পূর্ববঙ্গে ব্যাপক গণহত্যা সম্পর্কে ভূট্টোর অভিযােগ নয়াদিল্লি, ৬ সেপ্টেম্বর–পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা শ্রীজেড এ ভূট্টো অভিযােগ করেছেন যে জামাতই ইসলাম দলের সশস্ত্র রাজকারেরা পূর্ববঙ্গের বামপন্থী দেশপ্রেমিকদের হত্যা করেছে।
পূর্ববঙ্গের ব্যাপক গণহত্যার কথা শ্রীভুট্টো এই সর্ব প্রথম উল্লেখ করলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর তারিখের করাচির উর্দু দৈনিক পত্র আজাদে প্রকাশিত একটি সংবাদে ভুট্টোর এই গণহত্যার অভিযােগের কথা উল্লেখ করা হয়। | শ্রী ভুট্টোর উক্তি উদ্ধৃত করে এই পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, যারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করায় বিশ্বাসী তাদের নিজ মন্ত্রিসভার অন্তর্ভূক্ত করে পূর্ববঙ্গের নবনিযুক্ত গভরনর শ্রী এ এম মালিক দেশের প্রতি অবিচার করবেন এবং সংকট আরও বাড়িয়ে তুলবেন। | ……বন্ধ রাখার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং বৃহৎ শক্তিগুলির প্রতি অনুরােধ জানানাে হয়। পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গীশাহী কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় নেতা শেখ মুজিবকে বেআইনীভাবে আটক রাখার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
জঙ্গীশাহী কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় নেতা শেখ মুজিবকে বেআইনীভাবে আটক রাখার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীদের প্রতি ভারত সরকার এবং ভারতের অধিবাসীদের সহৃদয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ জঙ্গী দাপট থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য যে আন্দোলন চালাচ্ছেন তাকেও সমর্থন জানানাে হয় এবং বাংলাদেশের জনসাধারণের মুক্তিযুদ্ধকে পূর্ন সমর্থন করার জন্য পশ্চিম পকিস্তানের জনসাধারণকে অনুরােধ জানানাে হয়।
সভার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে ঘােষণা করা হয় যে, পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক প্রস্তাবই বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবেন না। স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য তারা চরম আত্মত্যাগ করেছেন এবং রক্ত দিয়ে যদি স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়, তাহলে বাঙলাদেশের নিরস্ত্র জনসাধারণ প্রতি মুহূর্তে তাই করছেন। | কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়–বাংলাদেশের পশ্চিম পাকিস্তানী সাম্রাজ্যবাদী শােষণকারীদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছেন, তাঁদের সঙ্গে সকলেই যাতে একাত্মবােধ করেন, তাই ওই কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া এই কমিটি বাংলাদেশের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের পূর্ণ ঐক্যের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের এবং একমাত্র আইন মাফিক সরকার ‘গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতি জন সাধারণের বিশ্বাসের ‘দ্যোতক।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীকামারুজ্জামান বৃহস্পতিবার আবার ঘােষণা করেন যে, পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর সঙ্গে কোন রাজনৈতিক মীমাংসা সম্ভব নয়।
রণাঙ্গনের খবর এদিন মুজিবনগরে অবস্থিত বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দফতর থেকে এক যুদ্ধ ‘বুলেটিনএ জানানাে হয় যে,
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এলাকাগুলিতে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৪৫ জন পাক সেনা খতম এবং ১৫ জন আহত হয়েছে।
ফরিদপুরে থানা আক্রমণ গত ৫ সেপ্টেম্বর যশােরখন্ডের ফরিদপুর জেলার নারা থানায় আক্রমণ চালিয়ে মুক্তি যােদ্ধারা একজন পাকিস্তানী পুলিশ অফিসার সহ তিনজন পুলিশ এবং ষােলজন রাজাকারকে খতম করে।
মুক্তিযােদ্ধারা ওই থানা এবং থানার সংলগ্ন অফিসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একটি বেতার যন্ত্র সহ বহু অস্ত্রশস্ত্রও তারা দখল করে।
রংপুরখণ্ডে বহু পাক সেনা খতম। গত ২ সেপ্টেম্বরে রংপুর খন্ডের হাতিবাধার কাছে এক আচমকা আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা তিনজন পাক সেনা খতম করে।
শ্রীহট্টে পাক সেনার বর্বরতা শ্রীহট্ট খন্ড থেকে পাক জঙ্গী শাহীর নির্মম অত্যাচারের বহু খবর আসছে। সেখানে পাক সেনা এবং তাদের তল্পিবাহকেরা নিরাহ গ্রামবাসীদের হত্যা করে তাদের ধন সম্পত্তি লুট করছে। তবে, গেরিলারাও পিছিয়ে নেই। গত ২ সেপ্টেম্বরে তারা জয়ন্তীপুর থানা আক্রমণ করে একজন অফিসার এবং দুজন পুলিশকে বন্দী করে ।।
চট্টগ্রামে ট্রেন ধ্বংস ফেণীর কাছে মুরারিগঞ্জে রেল স্টেশনে গেরিলারা একটি ট্রেন উড়িয়ে দেয়। এতে ওই ট্রেনের চালকসহ বহু পাক সেনা মারা যায়।
ময়মনসিংহে জোর গেরিলা লড়াই। ময়মনসিংহ খন্ডে গেরিলা কায়দায় মুক্তিযােদ্ধারা পাক সেনাদের একেবারে নাজেহাল করে ছাড়ছে। টাঙ্গাইলে গেরিলারা দুটি সৈন্য বােঝাই স্টীমার পুড়িয়ে দেয়। এতে বেশ কিছু পাক সেনা খতম হয়েছে। ঢাকায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গেরিলাদের জোর বন্দুকের লড়াই চলছে বলে খবর আসছে।
পি টি আই। ১০ সেপ্টেম্বর ‘৭১
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা