(৪) সাম্প্রদায়িক সমাজ-অর্থনীতির পরিবর্তন
— হাসান মুরশিদ
স্বাধীনতা-উত্তরকালে পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিতে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত একটি পরিবর্তন আসে, ধর্মভিত্তিক একটি দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বীকরণ করেন একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এই চেতনা কেবল সাহিত্য-সঙ্গীত প্রভৃতি ক্ষেত্রে সীমিত ছিলাে না, যে বৃহত্তর সমাজের প্রতিফলন সংস্কৃতিতে লক্ষ্যযােগ্য, সেই সমাজ জীবনেই এই ঔদার্য অঙ্গীকৃত হয়। মুসলমানদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থসংরক্ষণের জন্যেই পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সুবিচারকে নিশ্চিত করার জন্যেই দেশের উভয়াংশের উদ্ভূত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নিয়েও এ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলাে। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ন্যায়বিচার থেকে দেশের জনগণকে বঞ্চিত করা হলে, রাষ্ট্রগঠনের মৌল শর্ত এবং প্রয়ােজন কি ব্যর্থ হয়না? সেক্ষেত্রে দেশের দূর্বল ভিত্তিতে স্বভাবতই ফাটল ধরতে পারে। তাই দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর ভর করে নির্মিত পাকিস্তানের কৃত্রিমতা অল্পকালের মধ্যেই পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে প্রকট হয়ে উঠলাে, কেননা তারা বঞ্চিত হলেন তাদের ন্যায্যপ্রাপ্তি থেকে । প্রতিশ্রুত সুখসাচ্ছন্দ্য হয়ে থাকলাে তাদের কাছে স্বপ্নের ধনের মতাে। | দেশ বিভাগের সময় পূর্ব-বাংলার লােক সংখ্যা ছিলাে পাকিস্তানের মােট জনসংখ্যার ৫৪%। তারপর ধীরে ধীরে এ অনুপাত আরাে বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশ পাকিস্তানে সুতরাং অধিকাংশ বিনিয়ােগ এবং উন্নয়ন কার্য হওয়া উচিত ছিলাে পূর্ব বাংলাতে । কিন্তু দুর্ভাগ্য কার্যত হয়েছে তার উল্টোটা। ষষ্ঠ দশকের শুরু থেকেই জাতীয় উৎপাদনে পূর্ব বাংলার অংশ গড়পড়তা প্রতি বছর ১% কমেছে এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের অংশ অনুরূপ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬৫ সাল নাগাদ শিল্প উৎপাদন ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব বাংলায় দ্বিগুণ উৎপাদন করেছে। উপরন্ত, ক্রমশ পূর্ব বাংলা থেকে সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাপক হারে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয়েছে। পূর্ব বাংলা থেকে পাট ও অন্যান্য কাঁচামাল বিদেশে রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে, তার পরিমাণ পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে ঢের বেশি।
এই বৈদেশিক মুদ্রা, অবিশ্বাস্যভাবে কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে, বেশির ভাগ ব্যয়িত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। কেন্দ্রের নাম করে প্রথমে করাচি এবং পরে রাওয়ালপিণ্ডি ও ইসলামাবাদে বিপুল উন্নয়ন কার্য করা হয়েছে। পরিকল্পনা বহির্ভূত অর্থ বিনিয়ােগ করে মঙ্গলা বাঁধের মতাে বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। উন্নয়ন কার্যে পূর্ব বাংলা এক-তৃতীয়াংশেরও শরিক নয় । অথচ জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ ভাগের বেশী পূর্ববাংলাতে বাস করে। আবার চাকুরীর ব্যাপারে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের শতকরা ৭৫টি চাকুরিতে নিযুক্ত হয়েছেন অবাঙালীরা। প্রতিরক্ষা খাতে যে ব্যয় হয়েছে তার সিংহভাগ যদিও বহন করলেন বাঙালীরা, শতকরা ৯০টি চাকুরি পেলেন পশ্চিম পাকিস্তান। নৌ, বিমান ও স্থল বাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তর অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানে আর পূর্ব বাংলা থাকলাে বস্তুত প্রতিরক্ষাবাহিনী। এতদব্যতীত, কেন্দ্রীয় সকল সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদর কার্যালয় পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ায়, বিপুল অর্থ সেখানেই ব্যয়িত হলাে। এই সব কারণে, পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ক্রমশ বিষম হয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে এ বৈষম্যের হার ছিলাে ১৮%, ১৯৬০ সালে ২৫%, ১৯৬৫ সালে ৩১% এবং ১৯৭০ সালে ৩৮%। পুঁজি বিনিয়ােগের ব্যাপারে দেখা যাচ্ছে, পূর্ব বাংলা অভ্যন্তরীণ বিনিয়ােগের মাত্র ৩৩% লাভ করেছে। এই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য মুসলমানদের প্রতি অর্থনৈতিক সুবিচারের উত্তম প্রমাণ নয়; বরং সকল বাস্তব দিক দিয়ে পূর্ব বাংলা রূপ নিলাে একটি উপনিবেশের। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠলাে সত্য, কিন্তু উৎপাদন কর্মে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সেই কৃষকশ্রমিকদের অবস্থা ক্রমশ হীন থেকে হীনতর হতে থাকে। ওদিকে গড়ে-উঠতে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণী। পশ্চিম পাকিস্তানী বিমান ও মধ্যবিত্তদের তুলনায় নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার বিপন্নতা ও নির্জীবতা সম্পর্কে সচেতন হতে থাকেন। ভূমিহীন কৃষকদের সংখ্যা এসময়ে এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে বলা যেতে পারে বর্তমানে লাঙলের মালিক আর ভূমির মালিক নন।
দেশের সকল কৃষক শ্রমিক এবং নিম্নমধ্যবিত্তরা এই অর্থনৈতিক শােষণের মুখে রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থহীন বলে মনে করেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবং ফলত দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের লােকেরা ক্রমশ এই অর্থহীন স্বাধীনতার প্রতি বিরূপ হয়েছেন। (এর চাইতে ইংরাজ আমলে ভালাে আছিলামওখানকার একটি জনপ্রিয় উক্তি।) দ্বিজাতিতত্ত্ব তাদের কোনাে সান্ত্বনা দেয়নি। তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন, গােরু-খাওয়ার স্বাধীনতা থাকলেই গােমাংস জোটে নাে। ১৯৫০ সালে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রে কাজ করে যে মজুর আটআনা উপার্জন করতেন, আজ তিনি পান এক টাকা-পাঁচসিকে। অথচ ১৯৫০ সালে মাঘ মাসে চালের দাম ছিলাে ১০ টাকা মণ, এখন মাঘ মাসে চালের দা ৩০/৩৫ টাকার নীচে নামে না। আবার, মুদ্রাস্ফীতির ফলে ১৯৫৮ সালের তুলনায় ১৯৬৮ সালে টাকার মূল্যমান ৪০% ভাগের চেয়ে বেশি কমে যায়। এই সামগ্রিক হতাশার মুখে ধর্মের মিষ্টি জলে চিড়ে ভেজেনা। সুতরাং পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষের ওপর আরােপিত সাম্প্রদায়িকতায় যৌক্তিকতা সম্পর্কে অল্পদিনের মধ্যেই সাধারণ মানুষরা প্রশ্ন করতে শুরু করেন এবং পাকিস্তানের ভিত্তির নীচেকার চোরাবালি ধীরে ধীরে সরে যেতে আরম্ভ করে। পাকিস্তানের রসাতলযাত্রা শুরু হলাে এইভাবে ।
