You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.10 | শ্রীমতি গান্ধীর সফরশেষের অভিজ্ঞতা - সংগ্রামের নোটবুক

শ্রীমতি গান্ধীর সফরশেষের অভিজ্ঞতা

প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধীর সফর শেষের অভিজ্ঞতা তাঁকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে কি না, সে-কথা এখনওপরিষ্কার নয়। ওদিকে ভুট্টো পিকিং থেকে পিনডি গিয়ে রণহুঙ্কার ছাড়ছেন। বিমান আক্রমণের মহড়ার মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের পাঠকদের মনেও অনেক প্রশ্ন উঠছে। আমরা এবার তাঁদের কিছু ভাবনা তুলে ধরলাম। মতামতের জন্য লেখকরাই দায়ী, সম্পাদক নন। | সারাক্ষণ ঘুরে ফিরে সকলের মুখেই এক প্রশ্ন। যুদ্ধ কি লাগবে? শিক্ষিত অশিক্ষিতের ভেদাভেদ নেই, অফিস, সেলুনে, চায়ের দোকানে, রিকসাওয়ালাদের আডডায় একজন আর একজনকে প্রশ্ন করে যুদ্ধ কি সত্যিই হবে?

প্রশ্নটা সকলেরই মুখে, নির্দিষ্ট উত্তর বা মতামত অনেকেরই নেই। পাকিস্তানের দেয়ালে দেয়ালে নাকি “ক্রশ ইনডিয়া”-এই পােস্টার পড়েছে। সেরকম যুদ্ধ উন্মাদনা নেই ভারতে। বরং, যুদ্ধ যদি এড়ানাে যায়, সেটাই যেন ভালাে। এই গরিব দেশে যুদ্ধ একটা চরম বিলাসিতা। চরম মুহূর্ত ছাড়া সে পথ নেবার মানে হয় না। অথচ বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের আর কীইবা পথ আছে, তাও তাে বােঝা যাচ্ছে না। ভারতের পাকিস্তান সম্পর্কে কোনাে ভীতি নেই। যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তানের কাছে হেরে যাবার কথা কেউ ভাবে না । কিন্তু যুদ্ধের কথা উঠলেই চীনের বিরাট ছায়া পড়ে তার ওপর। চীন কী করবে? পাকিস্তানকে শুধু মৌখিক সহানুভূতি জানাবে না প্রত্যক্ষভাবে নেমে পড়বে ভারতের বিরুদ্ধে? শােষিত মানবতাকে সম্মান দিতে চায় যে চীন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের নির্যাতন দেখেও তার মুখে টু শব্দটি নেই-বরং সে অত্যাচারী ইয়াহিয়াকে মদত দিতে চায়-কোনাে যুক্তি দিয়েই এর কারণ বােঝা যায় না। SSION * সীমান্তে শত্রুসৈন্য দাঁড়িয়ে এই সময় ইন্দিরা গান্ধী গেলেন বিদেশে-যুদ্ধ থামাবার শেষ চেষ্টায় । যতই কূটনৈতিক মিষ্টি মিষ্টি কথা শােনা যাক, কারুর কাছ থেকেই কোনাে সাহায্য পাওয়া গেল না। এক কোটি উদ্বাস্তুর সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউ। দেখেশুনে মনে হয়-ভারতের শুভাশুভ কি এখনাে কয়েকটি বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভরশীল? পরামর্শ দেবার নাম করে তারা ভারতের কান টেনে রেখেছে? তাহলে, ভারতের একবার অন্তত স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার এই সময়। ইন্দিরা গান্ধী এবার স্পষ্ট ভাষায় বলুন-পাকিস্তান অন্য রাষ্ট্র, তার স্বার্থ নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নেই ভারতের। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে উদ্বাস্তুরা ফিরে যাবে , সীমান্তে উত্তেজনা থেকেই যাবে। ইয়াহিয়া খান যদি এটা বুঝতে না পারেন-তা হলে আমাদের জওয়ানরা  বাধ্য হয়েই পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবে। তার নাম যদি যুদ্ধ হয়, হােক।

-অনিল আচার্য, কলকাতা-৯

10-nov-1971

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা