You dont have javascript enabled! Please enable it! মওদুদীর ধ্যানধারণা | জামাতের আসল চেহারা মওলানা আবদুল আউয়াল - সংগ্রামের নোটবুক

মওদুদীর ধ্যানধারণা

মওদুদী সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। কোথায় এবং কতটুকু লেখাপড়া করেছেন, তিনি নিজেও এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু লিখেননি। এ সম্পর্কে যতুটুকু জানা যায়, মওদুদী সাহেবের পিতা হায়দরাবাদে নিজামের একজন কর্মচারী ছিলেন। সেখানে ১৯০৩ সালে মওদুদীর জন্ম হয়। অবসর গ্রহণের পর পিতা। সপরিবারে দিল্লী চলে আসেন। মওদুদী সাহেব প্রথমে ঘরে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে তাকে দিল্লীতে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ছােটবেলায় পিতা মারা যান। মওদুদী সাহেবের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কেউ বলেছেন তিনি ফাজেল পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। আবার কারাে কারাে মতে তিনি মাধ্যমিক স্তরও অতিক্রম করেননি। জীবিকার অন্বেষণে তাকে বেরিয়ে পড়তে হয়। সম্ভবত ১৯১৮ সাল থেকে মওদুদী সাহেবকে রুজি-রােজগার শুরু করতে হয়। তিনি মদীনা’, ‘তাজ’, ‘মুসলিম’, ‘আলজমিয়ত’ প্রভৃতি উর্দু সাময়িকী ও সংবাদপত্রে কাজ করেন। • ১৯২৯ সালে মওদুদী সাহেবকে ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তিনি দিল্লী থেকে হায়দরাবাদ চলে যান। সেখানে তিনি আট বছর অবস্থান করেন। উর্দুভাষী বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ রইস আহমদ জাফরী তাঁর দিদা ও শানীদ’ গ্রন্থে মওদুদী সাহেব সম্পর্কে লিখেছেন, “১৯৩৭ সালের এক হিমেল সন্ধ্যায় বােম্বাইয়ে খেলাফত হাউসের অতিথিশালায় একজন নবাগতকে দেখতে পেলাম। দাড়ি-গোঁফ কামানাে এবং ইংলিশ। কাটিংয়ের চুল। সুদর্শন ও ডাগর ডাগর চোখওয়ালা। কিছুটা একাকী ও চুপচাপ বসে। ছিলেন।

পরিচয় জিজ্ঞেস করতে বললেন, আমার নাম আবুল আলা মওদুদী।” সে যাই হােক, মওদুদী সাহেবের এক ভাই হায়দরাবাদে থাকতেন। তিনি নিজামের অনুবাদ বিভাগে চাকরি করতেন। এ সময় মওদুদী সাহেব কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা। করেন। সম্ভবত ভাইয়ের সুপারিশে হায়দরাবাদের ‘দারুতরজমা’ থেকে দর্শনের একটি গ্রন্থ তাঁকে তরজমা করার জন্য দেয়া হয়। অবশ্য ভাষান্তরিত গ্রন্থটি প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু পারিশ্রমিক হিসাবে তিনি পাঁচ হাজার টাকা লাভ করেন। এ অর্থ দ্বারা ১৯৩৩ সালে উর্দু মাসিক তরজমানুল কোরআন’ বের করেন।  তরজমানুল কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বিশেষ মত প্রচার’ আরম্ভ করেন। এর আগে  তিনি সালজুক বংশ ও হায়দ্রাবাদের ইতিহাস রচনা করেন। হায়দরাবাদের নিজামুলমুলক আসিফ জাহর জীবন চরিতও লিখেছেন। বইগুলাে আজকাল দুষ্প্রাপ্য। ফলে এসব গ্রন্থে তিনি কিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভিন্ন ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন তা বলা মুশকিল। | একথা সত্য যে, এসব গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি হায়দরাবাদের শাসকগােষ্ঠীর অনুগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৩৩ সাল, মানে তরজমানুল কোরআন প্রকাশের পর থেকে হায়দরাবাদ জীবনে মওলানার মতাদর্শ কি ছিলাে তার কিছুটা সন্ধান পাওয়া যায়। এসময় থেকে তিনি হায়দরাবাদের নিজাম শাসনপদ্ধতি তথা রাজতন্ত্রের বৈধতা প্রমাণেই তরজমানুল কোরআনের অধিকাংশ পৃষ্ঠা ব্যয় করেছেন। তাও আবার ইসলামের ‘বিশেষ ব্যাখ্যার’ মাধ্যমে। কারণ এছাড়া তখন নিজামদের অনুগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণের বিকল্প কোনাে পথ ছিলাে না।