অর্থনৈতিক এই শােচনীয়তা এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক মনােভাব-উত্তর মিলে সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মীয় মােহমুক্ত একটি বাস্তব দৃষ্টির সঞ্চার করে। ধর্মের নামমাত্র ঐক্যদৃষ্টি এই পরিবর্তনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। রক্ষণশীল মুসলিম লীগের সঙ্গে সহযােগিতা করা অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল যে ব্যক্তিদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়লাে, তারা প্রথমে ১৯৪৮ সালে ‘যুবলীগ’ এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামক দুটি দল গঠন করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ আবার ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বর্জন করে দলকে একটি অসাম্প্রদায়িক রূপ দান করেন। ১৯৫২ সালে আর একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। ‘গণতন্ত্রী দল গঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে ফজলুল হক তার পুরােনাে “কৃষকপ্রজা পার্টিকে পুনরায় কৃষক শ্রমিক পার্টি’ নামে পুনরুজ্জীবিত করেন। মাওলানা ভাসানী অতঃপর ১৯৫৭ সালে সমাজতান্ত্রিক কার্যসূচীর ভিত্তিতে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। অসাম্প্রদায়িকতা শুধু এদলগুলির নামের মধ্যেই লক্ষ্যযােগ্য নয়, কার্যকলাপেও এগুলি ক্রমশ ধর্মমুক্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে। মুক্তবুদ্ধির আলােকে জনগণ দেখতে পেলেন হিন্দু জমিদার, হিন্দু ডাক্তার, হিন্দু উকিল, হিন্দু শিক্ষক, হিন্দু মােড়ল, হিন্দু চাকুরে শােষণ করছেন না। শােষণ করছেন মুসলমানরাই, বিশেষত পশ্চিম পাকিস্তানী ও তাদের তল্পীবাহক। মুষ্টিমেয় বাঙালী মুসলমানরা অর্থাৎ শশাষকের যে কোন জাত নেই সেটাই পরিষ্কার হলাে।
অতঃপর হিন্দুদের পরিবর্তে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলাে পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্রতি। ইংরেজ ও খান সাহেবদের মধ্যে বস্তুত কোনাে পার্থক্য সাধারণ মানুষরা দেখতে পেলেন না, গায়ের রঙ ছাড়া। অধিকন্তু তারা লক্ষ্য করলেন অসাম্প্রদায়িক কোনাে বাঙালী গােষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতার দাবি করলেই, পাছে একচেটিয়া শােষণ ব্যহত হয় এই ভয়ে, পশ্চিম পাকিস্তানী প্রভুরা সে চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে তৎপর। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা এবং পরে কেন্দ্রে সােহরাওয়ারদি মন্ত্রিসভার বাতিলকরণ এই অপপ্রয়াসের নিশ্চিত প্রমাণ। | ১৯৫৮ সালে আইয়ুবশাহীর আরম্ভ থেকেই ধূর্ত ও ফন্দিবাজ আইয়ুবের দালালরা বুনিয়াদি গণতন্ত্র প্রভৃতির মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করেন। আইয়ুবের ডিকটেটরশিপের কালে পূর্ব বাংলার সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে এবং সুপরিকল্পিতভাবে পূর্ব বাংলার প্রতি শশাষণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলার জনগণের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে রাখার জন্যে এই কালে সরকারি প্রচার যন্ত্রগুলি- জাতীয় পুনর্গঠণ সংস্থা, পাকিস্তান কাউন্সিল, বাঙলা অ্যাকাডেমি, নজরুল অ্যাকাডেমি, ইসলামিক অ্যাকাডেমি, কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বাের্ড, রেডিও পাকিস্তান, টেলিভিশন সংস্থা প্রভৃতি সবচেয়ে সক্রিয় হয়ে
ওঠে। সংস্কৃতি ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা এবং ভারতীয় বিদ্বেষ ও ভীতি প্রচারের মাধ্যমেই বাঙালীদের মনােযােগ অন্যদিকে আকৃষ্ট করা হয়েছে। পাকিস্তানের ভণ্ড গণতান্ত্রিক সরকার স্বদেশের এগারাে কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অস্বীকার করে কাশ্মীরের ৫০ লক্ষ মজলুম নাগরিকের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের দাবি বারংবার উত্থাপন করেছেন। ১৯৫৬ সালের যুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলায় জাতীয় ঐক্য টেম্পাে বজায় রাখার উদ্দেশ্যে প্রতি রাতে নিষ্প্রদীপ মহড়া অনুষ্ঠিত হতাে আর কল্পিত ভারতীয় বিমান আক্রমণের ভয় দেখিয়ে সাইরেন বাজানাে হতাে। তবু যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই দেশের মানুষের কাছে, বিশেষত বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের কাছে এই যুদ্ধের ফাকি ধরা পড়ে এবং কাশ্মীরের প্রতি অগণতান্ত্রিক পাকিস্তান সরকারের মিথ্যা সহানুভূতির গূঢ় রহস্য আর গােপন থাকেনা। পশ্চিম পাকিস্তানী চতুর শাসক গােষ্ঠী স্পষ্টই বুঝেছিলেন যে, দেশের ঐক্য ও সংহতির নামে তাঁদের অব্যাহত শােষণ বজায় রাখা সম্ভব তখনই, যখন ধর্মের নামে জিগির তুলে প্রতারণায় ক্লিন্ন রূপটিকে জনগণের কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে পারবেন। এই সাম্প্রদায়িকতার পথ ধরেই ভারত বিদ্বেষ আর কাশ্মীর-প্রীতি জন্ম নেয়। এবং এই সাম্প্রদায়িকতার পথ ধরেই কাশ্মীর-সমস্যাকে জটিলতর করে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলার মধ্যে কৃত্রিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত সংঘর্ষ এবং তারপর পূর্ববাংলায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় এ ফলস্বরপ ১৯৬৫ সালের পর পূর্ব ও পশ্চিমের একাত্মতা বােধ করা দূরে থাকুক, পার্থক্য দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পূর্ব বাংলার সমাজ সচেতন মােহমুক্ত মানুষেরা দেখলেন, পূর্ব পূর্ব, পশ্চিম পশ্চিম, এদের মিলন কেবল অসম্ভব নয়, অবাঞ্ছিত ও অহিতকর পূর্ব বাংলার পক্ষে। তারা দেখলেন, আলজিরিয়াকে ফ্রান্সের এবং গােয়াকে পুর্তাগলের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা যেমন উদ্ভট, অযৌক্তিক এবং অন্যায়, পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা তেমিন উদ্ভট, অযৌক্তিক ও অন্যায়। ধর্মীয় ঐক্য রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র শর্ত হলে আফগানিস্তান থেকে মরােক্কো পর্যন্ত একটি রাষ্ট্র হতে পারতাে অথবা গােটা ইয়ুরােপ থাকতে পরতে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রের অধীনে। কিন্তু ইতিহাস সেরূপ অসম্ভবকে স্বীকার করেনা। আলজেরিয়া ও গােয়াতে ফরাসি ও পর্তুগীজ কম ছিলেন না এবং উভয় দেশে যথাক্রমে ফরাসি ও পর্তুগীজ ভাষাও দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড়িয়েছিলাে, তথাপি এই কিম্ভূত সম্বন্ধটি চিরস্থায়ী হতে পারেনি। পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের যােগসূত্র আরাে দুর্বল। সুতরাং তাদের বিচ্ছেদ অনিবার্য। এই অনিবার্যতার পথেই পূর্ব বাংলার সমাজ-অর্থনৈতিক আন্দোলন প্রথম থেকেই পরিচালিত হয়েছে। ইতিহাসের গতি কার সাধ্য রােধ করে।
২৯ এপ্রিল, ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭ , আনন্দবাজার পত্রিকা