You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.18 | সকল রণাঙ্গনে গেরিলা তৎপরতা সম্প্রসারিত - সংগ্রামের নোটবুক

সকল রণাঙ্গনে গেরিলা তৎপরতা সম্প্রসারিত

বহু পাকসেনা হতাহত ঢাকার জনজীবন এখনও অচল

(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) ঢাকার স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠা করিয়া বিদেশী সফরকারীদের সামনে সব ঠিক হ্যায় গােছের চিত্র তুলিয়া ধরার চেষ্টায় পাকিস্তানী জঙ্গী শাসকেরা শােচনীয়রূপে ব্যর্থ হইয়াছে । ইয়াহিয়া-টিক্কা-নিয়াজীকে হতাশ করিয়া ঢাকার সাধারণ মানুষ নীরব অসহযােগিতা অব্যাহত রাখিয়াছে। মুক্তিফৌজেব অতর্কিত হামলা ও বিস্ফোরণের শব্দ পাকবাহিনী নিয়ন্ত্রিত বেতারের স্বাভাবিক অবস্থা’ সংক্রান্ত প্রচারণার ফানুষ বিদীর্ণ করিয়া দিতেছে। আর জঙ্গী শাসকদের কপাল খারাপ, বিদেশী সফরকারীদের চোখেও এসব ধরা পড়িয়া যাইতেছে। প্রকৃত অবস্থা হইল এই, গ্রামাঞ্চলে ত কথাই নাই, খােদ ঢাকা শহরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনা জঙ্গী শাসকদের পক্ষে সম্ভব হয় নাই। আর শাসনের ভিত্তি যেখানে শুধুমাত্র সন্ত্রাস ও বলপ্রয়ােগ, যেখানে আইন বলিতে ‘জঙ্গলের আইন ছাড়া অন্য কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনা কোনমতেই সম্ভব নয়। ঢাকা শহরে স্কুল কলেজ খােলা হইয়াছে কিন্তু শতকরা দশ জন ছাত্রও হাজির হয় না। শিক্ষক অধ্যাপকদেরও অনেকেই অনুপস্থিত। যাহারা প্রাণের ভয়ে বা চাকরির মায়ায় কাজে যােগ দিয়াছেন, তাহারাও ক্লাসে গিয়া নাম ডাকিয়া দায়িত্ব শেষ করেন। বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখ ঘােষণা করিয়া রেডিও মারফত ছাত্র-ছাত্রীদিগকে পরীক্ষা দিতে আবেদন জানান হইতেছে কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা নাই। মৃত্যুপুরীর বাসিন্দা। অফিস আদালত খুলিয়াছে কিন্তু কাজকর্ম চলিতেছে না। কর্মচারীরা অফিসে যান কিছুক্ষণ থাকেন, তারপর চলিয়া আসেন। অফিসে বা রাস্তাঘাটে কুশল বিনিময় ছাড়া পরস্পরের মধ্যে কোন কথা নাই । যেন মৃত্যুপুরীর বাসিন্দা। সকলের মুখে ছিপি আঁটা। বুকে পাষান ভার চাপান। চেহারায় আতঙ্কের ছাপ 

সুপরিস্ফুট। অফিস হইতে বাড়ী ফিরিয়া নিতান্ত জরুরী কাজ না থাকিলে কেহ বাহির হয় না। দুপুরের পর হইতেই রাস্তাঘাটে লােক চলাচল কমিতে থাকে, সন্ধ্যার পর একেবারে জনশূন্য। দোকানপাট, হােটেল, রেস্তোরা, চাখানা খাঁ খাঁ করিতেছে।

মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা এই কবরের শাস্তিকে বিদীর্ণ করিয়া মাঝে মাঝেই মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলা। সম্প্রতি মুক্তিফৌজ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আক্রমণ চালাইয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা আংশিকভাবে বিকল করিয়া দেয়। টহলদারী। পাকসেনাদের উপরও প্রায়ই আক্রমণ ঘটে। এই সকল অতর্কিত আক্রমণের দরুণ পাকদস্যদের মনে এরূপ ত্রাসের সৃষ্টি হইয়াছে যে, কোথাও একটা রিকশার চাকা ফাটার শব্দ হইলেও হানাদার সৈন্যরা এলােপাথাড়ি গুলি চালাইতে শুরু করে।  পাক হানাদারবাহিনীর অত্যাচার উৎপীড়ন এখনও অব্যাহত মাঝে মাঝে মুক্তিফৌজ লুকাইয়া আছে। সন্দেহে বিভিন্ন এলাকা ঘেরাও করিয়া এলাকাবাসীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালায়। নারী নির্যাতন এখনও সমানে চলিতেছে। ছাত্র যুবকদের ধরিয়া নিয়া গিয়া বিনা বিচারে হত্যা করিতেছে। টাকার লােভ দেখাইয়াও দালাল মিলিতেছে না। মুক্তিফৌজকে ধরাইয়া দিতে পারিলে মােটা পুরস্কার দেওয়া হইবে বলিয়া রেডিও এবং মর্নিং নিউজ, পাকিস্তান অবজার্ভার প্রভৃতি মারফত দিনের পর দিন বিজ্ঞাপন প্রচার সত্ত্বেও মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামীর মুষ্টিমেয় মুখচেনা বেইমান ব্যতীত কোন নাগরিকের সহযােগিতা পাইতেছে না জঙ্গী শাসকেরা। গেরিলা তৎপরতা সমপ্রসারিত গত এক সপ্তাহে সকল রণাঙ্গনে গেরিলা তৎপরতা সম্প্রসারিত ও তীব্রতর হইয়াছে। পাক হানাদার বাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হইয়াছে মুক্তিফৌজের প্রবল আঘাতে। কুষ্টিয়ার মেহেরপুর এলাকায় পাকবাহিনী মুক্তিফৌজের হাতে প্রচণ্ড মার খাইয়াছে। সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, দিনাজপুর প্রভৃতি রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ হানাদার দস্যু বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করিতেছে। বরিশাল জিলার মাধবপুর এলাকায় মুক্তিফৌজ …।

মুক্তিযুদ্ধ। ১ : ২

১৮ জুলাই ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯ –মুক্তিযুদ্ধ