You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.12 | মাহমুদ আলীর ডাণ্ডাগুলীর রাজনীতি! ছােট্ট একটি খবর - সংগ্রামের নোটবুক

মাহমুদ আলীর ডাণ্ডাগুলীর রাজনীতি! ছােট্ট একটি খবর

খবরটা প্রচার করেছে তথাকথিত পাকিস্তানের একটি সংবাদ সরবরাহ সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতা সিলেটের রাজনৈতিক এতিম মাহমুদ আলী পিণ্ডিতে তার মনিব জেনারেল আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যােগদানকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের সাথে মাহমুদ আলীদের যে আলাপ-আলােচনা হয়েছে তা জানিয়েছে। সংবাদে একথাও বলা হয়েছে যে ইয়াহিয়া খানের সাথে বশংবদ মাহমুদ আলীর বৈঠক ১০ মিনিটকাল স্থায়ী হয়েছে। 

জাতিসংঘে কোন বাঙ্গালীকে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা নিযুক্ত এই প্রথম। বাংলাদেশে অনেক উপযুক্ত লােক থাকতেও কোনদিন পিণ্ডির পাকিস্তানওয়ালারা জাতিসংঘে প্রতিনিধিদলের নেতা হিসাবে কোন বাঙ্গালীকে পাঠানাের কথা চিন্তাও করতে পারেনি। কারণ তাতে পাকিস্তানে যে বাংলাদেশ বলেও একটি অংশ। তা ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল। তাছাড়া ইসলাম ও দ্বিজাতিতত্ত্বের নামে অর্জিত পাকিস্তানটা ছিল পাঞ্জাবী | কায়েমী স্বার্থবাদীদের বাপ-দাদার খাস তালুক। যাহােক, পাকিস্তানের মৃত্যুর পর হলেও পিণ্ডিওয়ালারা কুলাঙ্গার হলেও একজন বাঙ্গালীকে জাতিসংঘে নেতা করে পাঠিয়েছে। বাঙ্গালী ও বাংলাদেশের সাথে মাহমুদ আলীদের বা পিণ্ডিওয়ালাদের পাকিস্তানের আজ আর কোন সম্পর্ক না থাকলেও মীরজাফর মাহমুদ আলী তা | অন্ততঃ মৃত্যুর আগে একবার ওজারতি-তেজারতি করে নিতে পারল।

আমাদের কথা সেখানে নয়া নিজেদের মনােরঞ্জনের জন্য ইয়াহিয়া খানরা মাহমুদ আলীদের মত | লােকদের দিয়ে যা খুশী তা করিয়ে নিতে পারে। তারা এদের দিয়ে জাতিসংঘে নাচের অনুষ্ঠানও করিয়ে নিতে পারে। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীদের মধ্যে মাহমুদ আলীদের মত দু’চারজন নাচনেওয়ালা থাকবে তাতে আশ্চর্য কি। কিন্তু প্রশ্নটা হল জাতিসংঘ অধিবেশনে এবার ১৩০ টি দেশের প্রতিনিধিদল যােগ দিয়েছেন। ইয়াহিয়া খানদের বাপ-দাদার খাস তালুক-তথাকথিত পাকিস্তান আজ এক মহা সঙ্কটে নিপতিত। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি পদদলিত করতে গিয়ে তারা আজ গেড়াকলে আটকে পড়েছে। ফাটা বাসে ঠ্যাং আটকে দিয়ে তারা আজ মরণ চিক্কারে কণ্ঠ ফাটিয়ে ফেলছে। তাই তাদের এই প্রাণান্তকর অবস্থা থেকে রক্ষা করার উপায় বের করার জন্য মাহমুদ আলী নিশ্চয়ই ১৩০ টি না হােক, অন্ততঃ একশতটি প্রতিনিধিদলের সাথে কথা বলেছে। তাদের কথা শুনেছে। এদের মধ্যে কেউ হয়ত ইয়াহিয়াদের পক্ষে বলেছেন, আবার অনেকে বিপক্ষে। বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মাহমুদ আলী কি করে মাত্র ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে তার মনিবকে সমস্ত আলাপআলােচনার বিষয়, সমস্ত প্রতিনিধিদলের পক্ষ-বিপক্ষের বক্তব্য বলে ফেলতে পারল? তবে কি শুধুমাত্র মাহমুদ আলীর চেহারা মােবারক’ দর্শনের জন্যই বাদশা ইয়াহিয়া তাকে রাজ দরবারে ডেকে এনেছে? আসল রিপাের্টটা ইয়াহিয়া কি প্রতিনিধিদলে তার গােয়েন্দা আগাশাহীর কাছ থেকেই নিয়েছে? | হয়ত বা অবস্থাটা এমনও হতে পারে যে, মাহমদু আলীর বলার মত তেমন কিছুই ছিল না। কেননা, জাতিসংঘে তারা যাদের সাথেই দেখা করেছেন তাদের সবাই মাহমুদ আলীদের একই জবাব দিয়ে দিয়েছেন। এক কথায় তাদের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন। তাই মাহমুদ আলীকেও মাত্র এক কথাতেই মনিবের কাছে রিপাের্ট শেষ করতে হয়েছে কেউ আমাদের কথা শুনে না।

জয়বাংলা (১)১:১২ ১২ নভেম্বর ১৯৭১