২২ আশ্বিন ১৩৭০ শনিবার ৯ অক্টোবর ১৯৭১
– দূর্গোৎসবের বিজয়া উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন
আহমেদ বলেন, “একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে জন্মভূমিতে পূজানুষ্ঠানের স্বাধীনতা হারিয়ে লক্ষ লক্ষ স্বদেশবাসী শরণার্থীর দিন যাপন করছেন। আমি তাঁদেরকে গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। শরণার্থী শিবিরে যারা দূর্গা পূজার অনুষ্ঠা করছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমি তাঁদেরকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি স্বদেশবাসীকে বলতে চাই যে, দেশ সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত করার দিনটি ঘনিয়ে এসেছে। আমি আশ্বাস দিতে চাই যে, ফ্যাসিবাদী হানাদারদের বিতারি করে আমরা যে ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ গড়ে তুলবো সেখানে সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত বিধান করা হবে।” (সাপ্তাহিক জয় বাংলা ৮/১০/৭১)
-তৃতীয় ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কমাণ্ডার মেজর শাফায়েত জামিল ৫ নং সেক্টরের অধঈন সেনা সাব সেক্টরে যোগদান করেন। সেক্টর কমাণ্ডার মেজর শওকত আলী মেজর সাফায়েত জামিলকে নির্দেশ দেন দ্রুত ছাতক আক্রমণ করার জন্য। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী হাই কমাণ্ড হিসেব করছিলেন যে ছাতকে একটা সফল অভিযান চালাতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। এখানে পাকবাহিনী একটা প্রচণ্ড রকমের ধাক্কা দিতে পারলে ফল হবে তিন ধরনের (এক) পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে সস্ত্রস্থ হবে (দুই) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি প্রকাশ পাবে (তিন) মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে।
-খুলনা কাকভাঙ্গা এলাকায় দুপুরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনী উপর আক্রমণ চালায় এবং ফিল্ডগান থেকে ৮০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
কুষ্টিয়ার মহেশকান্দীতে মুক্তিবাহিনী বিকেল ৬ টায় পাকবাহিনীর ওপর ৩২ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে। হতাহতের সংবাদ নেই।
মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত সেনা কমিশন প্রাপ্ত অফিসার বৃন্দের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠ তনয় শেখ কামাল এই অফিসারবৃন্দের একজন ছিলেন। অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্ত অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অফিসারদের প্রথম শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম এ জি ওসমানী, এম এন এ অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান ও প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদকে স্বাগত জানান। পাঞ্জাবী পাক হানাদার বাহিনী অধিকৃত মাতৃভুমির শৃঙ্খল মোচনের রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত তরুন মুক্তিবাহিনীকে উদ্দেশ্য ক্রে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্বর পাকবাহিনীকে বাংলাদেশের ঘাঁটিতে রেখে কোনরূপ আপোষের প্রশ্ন উঠতে পারে না। আমরা রক্তাক্ত সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি ও পূর্ন স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া আমাদের অস্ত্র বিশ্রাম নেবে না। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্ণেল ওসমানী তরুন অফিসারদের উদ্দেশ্যে বলেন, “স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে রণ-কৌশলগত যোগ্যতা ও কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনের মতো নিয়ম শৃঙ্খল মেনে চলতে হবে। এবং প্রত্যেকের সাহসিকতা জন্য আমাদের ধর্মীয় অনুসাশনের মতো নিয়ম মেনে চলতে হবে। এবং প্রত্যেকের সাহসিকতার পূর্ণ কাজ যেন অন্যকেও অনুপ্রানিত করে তোলে সেভাবে যুদ্ধ করে যেতে হবে। (সাপ্তাহিক হ=জয় বাংলা ২২/১০/৭১)
বোম্বাই এর লেখক বুদ্ধিজীবী ও মনীষীদের এক কনভেনশন বাংলাদেশের গায়ক আব্দুল জব্বার দেশাত্নকবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করে।
শিম্লায় অল ইণ্ডিয়া কংগ্রেসের সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় সংগত সংগ্রামে পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। ভারত বাংলাদেশের শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা।
পাকিস্তনের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর আরপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। গত ২৬ মার্চ এই নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিল।
জাতিসংঘে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য শাহ আজিজুর রহমান বলেন, ভারতে চলে যাওয়া শরণার্থীদের পরিমাণ ৯০ লক্ষ নয়, বিশ লাখের সামান্য কিছু বেশি।
–কাইয়ুমপন্থী মুসলিম লীগের প্রধান খান আব্দুল কাইয়ুম খান ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের আদর্শে অবিশ্বাসী শিক্ষকদের চাকরীচ্যুত, জুবদের বাধ্যতামূলক রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের ব্যবস্থা ও শ্রমিকদের পরিবর্তে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত রাজাকারদের কলকারখানায় নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী