কেন এই ইন্দিরা অভিযান?
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সীমান্ত সফর করবেন শুনে যারা ভেবেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্ভবিত এবার ‘সকল রকমের সাহায্য করছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে শুধু হতাশ হন নাই, বিক্ষুব্ধ হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে শরণার্থীদের খিচুড়ি পরিবেশন করেছেন- সেগুলাে ফলাও করে ছাপা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে মনে হয়, সমস্যা শুধু খিচুড়ি পরিবেশনের। বিদেশের কাছে তার জন্যে ধর্না দেয়া হয়েছে। ইয়াহিয়া সরকারের নিকটও তার টাকা দাবি করা হয়েছে। রাষ্ট্র সংঘের প্রতিনিধিদের কাছে ‘প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, দস্যু ইয়াহিয়া সরকারের ফ্যাসিস্ট আক্রমণই বাধ্য করেছে এই লক্ষ লক্ষ নরনারীকে ঘরবাড়ি ছাড়তে।
ইন্দিরাজী যদি সত্যিই সত্যিই বিশ্বাস করে থাকেন যে, বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট দস্যুরা তাদের বর্বরতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে তিনি কী করে বলছেন- শরণার্থীদের বাংলাদেশে ফিরে যাবার মতাে অবস্থা সৃষ্টি করা হবে? ফ্যাসিস্ট দস্যু ইয়াহিয়া শাসনের অবসান না করে কি তা কখনাে সম্ভব হবে? ইন্দিরাজী যদি মনে করে থাকেন, আন্তর্জাতিক চাপে ইয়াহিয়া সরকার আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ‘রাজনীতিক আপােসে’ আসতে বাধ্য হবে এবং তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে তবে তিনি স্বপ্ন রাজ্যে বাস করছেন। ইয়াহিয়া শাসন খতম না করে, বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ মুক্ত না করে তা কখনাে সম্ভব হবে না। অথচ ইন্দিরাজী সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরবতা রক্ষা করে চলেছেন।
দুষ্ট সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ ইন্দিরাজীকে প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার কী হলাে? কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও করেছেন যে, ইন্দিরাজীর মনিব ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ স্বীকৃতিদানের বিরুদ্ধে বলেই স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। এই সকল অবাঞ্ছিত প্রশ্নে ইন্দিরাজীর মেজাজ খারাপ করেছে। কারণ, ভারতের শতকরা ৯০ জনের দাবিকে অগ্রাহ্য করে তিনি তার ‘প্রগতিশীলতা’র মুখােস আর বজায় রাখতে পারছেন না।
শরণার্থীরা উপলব্ধি করছেন, ইন্দিরা সরকারের রেডিও তাদের কতােখানি বিভ্রান্ত করেছে। তারা অনেকেই জানতেন না যে, ইন্দিরা সরকার একদিন স্বাধীনতার সৈনিকদের তারিফ করছিলেন তার মধ্যে কোনাে আন্তরিকতা ছিল না। কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার ও তাদের জয়ঢাক গুলাে যতােই আওয়াজ করুক না কেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সর্বতােভাবে সাহায্য করার ইচ্ছা এই সরকারের নেই।
এই সঙ্কট মুহূর্তে ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের সামনে এক বিরাট দায়িত্ব উপস্থিত হয়েছে। সামনে লােকসভার অধিবেশন। সেখানে ইন্দিরা সরকারকে বাধ্য করতে হবে স্বীকৃতির ঘােষণা দিতে। অপরদিকে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিকদের সংগ্রামকে জয়যুক্ত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে আরাে বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি যদি কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ তাকে কখনাে ক্ষমা করবে না। লােকসভা ও তার বাইরে এ কথা স্পষ্ট করে ঘােষণা করতে হবে।
সূত্র: দেশের ডাক
২১ মে, ১৯৭১
০৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৮