জরুরি অবস্থা
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত আক্রমণ করিল। ভারত সরকার এবং ভারতবাসীর সন্দেহ বাস্তবে পরিণত হইল। এতদিন ভারত সরকার ভারত পাক সম্পর্কের উপর যে বক্তব্য রাখিয়া আসিতেছিলেন বিশ্বের কতিপয় মতলববাজ বৃহৎ রাষ্ট্র তাহাতে কর্ণপাত না করিয়া উল্টা ভারতকে দোষারােপ করিতেছিলেন। এখন তাহারা বুঝুন, পাকিস্তানের মতলব। অবশ্য তাহারা সবই বুঝিতেন— পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতকে চাপে রাখার জন্যই তাহারা বুঝিয়াও না বােঝার ভান করিতেন। ভারত যে পাকিস্তান কর্তৃক আক্রান্ত হইবে তাহা গত কয়েক মাস ধরিয়া সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে বিনা প্ররােচনায় পাক বাহিনীর গােলাগুলি বর্ষণ হইতেই বােঝা গিয়াছিল। আর ভারত এই ব্যাপারে বারে বারে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল। তখন যদি পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রগুলাে সচেতন হইতেন তাহা হইলে পাকিস্তান আজ সরাসরি ভারতের বুকে আঘাত হানার সাহস পাইত না।
যাক, রাষ্ট্রসঙ্ঘ অথবা বৃহৎ রাষ্ট্রগুলাে কী করিল বা না করিল তাহাতে আমাদের আর বিশেষ আসে যায় না। আমাদের দেশ আক্রান্ত এবং পরিস্থিতি মােকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘঘাষিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি দেশ রক্ষার আহ্বান জানাইয়াছেন। ফলে দেশবাসীর উপর বর্তায়াছে বিরাট দায়িত্ব। আমাদের বিশ্বাস দেশবাসী দৃঢ় মনোেবল লইয়া দেশ রক্ষায় সেনাবাহিনীর পেছনে আসিয়া দাঁড়াইবেন। এই সময়ে যাহারা কর্তব্য পালনে বিমুখ হইবেন তাহাদের দেশদ্রোহী হিসেবে দেশপ্রেমিক দেশবাসী চিহ্নিত করিতে ছাড়িবেন না। ভারতবাসী কাপুরুষ নহে এবং কাপুরুষ কোনােকালেও ছিল না। দেশে জরুরি অবস্থা ঘঘাষিত হওয়ায় সর্বপ্রযত্নে প্রশাসন শুধু চালু রাখা নয়, গতিশীল করিয়া তুলিতে হইবে। এই ব্যাপারে সর্বশ্রেণীর নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য রহিয়াছে। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সহিত দেশপ্রেমিক ছাত্র-যুবকদের আগাইয়া আসিতে হইবে, বাজারে সরবরাহ এবং মূল্যমান স্থিতিশীল রাখিতে ব্যবসায়ী সমাজকে যত্নবান হইতে হইবে। এই মুহূর্তে মজুদদারী এবং মুনাফাখখারী কোনােমতেই বরদাস্ত করা হইবে না। সরকারি কর্মচারীদের আরও বেশি করিয়া কাজ করিতে হইবে। দেশে উৎপাদন গতিশীল রাখার জন্য কৃষক, শ্রমিককে কঠোর পরিশ্রমী হইতে হইবে। এই সময়ে যাহারা দেশ রক্ষার পরিপন্থী কাজ করিবেন তাহাদের দমন করিতে হইবে কঠোর হস্তে। সর্বশেষে আমরা আবার সমগ্র দেশবাসীকে শত্রুর আক্রমণ মােকাবিলায় ভারত সরকারের হস্তকে শক্তিশালী করিতে আহ্বান জানাইতেছি।
সূত্র: জাগরণ
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১