You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.27 | ১০ আশ্বিন ১৩৭৮ সোমবার ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১০ আশ্বিন ১৩৭৮ সোমবার ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

-প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সকল মন্ত্রনালয়ের সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। অর্থ সচিব জনাব কে জামান সম্প্রতি দিল্লী সফরে ভারত সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনার এক লিখিত প্রতিবেদন পেশ করেন। কৃষি সচিব জনা নূরুদ্দিন আহমেদকে পরিকল্পনা কোষের সঙ্গে কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দ্দেশ দান করেন। বৈঠকে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের বিভিন্ন সমস্যাদি আলোচিত হয় (৩খঃ পৃঃ ১৫৭)

-জাতিসংঘ পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলী পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ উদ্ধিতি দিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করেন। (৭খঃ পৃঃ১৪৪)

-জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বক্তৃতাকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং বাংলাদেশ পরিস্থিতি উল্লেখ করে ভারতে অবস্তানকারী বাংলাদেশের শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও আওয়ামীলীগের সাথে একটি মীমাংসা আসার জন্য পাকিস্তানীদের আহবান জানান।

-২৭ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মওলানা মান্নানের নেতৃত্ব মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল খ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক এবং পূর্বাঞ্চলীয় কম্যাণ্ডের কম্যাণ্ডার লেঃ জেঃ এ কে নিয়াজীর সাথে সাক্ষাৎ করে।

-জেনারেল নিয়াজীকে এক কপি কোরান শরীফ উপহার দিয়ে মওলানা মান্না বলেন, পাকিস্তান নিরাপত্তা ও ইসলামের গৌরব বৃদ্ধির জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে সহযোগীতা করে প্রস্তুত। প্রত্যুত্তরে জেনারেল নিয়াজী বলেন, ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক এবং অপরাপ দেশপ্রেমিক নাগরিকরা যোগাযোগ মাধ্যমগুলো রক্ষা এবং রাষ্ট্রবিরোধীদের নির্মূল করতে পারে। ভারতীয় চরদের মোকাবিলা করার জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রেও জেনারেল নিয়াজী তাঁদেরকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

-এই বৈঠকের পর মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিণীতে অন্তর্ভূক্ত করে সামরিক ট্রেনিং দানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ আলীম চৌধুরী হত্যায় মওলানা মান্নানের হাত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

-ভারতের প্রধামন্ত্রী শ্রী মতী ইন্দিরা গান্ধী সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে দু’দিনের সরকারী সফরে (২৭-২৯ সেপ্টেম্বর)মস্কো যাত্রা করেন। মস্কোয় অবস্তানকালে তিনি পূর্ব বাংলার সমস্যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট পোদগর্নি, মিঃ কোসিগিন এবং মিঃ ব্রেঝনেভ এর সঙ্গে আলোচনা করবেন। উল্লেখ্য, শ্রীমতী গান্ধীর সোভিয়েতে এই সফরের পরেই সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচার মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কার্যকলাপের তীব্র সমালোচনা করা হয়। (কে সি এ পৃঃ ২৪৯৯১)

-মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী এক সাক্ষাৎকারে এ সময়ে রণ পরিস্থিতি বর্ণনায় বলেন, “আমাদের রণকৌশল অত্যন্ত ফলপ্রসু বলে প্রমণিত হয়। সেপ্টেম্বর শেষ নাগাদ রক্তহীন হয়ে পড়ে তাদের (পাকবাহিনী) ২৫ হাজার সৈন্য বিনষ্ট হয়। বহু যানবাহনে লোকসান হয়।” (দৈঃ বাঃ ৩-১২-৭২)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী