্ত্রস্ত্র। যেসব এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা রয়েছে সেসব এলাকায় শান্তিকমিটি “আত্মগােপন করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। চাঁদেরহাট এলাকায় মুক্তিবাহিনীর ‘অপারেশনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এক বন্ধু উপরের ঘটনা বললেন। আরও অনেক বন্ধুর সাথে আলাপ হলাে। সামরিক বাহিনী জামাত, মুসলিম লীগ গুণ্ডাদের দালাল হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু দালালরা যখন জনসাধারণ আর মুক্তি বাহিনীর হাতে পড়ছে তখন সেই দালালদের রক্ষায় এগিয়ে আসছে না। জনসাধারণের ধারণা হলাে এমনিও মরতে হবে, মিলিটারি কাউকে ছাড়বে না, বরং শত্রু খতম করে মরাই ভালাে। জনসাধারণ গভীর আগ্রহ নিয়ে রেডিওর খবর শােনে। উথান্ট-ইন্দিরা, কোশিগিন আকাশবাণী তাদের পরিচিত। তার উপর আছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। তারা চিনে ফেলছে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী স্বরূপ।বাংলাদেশের জনগণ আজ সব হারিয়েছে। হারিয়েছে গণতন্ত্র, সংস্কৃতি এমনকি জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা। অতীত তাদের নিকট অন্ধকারময়। ভবিষ্যত উজ্জ্বল। তাদের হারাবার আর কিছু নেই এবার তাদের পাওয়ার পালা শুরু হয়েছে পালা বদলের দিন।
মুক্তিযুদ্ধ। ১ ৪
১ আগস্ট ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –মুক্তিযুদ্ধ