You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.27 | বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয় কমিটির অহ্বায়ক-সম্পাদক - সংগ্রামের নোটবুক

প্রায় এক কোটি লােক ভারতে এসেছে।

| সমর গুহ। নয়াদিল্লি, ২৬ এপ্রিল-বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয় কমিটির অহ্বায়ক-সম্পাদক শ্রীসমর গুহ এম পি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভারত যদি অবিলম্বে বাংলাদেশকে প্রকৃতভাবে সাহায্য না করে তা হলে ক্রমাগত উদ্বাস্তু এসে ভারতের আর্থিক কাঠামােকে বিপর্যস্ত করবে।

শ্রী গুহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, ভারতেরই সর্বাগ্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং নিরপরাধ জনসাধারণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী যে অত্যাচার করছে তা বন্ধ করা উচিত।

তিনি সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় সফর করে এসেছেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি লােক ভারতে এসেছে।

 

উদ্বাস্তুর ছদ্মবেশে হাজার হাজার পাকিস্তানী চরও এদেশে এসেছে। তিনি ভারত সরকারকে তাদের সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে বলেন।

৮৮

৫০,০০০ উদ্বাস্তু আসামে এসেছে। ধুবড়ি থেকে শ্রী জে কে চক্রবর্তী জানাচ্ছেন ; শেরপুরে বােমাবর্ষণের ফলে ৫০,০০০-এরও বেশী উদ্বাস্তু বাংলাদেশ থেকে ময়মনসিং-গারাে পাহাড় এলাকা দিয়ে আসামে প্রবেশ করেছে।

৩০০০-এরও বেশী লােক বাংলাদেশ থেকে গােয়ালপাড়া জেলায় আশ্রয় নিতে এসেছে। তাদেরও অধিকাংশ বালবৃদ্ধি-বনিতা।

বালুরঘাটে আড়াই লক্ষ উদ্বাস্তু বালুরঘাট থেকে শ্রীরাধামােহন মহান্ত জানাচ্ছেন, পাকিস্তানী বাহিনীর অত্যাচারে নির্যাতিত বাংলাদেশের দিনাজপুরে, রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরের সাড়ে ছয় লক্ষ লােকের মধ্যে আড়াই লক্ষ লােক বালুরঘাট সহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তারপর থেকে ক্রমাগত দলে দলে উদ্বাস্তু আসছে।

জলপাইগুড়িতে আরও ৪টি শিবির জলপাইগুড়ি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, সীমান্ত অতিক্রম করে এপারে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার উদ্বাস্তু এসেছেন। বারটি শিবিরে এঁরা আছেন। এদিকে শরণার্থীদের আগমন অব্যাহত থাকায় শীঘ্রই আরও ৪টি শিবির খােলার ব্যবস্থা হয়েছে। শরণার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই কৃষক। এঁরা সঙ্গে করে প্রায় দশ হাজার

 

গবাদি পশু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে এই পশুদের খাদ্য যােগান দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।

২৭ এপ্রিল ‘৭১

নবাগত শরণার্থীদের দেখাশােনা করার জন্য আলাদা বিভাগ হচ্ছে।

রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ

| স্টাফ রিপাের্টার। বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য এবং সবকিছু প্রয়ােজনীয় ব্যাপার দেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্পূর্ণ পৃথক একটি বিভাগ খােলার সিদ্ধান্ত করেছেন। একজন ডিরেকটর জেনারেল-এর উপর এই বিভাগের ভার ন্যস্ত হবে; এবং তাঁর পদমর্যাদা হবে সম্ভবত কমিশনার পদের সমতুল ।। | বুধবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত আলােচনার পর রাজ্য সরকার আরও সিদ্ধান্ত নেন যে, সীমান্তের জেলাগুলির জন্য অতিরিক্ত জেলা শাসক পদের ন’জন অফিসার নিয়ােগ করা হবে। তাদের উপর ভার থাকবে জেলায় জেলায় শরণার্থীদের দেখাশােনার কাজে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন। প্রত্যেকের অধীনে পৃথক স্টাফ দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরােধ এদিকে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীঅজয়কুমার মুখারজি মঙ্গলবার টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের নানা সমস্যা আলােচনা করেছেন এবং এখানে স্থানাভাব হেতু এই শরণার্থীদের ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পাঠাবার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরােধ জানিয়েছেন। কেন্দ্র এখনও কোন সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেননি বলে মুখ্যমন্ত্রী বুধবার সাংবাদিকদের জানান। ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে তিনি এক পত্রও দিয়েছেন।

 

অফিসার-টিম এসেছেন ইতিমধ্যে এদিন সকালেই কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন দফতরের সচিব শ্রী জি এস কহলন এবং যুগ্মসচিব শ্রীইন্দর সহায় কলকাতায় এসেছেন। তাঁরা মহাকরণে এসে মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও ত্রাণ কমিশনারের সঙ্গে শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে আলােচনা করেন।

গণমাধ্যম (ষষ্ঠ খণ্ড) | ১২

রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ি এদিন পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা ৬ লাখ ৭৩ হাজার। তাঁদের মধ্যে ২ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি আছেন সরকারী শিবির ও গ্রহণ কেন্দ্রে। বেসরকারী হিসাবে এই সংখ্যা কুড়ি লাখের কম হবে না।

রাজ্য সরকার এদের ব্যাপারে আরও স্থির করেছেন যে, দৈনিক মাথাপিছু ক্যাশ ডােল ১ টাকা থেকে ১ টাকা ২৫ পয়সায় তােলা হবে। পারিবারিক ভিত্তিতে পরিচয়সূচক কারড অবিলম্বে ঢালু হবে; আঠার বছর পর্যন্ত নাবালকদের নাম এই কারড-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।

মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরও বলেন, এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলের চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিললিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলােচনার যে প্রস্তাব আছে তার আগে কলকাতাতেই তারা প্রাথমিক আলােচনা করবেন। আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীদের এই আলােচনায় যােগ দেওয়ার কথা আছে।

| এই নবাগত শরণার্থীদের কী আখ্যা দেওয়া হবে তা নাকি কেন্দ্র স্থির করতে পারেননি। তবে এঁদের ‘উদ্ধাস্তু’ (রেফিউজি) বলা হবে না।

রাজ্য সরকার ও বেসরকারী উদ্যোগে যে সব শরণার্থী শিবির খােলা হয়েছে, সেগুলির অবস্থা নাকি ইতিমধ্যে সঙ্গীণ হয়ে উঠেছে। শরণার্থীরা এত বেশি সংখ্যায় আসছেন, যার ফলে শিবিরের কর্মীরা কোনমতে তাল রাখতে পারছেন না।

 

রাজ্যের ত্রাণমন্ত্রী শ্রীসীতারাম মাহাতও বনগাঁ অঞ্চলে পাঁচটি শিবির পরিদর্শন করে এসে এদিন শরণার্থীদের দুঃখকষ্টের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন শিবিরগুলিতে যে ব্যবস্থা আছে তাতে সাময়িকভাবে কিছু দিন শরণার্থীরা থাকতে পারেন। কিন্তু বেশি দিন হলে কোনমতেই সম্ভব হবে

প্রসঙ্গত তিনি বলেন, বনগাঁ মহকুমার সীমান্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা আরও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দাবি করেছেন।

হাসপাতালে আহত শরণার্থী পশ্চিম বাংলার দুটি সীমান্ত জেলার দুটি হাসপাতালে পাক ফৌজের বুলেট ও বােয়ােনেট-এর আঘাতে আহত প্রায় চারজন লােক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থমন্ত্রী ডা. জয়নাল আবেদিন বুধবার সাংবাদিকদের এ খবর দিয়ে বলেন, একমাত্র পশ্চিম দিনাজপুরের একটি হাসপাতালে এমন আহতের সংখ্যা দু’শতাধিক।

২৯ এপ্রিল ‘৭১

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা