১১ আশ্বিন ১৩৭৮ মঙ্গলবার ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-ক্রেমলিনে ভারতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অবিলম্বে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে পরিবেশ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনিন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ, পোদগর্নি ও কোসিগিনের সঙ্গে “বাংলাদেশ প্রশ্নে” ছয় ঘন্টা ব্যাপী আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন কর্তৃক আর সম্মানে প্রদত্ত একভোজ সভায় বলে যে, “পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তান সরকারের সাথে এক মরনপণ সংগ্রামে লিপ্ত। এটা ভারত পাকিস্তান সমস্যা নয়। এটা একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা কিন্তু এই সমস্যার প্রতি আন্তর্জাতিক সাড়া অত্যন্ত তুচ্ছ। শরণার্থীরা যাতে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে, সে ব্যাপারে সাহায্য করে বিশ্বের সকলের রাষ্ট্রের একান্ত দায়িত্ব বলে ভারত মনে করে। (বি ডি-২ পৃঃ ২৩৭-৩৮) শ্রীমতী গান্ধী আরো বললেন, “প্রতিবেশীর বাড়ীতে আগুন জ্বললে আমরা বিচলিত না হয়ে থাকতে পারিনা। পূর্ব্বাংলার যা ঘটেছে তা শুধু মাত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না। ৯০ লক্ষ শরণার্থী ভারতে এসেছে। আমরা তাঁদেরকে আত্নকরণ করতে পারি না। আমাদে যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত লোকদের আমাদের বৃহৎ জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ দিতে চাইনা। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী এ এন কোসিগিন বলেনঃ আমাদের মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শ্রিমতী গান্ধী আপানার সঙ্গে এই প্রশ্নে যে মত বিনিময় শুরু হয়েছে, তা থেকে দেখা যাচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত এই অভীষ্ট সাধনের জন্য তাদের প্রয়াস সংহত করে চলবে।
-পাকিস্তান সরকারের এক প্রেসনোট বলা হয়, ৭ সেপ্টেম্বর থেকে মিঃ এ কে ব্রোহীকে বিবাদী পক্ষের কৌসুলী নিয়োগ করা হয়েছে এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগ অভিযুক্ত অধুনা বাতিলকৃত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিচার রায় দেয়া হয়নি। তবে সাক্ষ্য প্রমাণ ও বিচার শেষ হয়েছে।
-বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী জনাব এমদাদ আলী মুক্তিযুদ্ধে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ওপর এক পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামরুজ্জামান এর কাছে পেশ করেন। (৩ খঃ পৃঃ ১৫৯)
-সাতকানিয়ার রাজাকার ও পাকবাহিনীর হাতে বহু মুক্তিবাহিনীর সমর্থক ধৃত হয়। অর্থের বিনিময়ে জীবনমৃত অবস্থায় এমদাদ মিয়া সিকদারসহ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা সমর্থনকারীকে ছেড়ে দেয়। এরপর এভাবেই টাকার বিনিময়ে বহুজন মৃত্যুর দুয়ার থেকে অব্যাহতি পায়।
-Prime Minister Indira Gandhi pressed in Kremlin the urgency of creating conditions in which East Bengal refugees irrespective of their religion can return to their homes without fear. (সংবাদপত্র)
-বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কোষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডঃ মোজাফফর আহম্মদ চৌধুরী কতিপয় প্রশ্নাদিহ মন্ত্রী পরিষদ সচিবের পত্রোত্তর দেন ( ৩খঃ পৃঃ১৫২)
-বেলজিয়ামে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ পিয়ের হার্সেল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণদান কালে বলেন যে, “বেলজিয়াম পূর্ববাংলার সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চায়, যাতে করে শরণার্থীরা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিশ্চয়তা নিয়ে ফিরে যেতে পারে।” (সাপ্তাহিক জয়বাংলা ২৫/১০/৭১)
-পাকিস্তান নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা ৪৫ জন নৌসেনা নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গোড়াপত্তন হয়। এম ভি পলাশ এবং এমভি পদ্মা নামের জাহাজ দু’টি নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। এ জাহাজ দু’টি ছিল কলকাতা পোর্ট কমিশনারের। প্রায় ৩৮ লাখ টাকা খরচ করে এগুলোকে যুদ্ধের উপযোগী করে তোলা হয়। প্রতিটি নৌযানে দুটি করে ৪০ মিলি মিটার কামান (এল-৬০) বসানো হয়। এই দু’টি জাহাজই হলো বাংলাদেশের প্রথম সামরিক নৌ্যান।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী