পাকিস্তানী রাজনীতির লজিক
— পান্নালাল দাশগুপ্ত
বাংলাদেশে যে নির্বিচার নরহত্যা চলেছে তার বীভৎস নির্মমতা কল্পনাতীত, বর্ণনাতীত। বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য মিঃ ব্রুস ডগলাসম্যান আক্ষেপ করে বলেছেন যে, ভিয়েতনামের মাইলাই গ্রামে আমেরিকার সৈন্যরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড করেছিল, তাতে বিশ্বের বিবেক হতচকিত; কিন্তু পূর্ববঙ্গে যে কতশত মাইলাই সৃষ্টি হয়েছে তার কোনাে ইয়ত্তা নেই। পৃথিবীর জনমত সেই অনুপাতে কিছুমাত্র বিচলিত বা উদ্বিগ্ন হয়নি, অনুভূতিকে সােচ্চার, সক্রিয় ও ফলশ্রুতিপূর্ণ করে তােলার এই জড়তা বা অক্ষমতায় নিহিত রয়েছে চরম অমঙ্গল- সভ্যতার সংকট। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে দিনের পর দিন যত সংবাদ দিয়েছে তা হয়তাে সবসময় প্রশ্নাতীত নয় কেননা দেশ বিদেশের রিপাের্টারদের সঠিক সংবাদ সংগ্রহে কোন স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের নিরস্ত্র আবালবৃদ্ধবনিতার উপর যে ধরনের পশ্বাচার বা এক অর্থে ক্যানিবলিজম চলছে তার বর্ণনায় কোনাে অতিরঞ্জন তাে হয়ইনি বরং তার নারকীয়তা ভাষায় প্রকাশ করার সাধ্য অতিবড় রিপাের্টারেরও নেই । দুই তিন লক্ষ নরনারী কিভাবে কী অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছে, কীভাবে আত্মমর্যাদাকে অপমানিত, বিনষ্ট করা হয়েছে, কীভাবে পাশবিক রিরংসায় নারীধর্ষণ করা হয়েছে, কীভাবে আদিমতম জিঘাংসায় শিশুহত্যা করা হয়েছে, কীভাবে অট্টালিকা থেকে পর্ণকুটীর ভস্মসাৎ করা হয়েছে, আর কীভাবে লক্ষ লক্ষ নরনারীকে এক বস্ত্রে বা বিবস্ত্রে এপারে আসতে হয়েছে, কত পরিবার যে পরস্পর হারিয়ে গিয়ে হয়তাে চিরকালের মতই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে আর কত কোটি লােকের ঘরসংসার, অর্থনৈতিক জীবন আজ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত- তা অঙ্ক দিয়ে হয়তাে কষে নেওয়া যায় কিন্তু বিকারের প্রলাপের মত ইতস্তত বিক্ষিপ্ত এই অজস্র মানুষের বিভীষিকাতাড়িত দেশত্যাগের পেছনে যে মর্মান্তিক বেদনা, ত্রাস, নিদারুণ শােক তা কোনাে ফিগার দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। বােধহয় পৃথিবীতে এমন কোনাে কবি বা চিত্রকর ছিলেন না বা হতে পারেন না যিনি এই দৃশ্যের নিকটতম ছবিও ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
তাহলে প্রশ্ন এই যে, পশ্চিম পাকিস্তানীরা কী সত্যিই হস্তপদবিশিষ্ট হলেও মানুষ বলে কোনাে জীব নয়? পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠি কিসের তাড়নায় একটা নিরস্ত্র জনতার উপর এই চরম সশস্ত্র অভিযান চালালাে? কেনই বা এই সশস্ত্র অভিযানের মধ্যে এমন পাশবিকতা প্রয়ােগ করা হলাে যা নাদির শা বা চেঙ্গিস খার আক্রমণকেও হার মানায়, যার ঐতিহাসিক কোনাে তুলনা নেই। এর একটা ব্যাখ্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিত। | প্রথমত পাকিস্তানী ভাবাদর্শে বর্ধিত এবং সজ্জিত একটা সাম্রাজ্যবাদী চক্রের পক্ষে পূর্ব বাংলাকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া সম্ভব ছিল না। পূর্ব পাকিস্তান যদি একটা আলাদা স্বতন্ত্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে পরিণত হয় তবে পাকিস্তান ইমেজটিই একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। বিশেষত যে আদর্শ থেকে পূর্ব বাংলার এই নবজাগরণের উপম এবং বিকাশ তার চ্যালেঞ্জ কেবল মাত্র ভৌগােলিক নয়। সেই চ্যালেঞ্জ আরাে গভীর, আরাে দৃঢ়প্রােত। এই নবজাগরণ পাকিস্তানী মতাদর্শের গভীরে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। দ্বিজাতিতত্ত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, ভারতবিদ্বেষ, মােল্লাতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ, স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসীবাদ, এই সব কটি অমঙ্গলের বিরুদ্ধে, ক্যালিবানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নৈতিক আদর্শ হলাে মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক ইত্যাদি। কাজেই বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠীর পক্ষে irreconcilable তাছাড়া অর্থনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সমৃদ্ধি সম্পূর্ণভাবে পূর্ব পাকিস্তান শােষণের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানের দাবী সম্পর্কে কোনাে কনসেশন দেওয়া পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্রের পক্ষে সম্ভব ছিল ন। এই দুটি কারণের মধ্যেই বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সমর নায়কদের এই করাল দংষ্ট্রাবিস্তারে মৌলিক যুক্তি পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের অসহযােগ আন্দোলন বা গণপ্রতিরােধ যে আকারই গ্রহণ করুক না কেন তাকে কখনােই যুদ্ধ বলা চলে না। মুক্তিযুদ্ধের জন্য তারা কোনাে প্রস্তুতিও করেননি। মুক্তিযুদ্ধটা বরং তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ই. পি, আর, ই, বি, আর, আনসার আর পুলিশের হাতে যৎসামান্য অস্ত্রশস্ত্র যা ছিল তার সাহায্যে মুজিবুর রহমান বা আওয়ামী লীগ একটা মুক্তিযুদ্ধ করবেন তাদের কার্যক্রমের মধ্যে ধরনের কোনাে পরিকল্পনা কেউ আবিষ্কার করতে পারবে না। একদিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মারফৎ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা, অন্যদিকে সেই অধিকার দেবাে বলেও যদি না দেওয়া হয় তাহলে আইন অমান্য ও অসহযােগ আন্দোলন করা হবে, মােটামুটি এটাই ছিল তাদের প্রস্তুতি। পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠী, পূর্ব পাকিস্তানের বেঙ্গল রেজিমেনট, ই, পি, আর, আনসারদের উপর ভরসা করেনি বলেই এই সমস্ত পুলিশ ও জনতার উপর স্বতঃপ্রণােদিত নির্মম অক্রমণ শুরু করে দেয়। বাধ্য হয়েই এই ই, পি, আর, ই, বি, আর এবং আনসারেরা স্রেফ আত্মরক্ষার খাতিরেই রুখে দাঁড়ালাে। অপরপক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠী ভারতের সঙ্গে লড়াই এর জন্য যে অতি-আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলাে বালাদেশে হত্যাকাণ্ডে তার একটার নিক্ষেপণও তারা বাদ রাখেনি। স্যাবার জেট, আধুনিক বম্বার, রকেট চালিত বিস্ফোরক যন্ত্র, ভারী মেশিনগান, ভারী গােলা বর্ষণকারী কামান, প্যারসুট বাহিনী, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, অ্যামফিরিয়াস ট্যাঙ্ক, নাপাম বােমা, ইত্যাদি সমস্ত মারণাস্ত্র এই নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে প্রয়ােগ করতে কিছু মাত্র বিচালিত হয়নি, বিন্দুমাত্র দ্বিতীয় চিন্তা করেনি। এ এক আশ্চর্য ব্যাপার বা মানবেতিহাসে তুলনারহিত। একে কখনই যুদ্ধ বলা। যায় না। ব্যাপক গণহত্যা-অদ্রুিত নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে সার্বিক ত্রাস সঞ্চার, যাতে ঝটিতি এই operation mass murder সমাধা হয়, যাতে পৃথিবীর কেউ কিছু বুঝতে না বুঝতেই তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ। হয়ে যায়, এটাই ছিল এই চক্ষুহীন পশুশক্তির উদ্দেশ্য।
