হানাদারেরা সমানে মার খাচ্ছে
(জয়বাংলা প্রতিনিধি)। মুজিব নগর—১৮ই জুলাই বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে বাংলার অপরাজেয় অগ্নি সন্তান মুক্তি যােদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে আতঙ্কগ্রস্ত হানাদার পাক সেনারা সমানে মার খেয়ে চলেছে। এখানে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী গত দু সপ্তাহে মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে প্রায় ১ হাজার পাক সেনা খতম এবং ৩ শত জন আহত হয়েছে। এ সময়ে মুক্তি বাহিনীর হাতে পাক সেনাদের ৫০ জন তাবেদার খতম হয়। এ ছাড়া, গত দু’সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০টি সেতু এবং ৩টি টেলিফোন লাইন মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে বিধ্বস্ত হয়। এ গুলাে হানাদারেরা হত্যা যন্ত্রে ব্যবহার করছিল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মুক্তি যােদ্ধারা ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা, যশাের জেলার নাভারন, ঝিকরগাছা, টাঙ্গাইল জেলার ৪টি থানা, দিনাজপুরের পঁচাগড়, সিলেটের জয়ন্তিয়াপুর এলাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারা কুষ্টিয়ায় পাক হানাদারদের একটি ঘাটি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরই মাঝে মুক্তিযােদ্ধারা হানাদার পাক সেনাদের হেডকোয়ার্টার ঢাকায়ও তাদের গেরিলা তৎপরতা জোরদার করেছেন। ঢাকাসহ বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় মুক্তি যােদ্ধাদের অবিরাম প্রচণ্ড আক্রমণে হানাদার খানসেনারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন দখলীকৃত, জেলার সদর দফতর রক্ষা করবে, না বিভিন্ন রনাঙ্গণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে তা এখন ঠিক করে উঠতে পারছেনা।
পরিস্থিতি খারাপ বুঝে জঙ্গীশাহী ঢাকায় কারফিউ জারী করেছে। গত তিন মাসে মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে প্রায় ৫ শত অফিসার সহ ২০ হাজারেরও অধিক পাক সেনা নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে খানসেনার সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পাওয়ায় জঙ্গীশাহী অবাঙ্গালী যুবকদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করেও তাল সামলাতে পারছে না। কারণ মুক্তিযােদ্ধাদের গণবাহিনীই এসব রাজাকারদের ঠাণ্ডা করে দিচ্ছে ফলে রাজাকার বাহিনীর হাতের অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনী ও গণবাহিনী দখল করে নিচ্ছে। বাংলাদেশে মুক্তি যােদ্ধাদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়ায় পাক জঙ্গীশাহী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইচ্ছা থাকলেও আর সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘অরক্ষিত রেখে সেখান থেকে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ১৯৬৫ সালে লাহাের, পেশােয়ার, শিয়ালকোর্ট কোয়েটায় ভারতের ঠেলা এবং হরহামেশা আফগানিস্থানের ঠেলার ধুক ধুকানী এখনও থামেনি।। তাই এবার জঙ্গীশাহী অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরের বাগ পালিন্দ্রী, রাওয়ালকোর্ট, হাজীরাত প্রভৃতি উপজাতীয় এলাকায় সৈন্যসংগ্রহ কেন্দ্র খােলার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। প্রকাশ, সুধান নামক উপজাতি লােকদের জোর করে সেনাবাহিনেিত ভর্তি করার প্রয়াস চলছে। কিন্তু সুধানদের নেতা ইব্রাহিম খা পাক জঙ্গী শাহীকে সমর্থন করে না, তাই সুধানরা সামরিক বাহিনীতে লােক ভর্তি কেন্দ্র স্থাপনে বাধা দিচ্ছে। তবে পাক বাহিনী যদি তাদের উপর জুলুম করে তাহলে তাদের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে পড়বে। এদিকে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম প্রভৃতি শহরে প্রকাশ্য দিবালােকে মুক্তিযােদ্ধাদের ওস্তাদী মার শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতিমুক্তি যােদ্ধারা ঢাকায় গভর্নর হাউসের গেটে গুলি ও হাতবােমা নিক্ষেপ করে একজন প্রহরীকে খতম করেছেন। সিলেট শহরে মুক্তিযােদ্ধারা ডেপুটী কমিশনারের অফিস এবং বাংলােতে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে হতাহত করেছেন।
জয়বাংলা (১) ১ : ১১ :
২৩ জুলাই ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯ –জয়বাংলা