You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.08 | বিভীষণ চাই, বিভীষণ! - পাক রাজনীতির ভাষ্যকার - সংগ্রামের নোটবুক

বিভীষণ চাই, বিভীষণ!

— পাক রাজনীতির ভাষ্যকার

বেসামাল ইয়াহিয়া হন্যে হয়ে পূর্ববাংলায় দালাল খুঁজে বেড়াচ্ছে; খুঁজে বেড়াচ্ছে কুইসলিংদের। প্রথমে নুরুল আমিন। এবারে হামিদুল হক চৌধুরী। একদিকে রেডিওতে এদের দিয়ে বলানাে হচ্ছে হিন্দুস্থানের ফেীজ ঢুকছে, পাকিস্তানীরা সাবধান, অপর দিকে ইয়াহিয়ার “ভুয়াে বেতার” সকাল-সন্ধ্যা ধরে বেঁধে আনা কয়েকজন মৌলানা/মৌলভি-কে দিয়ে তারস্বরে বলাচ্ছে ঃ যে মুসলমান বিধর্মীদের থেকে সাহায্য নেয় “দোজখ আর হারাম আর হারাম আছে তাহার তরে”। “ভূয়াে বেতার” বলছি এই কারণে যে আমার কাছে খবর আছে ঃ ঢাকা রেডিও স্টেশনের যে   ট্রানসমিটারগুলি মুক্তিযােদ্ধারা দখল করে নিয়েছিল সেগুলি এখনও সম্পূর্ণ অকেজো হয়েই পড়ে আছে, আর এ ইয়াহিয়ার ফৌজ ঢাকার শহরতলীতে মীরপুরের কাছে যে ট্রানসমিশন সেনটারটি ছিল সেখানে প্রায় একটি ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে, একটি লােকদেখানাে স্টুডিও বসিয়ে বস্তাপচা মান্ধাতার আমলের রেকর্ড আর স্টুডিও রেকর্ডের অধিকাংশরই আয়ু প্রায় নিঃশেষিত- ফলে একটু পরে পরেই অনুষ্ঠান প্রচারে ছেদ ঘটছে।

বাংলাদেশের রণাঙ্গন থেকে আরেকটি খবর পাচ্ছি ও সােভিয়েত রাষ্ট্রপতির বিবৃতিতে ইয়াহিয়া বিচলিত, বিচলিত আমেরিকার ঘােষণায় যে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল মুক্তিফৌজের হাতে। কারণ পৃথিবী বুঝতে পারছে যে ইয়াহিয়া বাহিনী শােচনীয় পরাজয়ের মুখে।  তাই পিন্ডি মতলব করছে যে তারা “দালাল বাঙালীদের একটি প্রতিনিধি দল শীগগীরই বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে পাঠাবে। উদ্দেশ্য এই বিভীষণরা’ বলবে ঃ দেখাে আমরা বাঙালী হয়েও বলছি পূর্ব বাংলায় ইয়াহিয়া কিছুই করেনি। যা হয়েছে তা দুষমন হিন্দুস্থান ও তাদেরই পােষ্য আওয়ামি লীগের কীর্তি।  এই তথাকথিত সাজানাে প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে ইয়াহিয়া যার কথা ভাবছে সে হােল হামিদুল হক চৌধুরী। এই ব্যক্তিটি একসময় ছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তাই পিন্ডির ধারণা এর একটা আন্তর্জাতিক সত্তা আছে।

এই প্রতিনিধি দলের জন্য আর কিছু কুইসলিং ইয়াহিয়া পূর্ববাংলায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। সে চাইছে এরা বিভিন্ন জেলার লােক হােক যাতে পিন্ডি বলতে পারে এরা সারা পুর্ব বঙ্গেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। যাদের কথা ইয়াহিয়া ভাবছে তাদের কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছি। যেমনঃ ওহিদউজ্জামান (ফরিদপুর), ফরিদ আহমেদ (চট্টগ্রাম), গােলাম আজম (ঢাকা), খাজা। খুখিীয়েরুদ্দিন (ঢাকা), মাহমমুদি আলি (সিলেট), ডাঃ মালিক (কুষ্টিয়া), সবুর খান (খুলনা)। এদের ইয়াহিয়া লােভ দেখাচ্ছে ঃ তােমাদের উজির বানাব। শােনা যাচ্ছে। এদের কেউ কেউ শীগগীরই প্রেসিডেনটের দরবারে পিন্ডিতে যাবে।। | এরা যেসব প্রকৃতির লােক তা বােঝাতে একটি উদাহরণ যথেষ্ট। বাংলাদেশে গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ফরিদপুরের কলংক ওহিদউজ্জামান তারই জেলার শেখ মুজিবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিল ঃ যদি মুজিব জেতে তবে আমি হাতে চুড়ি পরব। মুক্তিফৌজের এক নেতাকে প্রশ্ন করলাম ? আপনারা এই মীরজাফরদের কি সাজা দেবেন? উনি বললেনঃ এরা সব ইদুরের দল। বাংলাদেশের মানুষ এদের জন্য জাতাকল পেতেই রেখেছে। লােভে পড়ে যেই এগােবে অমনি পিষে মরবে।

৮ এপ্রিল, ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা