যাত্রা হলাে শুরু
ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে পলাশীর আম্রকুঞ্জে একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। প্রায় দু’শ চৌদ্দ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন পূর্ব বাংলার মুজিবনগরের আম্রকুঞ্জে আবার সােনার বাংলার স্বাধীনতা সূর্যের উদয় হলাে।
‘আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালােবাসি’ কভি কণ্ঠের এই উদাত্ত সঙ্গীতের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম সরকার নতুন রূপে জন্ম নিল। ঘােষিত হলাে সরকারি সনদ সরকারি ভাবে। যে রক্তস্রোতে একদিন হারিয়ে গিয়েছিল বাংলার স্বাধীনতা- সেই রক্তস্রোতের মধ্যেই আবার ভূমিষ্ঠ হলাে মুক্ত বাংলা। জালিমের শশাষণ মুক্ত বাংলা সৃষ্টির হলাে অদম্য প্রাণ শক্তি দিয়ে গড়া নবীন বাংলা। জন্ম নিল ইতিহাসের বিবর্তন পথে নতুন আশার আলাে। বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় সংযােজিত হলাে রক্ত লেখা নতুন অধ্যায়।
কিন্তু সৃষ্টি লগ্নেই অপমৃত্যুর করাল ছায়া, যাতে এই নবজাতক স্বাধীন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে না পারে সে জন্য বিশ্বের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। নবগঠিত বাংলা সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে এই দুরুহ দায়িত্ব প্রতিপালনের আহ্বান মুক্ত বাংলার আম্রকুঞ্জে মুক্ত কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। অসহায়, নিঃসম্বল একটি সদ্যজাত দেশকে বাঁচাতে হলে স্বাধীনতাকামী কোটি কোটি মানুষকে সর্ব থেকে রক্ষা করতে হলে আজ সর্বাধিক ও সর্বপ্রথম প্রয়ােজন বিশ্ব রাষ্ট্রসমূহের স্বীকৃতি।
এই স্বীকৃতি মানবিক চেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ। মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে মানবিকতার জয়গান করা বিশ্ব মানবতার চরমতম কলঙ্ক। আর এই কলঙ্কিত অধ্যায়ে বর্বর ইয়াহিয়া চাইছে পূর্ব বাংলার বুকে গণহারা গণতন্ত্র কায়েম করতে। তাই চলেছে নিষ্ঠুর হত্যালীলা। চলেছে বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা ধ্বংসের প্রচণ্ড আয়ােজন।
ইতিমধ্যেই যে পরিমাণ মৃত্যু ও ধ্বংস হয়েছে সমগ্র পূর্ব বাংলা জুড়ে এবং এখনও চলছে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তা বিশ্বের যে কোনাে নৃশংস অত্যাচার এমনকি নাৎসী নেতা হিটলারের পৈশাচিক লােমহর্ষক ঘটনাবলীকেও ম্লান করে দিয়েছে।
তাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত সােনার বাংলাকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে প্রয়ােজন স্বীকৃতির। এ দাবি আজ কোটি কোটি বাঙালির কোটি কোটি মানুষের। সােনার বাংলার উদ্দেশে এপার থেকে আমরা জানাই প্রণাম।
সূত্র: গণসংহতি
১৮ এপ্রিল, ১৯৭১