ধন্য, বিজয় সেনানী
মায়ের বিগত ১৬ ডিসেম্বর অপরাহ্ন ৪-৩১ মিনিটে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর কাছে ঢাকার পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ জাগ্রত এশিয়ার তথা বিশ্বমানবতার অগ্রগতির ইতিহাসে একটি রক্তচিহ্নিত দিবস। বাংলাদেশের দীর্ঘ নয়মাসব্যাপী দুর্নিবার স্বাধীনতা সংগ্রামের এই প্রসন্ন পরিসমাপ্তি ভারতের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী এবং ভারতের প্রগতিশীল পররাষ্ট্রনীতির এক অলােকসামান্য বিজয় কাহিনীকে সূচিত করছে। নয়মাস আগে পাকিস্তানের ধর্মান্ধ দুষ্টচক্র বাংলাদেশের সাড়ে সাতকোটি নরনারীর ওপর যে অন্যায় যুদ্ধ এবং দুঃসহ দুঃশাসনের যে গুরুভার চাপিয়ে দিয়েছিল আজ তার অবসান হল এক শােচনীয়। পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। বারােদিন আগে এই দুষ্টচক্র অতর্কিত যুদ্ধ ঘােষণার দ্বারা ভারতবর্ষকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। সেই যুদ্ধেও তাদের পরাজয় হল অনিবার্য। পূর্ব ও পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনীর এই বিজয়গাথা আজ পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করল। এই যুদ্ধে আমরা যে শুধু শত্রুর আক্রমণ। প্রতিহত করে দেশের অখন্ডতা ও নিরাপত্তার রক্ষা করতে পেরেছি তাই নয়, আমাদেরই আপনজন বাংলাদেশের অধিবাসীদের এক দুঃসহ ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে জয়যুক্ত করতে নাহায্য করেছি। জাতিকে এই দীপ্তিময় দুই মুকুট উপহার দিয়েছে আমাদেরই শৌর্যবান বিজয়সেনানী।
চন্ডিকাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, বারাসত।
সেই দুই সাংবাদিক
বাংলাদেশ এখন মুক্ত। বাংলাদেশের জেলখানাগুলাে এখন মুক্ত। অথচ আমাদের সেই সাংবাদিক বন্ধু দুজন কোথায়? বাংলাদেশে হানাদারী আক্রমণ শুরু হওয়ার সময় দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুরজিৎ লাহিড়ী আগরতলা সীমান্তে সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই গত ২রা এপ্রিল সােনামুড়ার ভারত সীমান্ত থেকে তাদেরকে পাক-হানাদাররা জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। এরা দুজনই তরুণ সাংবাদিক। দীপক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। সুরজিৎ এ বছর ঐ বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষার্থী। দুজনই সাংবাদিকতা বিভাগের নানা প্রগতিশীল সংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি মিঃ এ ডি মানী এম পি লােকসভায় এদের সম্বন্ধে বহির্বিষয়ক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তিনি আবার লােকসভায় এঁদের মুক্তির দাবী করেন। দীপকের বাবা ও সাংবাদিকতা বিভাগের কিছু ছাত্র-ছাত্রী বহির্বিষয়ক মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এঁদের মুক্তির দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এঁদের মুক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকার টেলিভিশনে তাদেরকে শেষ দেখা গিয়েছিল ঢাকার জেলের একটি সেলে। [ আমরা আশা করি পাক হানাদারেরা এই দুই তরুণ সাংবাদিককে হত্যা করেনি। তবে কী তাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে? আশা করি, ভারত সরকার অবিলম্বে এই ব্যাপারে তদন্ত করে এই দুই তরুণ সাংবাদিকের মুক্তি ব্যবস্থা করবেন। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ ও তরুণ সমাজের কাছেও এ ব্যাপারে তৎপর হতে অনুরােধ জানাচ্ছি। আমরা উদ্বিগ্ন চিত্তে এঁদের আগমন অপেক্ষায় দিন গুনছি। -ডঃ অমের সান্যাল, সত্যরঞ্জন বিশ্বাস কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগ, প্রাক্তন ছাত্র সমিতি, কল;-১২।
২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা