You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.12 | যৎকিঞ্চিৎ - সংগ্রামের নোটবুক

যৎকিঞ্চিৎ

গত রবিবার দিল্পিস্থিত পাক হাইকমিশন অফিসের একজন বাঙালি কর্মীকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করার যে বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে তাহা যদি সত্য হয় তাহা হইলে বলিতেই হইবে অস্থায়ী হাইকমিশনার ও তাহার নির্দেশে চালিত দুই জন গােয়েন্দা কর্মীসহ গােয়েন্দা অফিসারটি বীর বটে। একজন অধস্তন কর্মচারীকে একক অসহায় অবস্থায় হাতের কাছে পাইয়া বশংবদ লােকেদের দ্বারা পিটাইয়া অজ্ঞান করিয়া ফেলা এবং তার পরেও তাহার ঔষধ-পথ্যাদির ব্যবস্থা না করা কি কম মর্দানির কাজ। এ মর্দানি পাকিস্তানি কেতাবে লিখিয়া রাখিবার মতাে। কিন্তু কেন? এই সাধারণ বাঙালি কর্মীটির উপর বহু ক্ষমতার স্থায়ী হাইকমিশনার গোঁসায় খেপিয়া উঠিলেন কেন? সংবাদে প্রকাশ, কর্মীটির আবেদনক্রমে তিনি-ই তাহাকে প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র কিনিবার জন্য দূতাবাসের বাহিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়াছিলেন। কিন্তু যখন তিনি । বাহিরে যাইতেছিলেন, তখন তাঁহাকে বাধা দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে প্রদত্ত অনুমতি প্রত্যাহার হইয়াছে। অনুমতি প্রত্যাহৃত হইয়াছে কেন ইহা জানিতে চাওয়ার বিষম অপরাধেই এ বাঙালি শুওরের মুখ বন্ধ করিয়া । দেওয়ার হুকুম হয়। সঙ্গে সঙ্গে হুকুম তামিল-প্রচণ্ড প্রহারে কর্মীটিকে অচৈতন্য করিয়া ফেলা। মুখে যখন লাগাম নাই আর বক্তা যখন নিরাপদ পদে অধিষ্ঠিত তখন অসহায় একজন কর্মীর উপরে যে কোন গালিবর্ষণে বাধা কোথায়। কিন্তু বাঙালি ‘শুওর’ না মহাবিক্রম ব্যাঘ্র অস্থায়ী পাক হাই-কমিশনার তাহা তাঁহার দণ্ডমুণ্ডের মালিক ও মনিব জঙ্গী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাকেই শুধাইয়া দেখিবেন। জানিতে পারিবেন, বাংলার বাঘের  মতােই বাঙালির বিক্রম আর তাহার গর্জনে আজ পশ্চিম-পাকিস্তানী মসনদ টলমল। আমরা অত্যাচারিত পাক মিশনের কর্মী শ্রীগােলাম মুস্তাফার নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বিগ্ন। দিল্লিস্থিত বাংলাদেশ মিশনের প্রধান আন্তর্জাতিক রেডক্রসের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করিয়া চিঠি দিয়াছেন। কর্মীটির নিরাপত্তার জন্য রেডক্রস অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুন, ইহাই আমাদের একান্ত অনুরােধ।

১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৮, আনন্দবাজার পত্রিকা