১৯২৯ সাল ও তার পরবর্তী কয়েক বছর সমগ্র বৃটিশ ভারতে একটা চরম উত্তেজনাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছিলাে। এসময় একবার ইংরেজ ও কংগ্রেসের মধ্যকার সম্পর্ক জটিল রূপ পরিগ্রহ করে। পরে তা প্রশমিত হয়। গান্ধীজিকে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গােলটেবিল কনফারেন্সে যােগদানের আমন্ত্রণ জানানাে হয়। তিনি লন্ডন থেকে ভারতে ফেরার পর। আবার ইংরেজ-কংগ্রেস সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি দেখা দেয়। এসময় কংগ্রেস সমর্থক মুসলমান ছাড়াও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দু ও আহরার পার্টি কংগ্রেস জোটভুক্ত হয়। সীমান্তের গফফার খান গ্রুপও এসময় কংগ্রেসে শামিল হন। এ ছিলাে সেসময় বৃটিশ ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ১৯৩৬ সালে ভারত শাসন আইন জারির পর কংগ্রেসের শক্তি পূর্বাপেক্ষা বেড়ে যায়। কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলাের বিরুদ্ধে প্রচারণায় মেতে ওঠে। সর্বপ্রথম তারা রাজ্যের শাসনপদ্ধতির উপর হামলা চালায়। নিজাম শাসিত হায়দরাবাদও তখন এই হামলা থেকে নিরাপদ ছিলাে না। এর আগে ১৯২৪ সালের পর থেকে সেখানে শুদ্ধি সংগঠন ও আর্য সমাজীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রচারণা আরম্ভ হয়। তদুপরি সেখানকার ইউরােপ-ফেরত শিক্ষিত যুবক শ্রেণী সমাজতন্ত্রের প্রচারণা আরম্ভ করে। সবচাইতে হট্টগােল সৃষ্টি করে সেখানকার দেশীয় আন্দোলন।

কোন কোন মুসলমান নেতা বক্তৃতামঞ্চে  দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘােষণা করতেন, “আমাদের নিকট যদি একজন মদিনার মুসলমান ও একজন দেশীয় বাসিন্দা এসে রুটি ভিক্ষা চায়, তাহলে আমরা দেশীয়কেই প্রাধান্য দেব।” * এসব আন্দোলনে হায়দরাবাদের শাসনযন্ত্র ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। উত্তর ভারত, বিশেষ করে যুক্ত প্রদেশ ও দিল্লী থেকে আসা মুসলমান সরকারী কর্মচারী ও রাজ্যের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত মুসলমান আমলারা ঘাবড়ে যায়। কারণ দেশীয় আন্দোলন কামিয়াব হওয়ার অর্থ। নিজামের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া। ন্তুি নিজাম ও তাঁর আরাম-আয়েশ প্লাবিত পরিবার এসব সমস্যা সমাধানের প্রতি মােটেও কর্ণপাত করেননি। সত্যি কথা বলতে কি, মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থার যাঁতাকলে সেখানকার মুসলমানরাও নিষ্পেষিত হচ্ছিলাে। সাধারণ মানুষ বলতে সবারই জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিলাে। এসময় মওলানা মওদুদী মাসিক তরজমানুল কোরআন’, বের করেন। মনে হয় সাময়িকীটি বের করার পেছনে কর্তা গােষ্ঠীর হাত ছিলাে।

এরূপ ধারণা করার যথেষ্ট কারণ আছে।সে সময়  হায়দরাবাদের ধর্ম সংক্রান্ত বিভাগ তরজমানুল কোরআনের কয়েকশ’ কপি খরিদ করতাে। মওলানা সাময়িকীটির মাধ্যমে নিজামের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বৈধতা ও প্রয়ােজনীয়তা প্রচার করে যেতে লাগলেন। মজার ব্যাপার হলাে, পরবর্তীতে যেমন মওলানা সবকিছু ইসলামের দৃষ্টিতে বিচার-বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন বলে দাবী করেন, হায়দরাবাদ জীবনেও তার প্রচারধারা অনুরূপ ছিলাে। ইসলামের ছদ্মাবরণে তিনি নিজাম-রাজতন্ত্রের মহিমাকীর্তন শুরু করেন। তিনি নিঃসংকোচে ঘােষণা করেন, ‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য—মুসলমান হিসাবে আমি এ নীতির সমর্থক নই।”১রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে, এরূপ নজির ইতিহাসে খুব কমই দেখা যায়। হায়দরাবাদও এর ব্যতিক্রম ছিলাে না। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপেক্ষা করে বাইরের লােকদের চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হতাে। এক সময় সেখানে এর বিরুদ্ধে প্রবল গণ-অসন্তোষ দেখা দেয়। মওলানা এ সময়ের পুরােপুরি সদ্ব্যবহার করেন। নিজের লেখনী নিজামের সমর্থনে পরিচালনা করেন। তিনি সেখানকার শাসকগােষ্ঠীর উক্ত অন্যায় আচরণ সমর্থন করে বলেন, ‘মুসলিম সাম্রাজ্যগুলাে যােগ্য লােক সংগ্রহের ব্যাপারে কোন সময়ই বিশেষ দেশ বা জাতির সম্পদে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সকল স্থান থেকেই জ্ঞানী ও কর্মঠ হাত তাদের জন্য জমায়েত হয়েছে। তারা প্রতিটি দারুল ইসলামকে নিজেদের ওয়াতন ও আবাসভূমি মনে করেছে।”

পর্ব ০৩

আজকের সমাজ বা পরিবেশে দাঁড়িয়ে মওলানার উপরােক্ত উদ্ধৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে হয়তাে দোষণীয় বিশেষ কিছু দৃষ্টিগােচর হবে না। কিন্তু তিনি যে সময়, পরিস্থিতি ও পরিবেশে এবং যে উদ্দেশ্য নিয়ে কথাগুলাে বলেছিলেন, সেদিকে লক্ষ্য করলে তাঁর কপটতা  কারাে অস্বীকার করার উপায় নেই। যে সময় হায়দরাবাদবাসী সরকারী চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি কিনা বললেন, ‘যােগ্য লােক যেকোন দেশ থেকেই সংগ্রহ করা চলে। উক্ত আন্দোলনের বিরুদ্ধে এর চাইতে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রচারণা আর কি হতে পারে? ঠিক এভাবেই তিনি সেসময় ‘তরজমানুল কোরআনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের সমর্থনে প্রচারণা চালাতেন। কর্মজীবনে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে মানুষের মতাদর্শের পরিবর্তন হয়। এমনকি কোনাে দল বা রাষ্ট্রও সময়বিশেষে বিভিন্ন ব্যাপারে তাদের মত ও পথের পরিবর্তন করে থাকে। এটা দোষণীয় কিছু নয়। কিন্তু যিনি একটা বিশেষ আদর্শের অনুসারী বলে দাবী করেন, সব কিছুই তিনি সে আদর্শের দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করেন বলে প্রচার করেন, তাঁর পক্ষে তাে একই বিষয় সম্পর্কে পাত্র-ক্ষেত্র-সময়-কাল বিশেষে বিভিন্নরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা মতামত দেয়া সম্ভবপর নয়। ইসলাম ধর্মের মূলনীতি ও আদর্শ দেড় হাজার বছর পূর্বে পবিত্র কোরআন, মহানবীর (সঃ) বাণী ও কর্মাবলী দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে।

পরবর্তীকালে বিভিন্ন যুগে ইসলামিক চিন্তাবিদগণ প্রধানত কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারাই বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ ও মতামত ব্যক্ত করেছেন।বর্তমানে ও আগামী দিনে মুসলিম জীবনে যেসব সমস্যার উদ্ভব হবে কোরআন ও সুন্নাহর আলােকেই  সেগুলাের সমাধান করতে হবে। মওলানা মওদুদী সুদীর্ঘ কর্মজীবনে ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন। তাঁর এসব লেখার শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার-বিবেচনা না করলেও একটা বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তােলে। সেটা হলাে তাঁর স্ববিরােধী উক্তি, একই বিষয় সম্পর্কে বৈসাদৃশ্য মতামত ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।

১৯৩৩ সাল থেকে প্রকাশিত তরজমানুল কোরআনের সবগুলাে সংখ্যা এবং তাঁর লেখা সব ক’টি পুস্তক সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। কারণ তাঁর অনেক লেখাই আজকাল দুর্লভ। তবু যা কিছু পাওয়া যায় তাতে দৃষ্টিপাত করলেই আমাদের আক্কেল গুড়ুম হয়ে যায় । মওলানা মওদুদীর হায়দরাবাদ জীবনের পরবর্তীকালের প্রবন্ধরাজিতে দেখা যায়, ‘ইসলাম ও মুসলমানের’ তিনি একটা বিশেষ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে তারাই কেবলমাত্র মুসলিম সম্প্রদায় যারা গায়ের ইলাহী’ বা আল্লাহ– বিরােধী সরকার মিটিয়ে দিয়ে ইলাহী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের গড়া আইন-কানুনের পরিবর্তে খােদায়ী আইন-কানুন দ্বারা দেশ শাসনের জন্য সংগ্রাম করে। যে দল বা জামাত এরূপ করে না, বরং গায়ের ইলাহী শাসনব্যবস্থায় মুসলমান’ নামক একটি সম্প্রদায়ের পার্থিব কল্যাণ সাধনে সংগ্রাম করে তারা ইসলামপন্থী নয় এবং তাদের মুসলিম সম্প্রদায়। বলাও বৈধ নয়।”সাধারণত কলমা বা একত্ববাদে যারা বিশ্বাসী তাদের তিনি মুসলমান ও মুসলিম। জামায়াত বলতে প্রস্তুত নন। কিন্তু হায়দরাবাদ জীবনে তিনি কেবলমাত্র কলমাকেই মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্যসূত্র, অন্য অর্থে কলমায় বিশ্বাসীকেই মুসলমান বলে অভিহিত করেছেন।

তরজমানুল কোরআনের উপরােল্লিখিত সংখ্যার একস্থানে তিনি বলেছেন, “ইসলাম জাতীয়তার যে বৃত্ত এঁকেছে তাঘিরে রয়েছে একটি কলমা…. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এই কলমার উপরই বন্ধুত্ব আর শক্রতা। এর স্বীকার ঐক্যবদ্ধ করে, অস্বীকার বিচ্ছিন করে।”  হায়দরাবাদে শাসকগােষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার্থে তিনি মুসলমানের এই সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে পরিস্থিতি বুঝে এটা পাল্টে দিয়েছেন। অর্থাৎ, হায়দরাবাদে ‘মুসলমানের যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তাতে সাধারণভাবে সবাই যাদের মুসলমান বলে তিনিও তাই বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরবর্তীকালের ব্যাখ্যায় মুসলিম বিশ্বের শতকরা একজনও মুসলমান কিনা বলা মুশকিল। এভাবে মুসলমান শব্দটিও তাঁর স্বার্থসিদ্ধির শিকার থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। বিভিন্ন বিষয়ের ইসলামিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিতে গিয়ে তিনি অসংখ্য স্থানে এধরনের স্ববিরােধী মন্তব্য করেছেন। এসব লেখা দেখে যেকোন লােক মওলানা মওদুদী সম্পর্কে এরূপ ধারণা পােষণ করতে বাধ্য হবেন যে, ইসলাম প্রচার তাঁর উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নয়। তিনি ইসলামকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর প্রায় অর্ধশতাব্দীকালের কর্মজীবনের প্রতি তাকালে আর একটা বিষয় আমাদের দৃষ্টিগােচর হয়। তিনি চিন্তাধারা ও সংগঠনপদ্ধতির ব্যাপারে কিছুসংখ্যক চিন্তাবিদের অনুকরণ করেছেন। অবশ্য তিনি কোথাও এর স্বীকারােক্তি করেছেন কিনা আমাদের জানা নেই।

এজন্য বেশীদূর যেতে হবে  না । মরহুম মওলানা আবুল কালাম আজাদ ও মিসরের ইসলামী ভ্রাতৃসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শেখ। হাসান বান্নার রচনাবলী ও চিন্তাধারা পর্যালােচনা করলেই বিষয়টি প্রতিভাত হবে।