তৃতীয়ত, বিশ্লেষণ করতে হবে যে, পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিকগােষ্ঠী অতি আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত তার। সৈন্যবাহিনীকে এমন চরমতম নির্মম হবার আদেশ দিল কেন? যুদ্ধেরও একটা ন্যায়নীতি আছে। মহাভারতের যুদ্ধে যে সব ন্যায়নীতির কথা বলা হয় তা আমরা জানিই না, কিন্তু আধুনিক যুদ্ধেও কয়েকটি আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতির স্বীকৃতি রয়েছে। যেমন আত্মসমর্পণকারী কোন সৈন্য বা প্রতিপক্ষকে হত্যা করা যায় না, বন্দীকে খাদ্য দিতে হয়, আহত সৈন্যকে শুশ্রুষা করতে হয় ইত্যাদি। এসব ন্যায়নীতি যারা লঙ্ঘন করে তাদের war criminal হিসাবে বিচার করা ও শাস্তি দেবার নিদর্শনও অনেক আছে। নুরেনবার্গে হিটলারপন্থীদের বিচার করা হয়েছিল। আইখম্যানও শেষপর্যন্ত প্রাণদণ্ড এড়াতে পারেনি। এইসব বিচার ও প্রাণদণ্ডের ভিত্তি এই যে, এই যুদ্ধাপরাধীরা যুদ্ধকালীন ব্যবহারের স্বীকৃত সীমালঙ্ঘন করেছিলেন। বাংলাদেশে নিরস্ত্র জনসাধারণের যে ধরনের নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানাে হয়েছে- নিরপরাধ নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রােগী, পঙ্গু, অন্ধ, উন্মাদেরাও রেহাই পায়নি বা পাচ্ছে না, আত্মসমর্পণকারীরও রক্ষা নেই সেখানে এদের কী ধরনের craminal বলা যায়? প্রথমতঃ নিরস্ত্র স্বদেশীয় জনতার উপর অত্যাচার দ্বিতীয়তঃ বীভৎসতা ও নৃশংসতার মাত্রা ছাড়ানােতে এই বর্ণনাতীত অপরাধের কলঙ্ক শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন এই যে বালুচ, পাঠান পাঞ্জাবী সৈন্যরা এই ধরনের বিভৎস কাণ্ড করতে বাধ্য হলাে কেন? পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠি কোন কিছু বুঝতে দেবার আগেই তাদের এমন একটা নিষ্ঠুরতার অগ্নিকুণ্ডে, এমন একটা পরিস্থিতিতে a point of no return-এর মধ্যে ঠেলে দিল যেখান থেকে তাদের আর পেছােবার পথ নেই। একদা হিটলার তার নাৎসী সৈন্যবাহিনী ও বিশেষ সশস্ত্র পুলিশকে দিয়ে এমন সব নিষ্ঠুরতম কাজ করিয়ে তাদের হাত চিরতরে চূড়ান্তভাবে রক্তকলঙ্কিত করে দিয়েছিল যে, ফ্যাসিস্ট সৈন্যদলের পক্ষে সেই অন্ধ বিবেকহীন বর্বরতার পথেই এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আরাে রক্তপঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর পিছিয়ে আসার পথ ছিল না। elemental animality বা আদিমতম পশুপ্রকৃতির এই মরণাল্লাসের মৌলিক কারণ ছিল নিজের অস্তিত্ব বাঁচানাের তীব্রতম আতঙ্ক – উগ্রতম জঘন্যতম বিকৃতি ছাড়া যে জান্তব প্রকৃতির আত্মপ্রকাশের আর কোনাে রাস্তা বা outlet ছিল না। জারমানি যদি যুদ্ধে হেরে যায় তবে সৈন্য বাহিনীরও আর বাঁচার রাস্তা থাকবে না, কারণ তাদের দিয়ে এমন সব কাজ করানাে হয়েছে যা কোনকালে কেউ ক্ষমা করবে না। ইয়াহিয়া খানও ফ্যাসীবাদের এই নীর বৃত্তের মধ্যে কলঙ্কের পাঁকের মধ্যে তার সৈন্যদের ঠেলে দিয়েছে। এদের হাতে আধুনিক সমরােপকরণ দিয়ে এদের দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠী এমন সব জঘন্য হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন, শিশুহত্যা করিয়েছে এবং এরা এমন বর্বরাচার করেছে যাতে প্রতিপক্ষ বাঙালীর কাছ থেকে কোনাে প্রকার ক্ষমা এরা আশা করতে পারে না। হয় শেষ করাে, নয় শেষ হয়ে যাও, এইরকম একটা ক্ষমাহীন আবদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠী একদিকে তার সৈন্যবাহিনী এবং অপরদিকে বাঙালী জনতা-এই উভয়পক্ষকেই এক মারণযজ্ঞের আবর্তনে এনে ফেলেছে। হাত তুলে আত্মসমর্পণ করলেও রেহাই নেই, আহত সৈন্য এক গ্লাস জলও পাবে না, মৃতদেহেরও রক্ষা নেই, তাকেও অপমানিত বিকৃত করে জিঘাংসা চরিতার্থ করতে এক উন্মত্ত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা- এটাই এই পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠি ও তার সেনাদলের রণকৌশলের মৌলিক আদর্শ- ফ্যাসীবাদের একটা প্রকাশ। এই জতিগত বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতার উন্মত্ততার কারণ জীব প্রকৃতির অন্তর্দেশের জান্তব হিংস্রত (animal ferocity), আদিম প্রবৃত্তি (elemental possion)। এই অবদমিত জাস্তবতাকে শৃঙ্খলমুক্ত (let loose) করে দেওয়াই ফ্যাসীবাদের কৌশল। ইয়াহিয়া খা তাই করেছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নির্লজ্জ, বেপােরােয়া হত্যাকাণ্ড যে এই ঐতিহাসিক আবর্তিত মুহূর্তের অংশীদার অজস্র নিরস্ত্র বাঙালীরই সর্বনাশ করেছে তা নয়, তা পশ্চিম পাকিস্তানেরই সমূহ সর্বনাশ ডেকে আনছে। বাঙালীজাতির পক্ষে যে এটা একটা মহতী বিশিষ্ট নয় ইতিহাসই তার প্রমাণ দেবে। কিন্তু এই ছিন্নমস্তা জিঘাংসায় পশ্চিম পাকিস্তানই নিজের বিনাশ তরান্বিত করছে। কেননা এর দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তানী জনতার মধ্যেও যে আদিম জান্তবতাকে জাগিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে, মনুষ্যত্বকে, Rationality কে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে তাই একদিন পশ্চিম পাকিস্তানেরই সর্বনাশ করবে। আমরা জানি যে, হিটলারের জার্মান ফ্যাসীবাদ মুসােলিনীর ইটালিয়ান ফ্যাসীবাদ এবং জাপানী জঙ্গীবাদও শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেনি, বৃটিশ ও ফরাসী। সাম্রাজ্যবাদও কীভাবে পর্যদুস্ত হয়েছে আমরা তা দেখেছি। সাম্প্রতিক কালে পৃথিবীর বৃহত্তম সামাজ্যবাদী গােষ্ঠী আমেরিকাও কীভাবে ভিয়েতনামে পর্যদস্ত হচ্ছে আমরা তাও দেখছি। এদের দুর্বল অনুকরণ Poor caricature করছে ইয়াহিয়া খা। অবশ্য আমরা জানি যে, ইয়াহিয়া শুধু নিজের জালেই লড়ছে না, নিজের জোর তার কিছুই নেই, প্রতিটি অস্ত্র বাইরে থেকে ধার করে সে যুদ্ধ চালাচ্ছে এবং এই কারণেই সে চারিদিক থেকে এই উত্তমর্ণদের একটা নীরব সমর্থন পেয়ে চলেছে। কিন্তু এও জানি যে, এই আত্মভূক বর্বরতা শেষ হতে বাধ্য। এই বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার Phenomena কী কারণে হঠাৎ এই পাক-ভারত উপমহাদেশে উপস্থিত হয়েছে তার কারণই এই প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হলাে। কিন্তু এই বহুকাল সঞ্চিত পাপ ও উত্তাপের ঝটিকা তার ইতিহাসনির্দিষ্ট পথেই পরিসমাপ্ত হবে, পাক-ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস আজ তুলনারহিত ফলশ্রুতির সম্মুখীন।
১৭ মে, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা