ঈশান ইস্কুলের পথ— অমিতাভ দাশগুপ্ত
ফরিদপুর টাউনের লাগােয়া ট্যাপাখােলা গায়ে ছিল আমাদের ভিটে। এজমালি পুকুর-ঘঁকা জিয়ল মাছের ঝােলমাখা ভাত খেয়ে নাজিরের মেজো ব্যাটা মমিনের সঙ্গে আল-নাবাল ভেঙে ইসকুলের দিকে পা বাড়াতাম। আমার বয়স তখন আট। একটু এগােলেই বাঁ দিকে বাবার সাহেবের লালকুঠি। কাঠবাদাম গাছের ছায়ায় ছায়ায় আরও এগিয়ে গেলে ফরিদ মুর্শেদের কবর চোখে পড়ত, ভূয়ে বাদিফোতার গামছা বিছিয়ে নামাজ পড়ে নিচ্ছে হয়তাে সেই বুড়ােটিই, যে রােজ সকালে আমাদের বাড়ী দু হালি করে ডিম দিত। সুরকি ঢালা পথ বেয়ে জোরূসে এক্কাচালাত কোচোয়ান- তাদের ঠোট আর হাতের ছিলি একসঙ্গে শিস্ দিয়ে উঠত-হুই, হুউই। চাকা থেকে লাল ধূলাে উড়ত, জামা দিয়ে চোখ মুছতে গেলে আমার পেট বেরিয়ে যেত। আরও দু’চার পা এগােলে পাঙাশ মাছের আঁশটে গন্ধে মনে পড়ত, ওখানে পর পর বুনােদের ঘর। পুলিশ ব্যারাক, মেলার মাঠ, জহরল মিয়ার মক্তব- তারপরই ঢং ঢং ঘণ্টার শব্দে বনচাড়াল, যজ্ঞিডুমুরের মাথার ওপর ফোস করে জেগে উঠত ঈশান ইস্কুলের চূড়াে। প্রায়ই দেখতাম, হনহন করে ছাতাটি লাঠির মত ধরে মৌলভী স্যার হেঁটে যাচ্ছেন।
৫ এপ্রিল, ১৯৭১
(আনন্দমেলা)
আনন্দবাজার পত্রিকা
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