সংগ্রামের দ্বিতীয় পর্যায় বাংলাদেশ সরকারের সামনে কী কাজ আমাদেরই বা করণীয় কী
— পান্নালাল দাশগুপ্ত
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে পর্যুদস্ত করার জন্য পাক-সামরিক বাহিনী এখন এক মরণপণ আক্রমণে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহৎ গ্রামাঞ্চল, জেলাশহর, মহকুমা ও অন্যান্য বন্দরগুলিতে হয় চুরমার নয়তাে তাদের কুক্ষিগত অঞ্চলে পরিণত করার জন্য পাকবাহিনী ছড়াতে শুরু করেছে। বর্ষার পূর্বেই তারা একটা স্থায়ী শক্তি হিসেবে বেশ কিছু অঞ্চলে গেড়ে বসতে চায়, পুরাে বর্ষা শুরু হলে তাদের পক্ষে আর এগােনাে সম্ভব হবে না। সংগঠিত মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র শক্তি আজ এত নয় যে, সর্বত্র শত্রুপক্ষের এই মরীয়া আক্রমণকে তারা রুখতে পারবে। বাংলাদেশের সর্বত্র যে শক্তি আছে, সে হলাে তার জনতার প্রতিরােধ শক্তি। জনগণের শক্তি জনযুদ্ধের আকারেই বিকশিত হতে পারে। জনসাধারণ হাজার হাজার গ্রামে প্রান্তরে নদীতে ছড়িয়ে আছে। বাংলাদেশকে সশস্ত্র করা মানে এই জনসাধারণকে সশস্ত্র করা। সশস্ত্র করা মানে তারা যেভাবে লড়তে পারেন, সেই কৌশল আয়ত্ত করতে সাহায্য করা, এমন অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যেগুলি তারা ব্যবহার করতে পারবেন, সামান্য শিক্ষা দিলেই । শুধু অস্ত্রেরই কথা নয়, উপযুক্ত সংগঠন চাই। আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গণবাহিনী, সিভিল ডিফেনস ব্যবস্থা, খাদ্য-বস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে যথাসম্ভব সাপলাই ব্যবস্থা ও বিলিব্যবস্থা চালু রাখা, পঞ্চম বাহিনীকে জব্দ করে রাখা ইত্যাদি প্রয়ােজনীয় কাজ আছে। তাদের রাজনৈতিক জ্ঞানও সমৃদ্ধি করা; এ যুদ্ধ কেন, এ যুদ্ধ জয় করার জন্য সর্বাত্মক প্রতিরােধ শক্তি কিভাবে গড়ে তুলতে হবে সে সম্বন্ধে রাজনীতি সচেতন কর্মীদের অনবরত জনগণের মধ্যে প্রচার ও সংগঠনের কাজ করা- এসব কাজই এখন প্রধান। কিন্তু এভাবে সর্বাত্মক জনশক্তিকে সংগঠিত করে তুলতে-সারা বাংলাদেশে সময়ের প্রয়ােজন এবং সেখানে যতটা জনশক্তি সংগঠিত হয়ে উঠছে তাকে রক্ষা করার জন্য একটা ব্যবস্থা থাকা দরকার। মুক্তিবাহিনীর হাতে যতটা সামরিক শক্তি আছে তার কাজই হলাে এই উঠতি জনশক্তিকে সুদৃঢ়ভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা। আজ যতটা প্রতিরােধ এই মুক্তিবাহিনী মরণপণ করে করছেন, পাকবাহিনীর অগ্রগমনকে রােখার জন্য, তাকে এই জনশক্তির পক্ষে গড়ে উঠবার জন্য রক্ষাছত্র বা কাভার’ বলেই ধরে দেওয়া উচিত- অর্থৎ জনশক্তি যাতে সর্বত্র আত্মপ্রত্যয়ে সুদৃঢ়ভাবে গড়ে উঠতে পারে তার জন্য একটা ঢাল হিসেবেই দেখা উচিত।
এরজন্য প্রথম দরকার হলাে- রাজনৈতিক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পূনর্গঠিত ও প্রতিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশে অবশেষে একটি স্বাধীন সরকার গঠিত হতে পেরেছে, তাতে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল সেটি পূর্ণ হলাে। এখন সকল যােদ্ধা ও জনসাধারণ এই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু থেকে আদেশ, উপদেশ ও নির্দেশ গ্রহণ করতে পারবেন। বিদেশের লােকেরাও কোথায় কেমন করে সাহায্য করবেন তা বুঝতে পারবেন, এই সরকারের সঙ্গে সংযােগ স্থাপন করতে পারবেন। এই সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া সকল রাষ্ট্রের পক্ষে একটা প্রধান কর্তব্য। এই সরকারকে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশের জনগণের আস্থাও চতুর্গুণ বেড়ে যাবে, নিজেদের সরকার ও নিজেদের ওপর বিশ্বাস দৃঢ় হবে। এই স্বাধীন সরকারের কাছে বিরাট দায়িত্ব উপস্থিত। ই-পি-আর বেঙ্গল রেজিমেনট, আনসার বহিনী, পুলিশ বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ইত্যাদি যেসব সশস্ত্র শক্তি আজ কতকটা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিরােধ-সংগ্রাম করে চলেছে তাদের সকলকে এক অখণ্ড সামরিক কমানডের মধ্যে সুসংগঠিত করা, মুক্তিফৌজের একটিই হাইকমাণ্ড সৃষ্টি করা একটি প্রধান দায়িত্ব। এই হাইকমানডের পক্ষে তখন সর্বাত্মক সংগ্রামের কৌশল ও নীতি (স্ট্যাটেজি অ্যানড ট্যাকটিকস) ঠিক করা সম্ভব হবে। সংগ্রাম কত দীর্ঘস্থায়ী হবে, সংগ্রামের কৌশল কী, কোন্টা আগে, কোন্টা পরে ইত্যাদি কার্যক্রম ঠিক করা ও তপ্রয়ােজনে সামরিক সামগ্রী কি ধরনের দরকার তা তখনই ঠিক করা সম্ভব এবং দেশ ও বিদেশ থেকে কি ধরনের অস্ত্রশস্ত্র চাই, তা নির্ধারিত করাও সহজ হবে।
পাক সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও আশু লক্ষ্য হলাে ভারতের সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের জনগণের ও মুক্তিফৌজের সবরকম সাপ্লাইয়ের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া। যে সমস্ত বড় রাস্তা উভয় দেশের মধ্যে আছে সেগুলি এবং সে অঞ্চলগুলি বন্ধ করে দেওয়া। মুক্তি ফৌজের কর্তব্য হবে সে পথগুলি মুক্ত রাখা। এবং তা মুক্ত রাখা নিশ্চয়ই সম্ভব হবে। প্রায় তিনহাজার মাইলব্যাপী যে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ঘেরা, তাকে সর্বত্র বন্ধ করে দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। পশ্চিমবাংলা, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার সীমান্ত বরাবর এই দীর্ঘ সীমান্তকে উভয় দেশের জনগণ বাংলাদেশের অফুরন্ত লাইফ-লাইন হিসেবে ব্যবহার করবে। ভিয়েতনামী সংগ্রামী জনগণের প্রয়ােজনীয় সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য যে হাে-চি-মিন ট্রেইল বা সাপ্লাইপথ আজ সারা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অপূর্ব শক্তিযােজনার দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, যে সাপ্লাই লাইন লক্ষ লক্ষ বােমাতেও নষ্ট করতে পারেনি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ দশ বছর ধরেও, সে দৃষ্টান্ত সামনে রেখে এ জাতীয় সাপ্লাই লাইন অসংখ্য হাে-চি-মিন লাইন- জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থা রাখা এখানে কত সহজ। দুই পক্ষেরই লক্ষ হলাে প্রতিপক্ষের সাপ্লাই নষ্ট করা। কিন্তু দুই হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গােষ্ঠির পক্ষে বাংলাদেশকে পুনর্দখল করার জন্য যে হাজার হাজার মাইল সাপ্লাই লাইন চালু রাখতে হবে তার তুলনায় বাংলাদেশের মুক্তি ফৌজের সাপ্লাই লাইন রক্ষা করা কোন তুলনীয় বিষয়ই নয়। বাংলাদেশের সাপ্লাই লাইন কিছুতেই বন্ধ হতে পারে না।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের সংগ্রামী জনতা ও মুক্তিযােদ্ধাদের নিজেদের মধ্যে সংযােগ ও সক্রিয় সহযােগিতা ব্যবস্থা চালু করা একটি প্রধান কাজ হবে নবগঠিত সরকারের পক্ষে ও সামরিক হাই কমান্ডের পক্ষে। সংগঠন মানেই প্রথমে সংযােগ স্থাপন করা এবং এই সংযােগ স্থাপিত হলেই সর্বত্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কায়েমি হবে। দেশের মধ্যে দিয়ে যে সংযােগ ব্যবস্থা করা সম্ভব তাছাড়াও সীমান্ত দিয়েও এ সংযােগ ব্যবস্থা চালু রাখার সুবিধা আছে। অতএব সীমান্ত বরাবর অঞ্চলে তাদের শক্তি ও অধিকার বজায় রাখার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। সীমান্ত বরাবর অঞ্চলগুলির সংগঠন, লােকবল, মনােবল ইত্যাদি বিশেষ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভ্যন্তরীণ শত্রু নেই একথা মনে করলে ভুল হবে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি প্রথমত মাথানীচু করেছিল। পাকবাহিনীর নির্মম আক্রমণের মুখে জনগণের মধ্যে যদি হতাশা ছড়িয়ে পড়ে, তবে এইসব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি পাকবাহিনীর সঙ্গে সহযােগীতা করতে প্রথমে গােপনে পরে প্রকাশ্যে অগ্রসর হতে পারে। অতএব জনসাধারণের সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি থাকা দরকার- এইসব সম্ভাব্য সমাজদ্রোহী-দেশদ্রোহী পঞ্চম বাহিনীর বীজগুলির উপর। তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করেও ভারতের সমর্থনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে পারে কাজেই পঞ্চম বাহিনী ও গৃহশত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থাপনা পাকাপাকিভাবে করা চাই । যদিও ভারতের সর্বত্রই এই মুক্তি সংগ্রামীদের জন্য সহানুভুতি বর্তমান, তথাপি কোন কোন ক্ষেত্রে সংশয় ও সন্দেহ এবং এমনকি কি বিরূপ মনােভাবও আছে। বাংলাদেশের মুক্তির প্রকৃত তাৎপর্য ও আদর্শ কী তা বােঝবার জন্য বাংলাদেশের কিছু কিছু প্রতিনিধিকে এদেশে ঘােরানাে দরকার।
ইয়ােরােপ আমেরিকা আফ্রো এশিয়া দেশ ও সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে তাদের দূত পাঠানাে দরকারসেখানকার জনমত অনুকূলে আনার জন্য ও তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেবার জন্য। যে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ওখানে সংগঠিত করা হয়েছে তার চিত্র সেখানে তুলে ধরা দরকার। বুলেটিন, প্রচারপত্র, পত্রিকা, বই ইত্যাদি বহুলভাবে হওয়া দরকার। বাংলাদেশের জনমনকে সুদৃঢ় ও উত্তরােত্তর শক্তিমান করতে হলে জনসাধারণকে বােঝাতে হবে যে, এ সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত জনসাধারণের সংগ্রামে পরিণত করতে হবে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিকল্পিত উপায়ে বিকেন্দ্রিক স্বয়ংসম্পূর্ণ গেরিলা বাহিনীতে বাংলাদেশের গ্রাম প্রান্তর নদী পর্বত, সর্বত্র ছাইয়ে দিতে হবে, শত্রুপক্ষকে পিছন থেকে অনবরত ব্যতিব্যস্ত ও পর্যদস্ত করতে হবে। এ সংগ্রাম পাকসামরিক বাহিনীকে প্রত্যক্ষ এক আঘাতে শেষ করে দেবার সংগ্রাম নয়। পাকবাহিনী অবশ্যই আধুনিক সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, তার শক্তিকে ছােট করে দেখা উচিত নয়। কিন্তু তার দুর্বলতা কোথায়, তাও বুঝিয়ে দিতে হবে। তার প্রধান দুর্বলতা বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার কোন সত্যিকার সংযােগ নেই। একটা বিদেশকে পদানত ও পরাস্ত করা ও অধিকার করার দুরুহ এবং দুঃসাধ্য এবং অসাধ্য এক কাজ হাতে নিয়েছে এই নয়া সাম্রাজ্যবাদী ইয়াহিয়ারা-যে কাজ করতে আজ ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ, ফরাসী সাম্রাজ্যবাদ, এমনকি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদও সাহস করতে পারেনা। ইয়াহিয়ার পরাজয় অনিবার্য। কিন্তু এক্ষুণি পাকবাহিনীকে তুড়ি দিতে পারছেনা বলে বাংলাদেশের জনসাধারণ অসহায় বােধ করবে কেন? বাংলাদেশের জনসাধারণ তাে এজাতীয় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতই ছিল না; তারা তাে নিজেরা কোন যুদ্ধ লাগায়নি, যুদ্ধটা একতরফাভাবে।
তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, এখনই মাত্র যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এখনও তাে সে যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে শুরু হয়নি। কিন্তু প্রস্তুতি হবার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কিছু না কিছু প্রতিরােধ বা আত্মরক্ষামূলক সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছে। তাদের প্রতিরােধশক্তিকে সংহত ও সংগঠিত করতে সময় লাগবে, সময় তাই তাদের জন্য একান্ত প্রয়ােজন, কাজেই তাড়াহুড়াে করে শত্রুর উপর সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অথবা পাল্টা আক্রমণ ব্যাপকভাবে। করার সময় হয়নি। মুক্তি যােদ্ধা ও সংগ্রামী জনসাধারণ হেরে গেছে- একথা বলার কোন অর্থ হয় না। বরং বলা যায় তিন সপ্তাহব্যাপী একতরফা আক্রমণ- জল স্থল ও আকাশ থেকে শত্রুর আক্রমণের পরেও যে তাদের মনােবল ঠিক আছে, এত লক্ষ লক্ষ প্রাণ দিয়েও, নতুন করে প্রাণ দেবার জন্য লােকের অভাব হয়নি, এটাই তাদের নৈতিক জয়। এই নৈতিক জয় ও মনােবলই তাহাদের বৃহত্তম লাভ- এই শক্তিকে এখন নানা ধরনের সংগঠনের মধ্যে প্রথিত করে তুলতে হবে, দুর্ভেদ্য অথচ সচল গণবাহিনীতে ছড়িয়ে দিতে হবে। বর্ষার নদ, নদী, খাল, বিল, পাহাড়, পর্বত, বন-জঙ্গল প্রভৃতির সাহায্য নিতে হবে তাতে সময়ও মিলবে, দুর্ভেদ্য আশ্রয়ও মিলবে, দেশ বিদেশের সাহায্য পাওয়াও সম্ভব হবে।
পরিশেষে ভারতীয় জনসাধারণ ও ভারত সরকারকে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাদের কমিটমেন্ট ও কথা দেওয়া হয়ে গেছে। অতএব এখন আর আমাদেরও ফেরার পথ নেই, যেমন নেই মুক্তিকামী বাংলাদেশেরও। আমরা নামে মাত্র সাহায্য করে ক্ষান্ত থাকতে পারিনা, এ কাজে আমরাও পরাভুত হতে পারিনা। চীনের হুমকি ও ব্ল্যাকমেলকে অত ভয় করলে চলবে না। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রকে এই ব্যাপারে উৎসাহী সহানুভূতিশীল করানাে আমাদের একটি প্রধান কাজ। যে আদর্শ ও কারণের। জন্য একদা স্পেন দেশের মুক্তির জন্য ইন্টরন্যাশনাল ব্রিগেড করে সংগ্রাম করা হয়েছিল, তারচেয়েও মহান। এক মুক্তি সংগ্রাম আজ বাংলাদেশে সকল মুক্তিকামী লােকেদের কাছে উপস্থিত। এর চেয়ে মহান কাজ আজকের পৃথিবীতে বড় নেই- এক ভিয়েতনাম ছাড়া। এখানেই সকল দেশের সকল লােকের প্রগতি, শান্তি, গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তির প্রতি আনুগত্যের অগ্নিপরীক্ষা উপস্থিত। এই অগ্নি পরীক্ষায় যদি তারা উত্তীর্ণ হতে না পারেন, বা এই সংগ্রামে হস্তক্ষেপ করতে অগ্রসর না হন, তবে ইতিহাস তাদের ধিক্কার দেবে। আমাদের বিবেক ও কর্তব্যজ্ঞানের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষা আজ উপস্থিত। কাজে কাজেই এমন সাহায্য আমরা দেবােনা, যাতে পেটও ভরে না অথচ জাতও যায়; এখানে আধাখামচা সাহায্যের কোন স্থান নেই, বরং তাতে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না, বাংলাদেশের এবং ভারতেরও। ব্যাপারটার গুরুত্ব, ব্যাপকতা, গভীরতা ও দায়িত্ব কম করে দেখা চলবে না।
১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা