1972.01.23 | ভারত ও বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানির পণ্য তালিকার চূড়ান্ত রূপদান
বাংলাদেশ ও ভারত সরকার উভয় দেশের মধ্যে, বিশেষভাবে ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প ও কারিগরি গবেষনার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিত্তিক সহযোগিতার ব্যাপারে মতৈক্যে উপনীত হয়। মি. ডি,ফি, দলের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশ সরকারের বিস্তারিত আলোচনার পর রবিবার ভারত হতে পণ্য আমদানির তালিকা চূড়ান্ত হয়। বাংলাদেশের চাহিদার ভিত্তিতে রচিত এই দীর্ঘ তালিকায় খাদ্যসামগ্রী ভোজ্য তৈল ও ওষধপত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য স্থান লাভ করেছে। জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীন বিমান চলাচল এবং অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভারত সাহায্য প্রদান করবে। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য উভয় সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হবে, তবে ভারত প্রতিনিধি দলের ঘনিষ্ঠ মহল হতে বলা হয় যে, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ভারতীয় পণ্যের মূল্য নিঃসন্দেহে অনুকূল হবে। উক্ত সূত্রে আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বিধানের সহায়ক হয়, এমনভাবেই আলোচনার মাধ্যমে মূল্য নির্দিষ্ট করা হবে। তারা বলেন যে, বাংলাদেশে শক্তিশালী অর্থনীতির বিধানের জন্য ভারত আগ্রহশীল। ভারতের সরকারি সূত্রে জানানো হয় যে, বাংলাদেশের রেলওয়ে পুনর্গঠনের জন্য ভারত আরও ১০ কোটি টাকা প্রদান করবে। আগামী মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত বাংলাদেশকে ২টি ফকার ফ্রেন্ডশীপ বিমানও প্রদান করবে।
রপ্তানী পণ্যের তালিকাঃ চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ ভারতে অন্যান্য পণ্যের সহিত নিম্ন লিখিত পণ্যও রপ্তানি করবেঃ পাট, নিউজপ্রিন্ট, চামড়া, হাস-মুরগী ও মাছ। মি. ডি,পি, ধরের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার পর আমদানি-রপ্তানির তালিকা সম্পর্কে মতৈক্য হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় প্রতিনিধি দল জানান যে, “আমরা বাংলাদেশে ভারতীয়দের বেসরকারি ব্যবসায়-বাণিজ্যে খুব বেশি উৎসাহ প্রদান করব না। তিনি অবশ্য বলেন যে, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই মিশ্র অর্থনীতি বহাল থাকায় বেসরকারিভাবেও কিছুটা ব্যবসা বাণিজ্য চলবে। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, তার সরকার বেসরকারি উদ্যোক্তাদের “কারচুপি” করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করবেন না। ভারতীয় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সরকারের সাথে পারষ্পরিক স্বার্থ-সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে ব্যাপক ভিত্তিতে আলোচনা করেন। বিগত দুই মাসে এই এলাকার ঘটনাপ্রবাহের দ্রুত বিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের পারষ্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁরা আলোচনা করেন। বিশেষভাবে বহু দেশ কর্তৃক নতুন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দানের প্রেক্ষিতে এই আলোচনা জরুরি হয়ে পড়ে। ভারতের প্রতিনিধিদলের প্রধান মি* ডি পি, ধর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও দীর্ঘকাল আলোচনা করেন। ভারতীয় প্রতিনিধি জনাব নজরুল ইসলাম, জনাব তাজউদ্দিন, জনাব কামারুজ্জামান, জনাব মনসুর আলী, জনাব এম আর সিদ্দিকী ও ড. কামাল হোসেনের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। জনৈক ভারতীয় মুখপাত্র জানান যে, বাংলাদেশের আশু প্রয়োজন পূরণের জন্য তাঁরা সবকিছু করবেন। তিনি বলেন, “আপনাদের যা প্রয়োজন, তাই আমরা দিব।” ভারতীয় সূত্রে বলা হয় যে, অর্থনৈতিক লাভালাভের জন্য তারা সাহায্য প্রদান করবেন না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। চার সদস্য বিশিষ্ট ভারতীয় প্রতিনিধিদলের জনৈক মুখপাত্র জানান যে, কারিগরি জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রেই ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য দানে ইচ্ছুক। ১০৪
Reference:
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
ইত্তেফাক, ২৩ জানুয়ারি ১৯৭২
Unicoded by Tushar Mondal