২৫ আশ্বিন ১৩৭৮ মঙ্গলবার ১২ অক্টোবর ১৯৭১
-যশোর আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও গণপরিষদ সদস্য জনাব সৈয়দ আতর আলী (৬৫) কল্যাণীস্থ মুক্তিবাহিনীর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহিহে রাজিউন)। মরহুমের ইচ্ছামত বাংলাদেশের মুক্ত এলাকায় কাশীপুর গ্রামে তাঁর লাশ দাফর করা হয়। গণপরিষদ সদস্য সোহরাব হোসেন (যশোর) নেতৃত্ব কাশীপুর যাত্রাপথে পাক-সেনারা প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে। কেউ হতাহত হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী এক বার্তায় শোক জ্ঞাপন করেন।
-The World Council says that the armed struggle in Bangladesh is a National liberation war.(সংবাদপত্র)
-বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌযান এম ডি পলাশ, এম, ভি পদ্মা কলকাতার গার্ডেনরীচ জেটি থেকে পানিতে ভাসায় হয়। পরবর্তীকালে নৌযান দু’টি অপারেশন হটপ্যান্টস’ অভিযানে খুলনা ও মংলা এলাকায় অংশ গ্রহণ করে উল্লেখ্য, ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গোড়াপত্তন করা হয়। ক্যাপ্টেন নূরুল হক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার যথাক্রমে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এদিন চট্টগ্রাম বন্দরে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রীক জাহাজ ‘এল বোম ক্ষতিগ্রস্থ করে।
-যশোর জেলার মহসিনা এলাকায় মুক্তিবাহিনী সকাল ৯টা ফিল্ডগাণ থেকে ২০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে। পাকবাহিনী ক’জন নিহত হয়। পক্ষান্তরে পাকবাহিনী নিরীহ লোকদের উপর অত্যাচার চালায় ক’জনকে আহত করে।
-প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রেডিও ভাষণে ঘোষণা দিলেন, ডিসেম্বরের ২০ তারিখে শাসনতন্ত্র প্রকাশ করা হবে। উপনির্বাচন সমাপ্তির পর ডিসেম্বর ২৭ জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসবে। জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হবে। শাসনতন্ত্র উত্থানের ৯০ দিনের মধ্যে গৃহিত হবে। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের নতুন এক কর্মসূচী ঘোষণা করে। তাঁর বক্তৃতায় বলেনঃ ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেন। তিনি তাঁর ভাষায় জাতীয় জীবনের এই ভয়াবহ মুহুর্তে আল্লাহ এবং ইসলামের নামে ঐক্যবদ্ধ হতে বললেন। বিরস, গম্ভীর এবং মদালস কন্ঠে তিনি বললেন- (ক) পাকিস্তানের সমগ্র সীমান্ত বরাবর ভারত ব্যাপকভাবে সৈন্য সমাবেশ করেছে। (খ)চট্টগ্রাম এবং মঙ্গলাবন্দরে নৌবাহিনীর ডুবুরীদের হামলা হয়েছে। সড়ক, রেলপথ ও সেতু ধ্বংস করা হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। (১০খঃ পৃঃ ২৮) উল্লেখ এই সময় পাকবাহিনী পশ্চিম পাক ভারত সীমান্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করে। উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
-আওয়ামী লীগের কমিটি সদস্য এম রেজাউল মালিক পাকবাহিনীর হাতে বন্ধীহন। পাকবাহিনীর হাতে অমানুষিক অত্যাচারের শিকার হন। নাখালপাড়ার এম পি হোষ্টেল তখন যারা জিজ্ঞাসাবাদ, শারিরীক এবং মানসিক নির্যাতন সয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ, শহীদ জুয়েল, জালালসর্দার (বরিশাল আঃলী নেতা), মাকসুদ আলী বাদল, আব্দুল সাত্তার কালু, ক্যাপ্টেন (অবঃ)সৈয়দ সুজাউদ্দিন, শমসের মোবিন চৌধুরী।
-শিমলায় এক জনসভায় বক্তৃতাকালে ভারতের প্রধামন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে শরণার্থী চলে আসছে তাতে এশিয়া মহাদেশে শান্তির প্রশ্নে এক বিরাট ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পাকিস্তান এক মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত প্রস্তুত
-৩ নম্বর সেক্টরের এক্সপ্লোসিক গেরিলা গ্রুপের কমাণ্ডার নূরুল আনোয়ার ঢাকায় টিএণ্ডটি কলোনী থেকে অস্ত্রসহ পাক বাহিনী হাতে ধরা পড়েন। পাকবাহিনী নির্ম্মম অত্যাচারের শিকার হন।
-ঢাকা সফররত পিপলস পার্টি প্রতিনিধি দলের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সাক্ষাৎ করে নিজেদের পিপিপিতে যোগদান ও পিপিপির টিকেটে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। পিপিপি প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ কারীদের মধ্যে রয়েছেন। পিডিপির সাবেক প্রাদেশিক প্রধান আব্দুস সামাল খান, কাইয়ুম লীগেও কাজী কাদের, লীগের হাশিম উদ্দিন, মস্কোপন্থী ন্যাপের আহমেদুল কবির ও মিয়া মনসুর আলী এবং ভাসানী ন্যাপের আনোয়ার জাহিদ।
-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ ঢাকা নগরীর কয়েকটি মুক্তিবাহিনীর বোমা হামলায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিধ্বস্ত। কুমিল্লার শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনীর গোলাবর্ষণ। উল্লখ্য এই সময়ে মধ্যে সীমান্ত এলাকায় ৬ হাজার বর্গমাইল মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্বে এসে গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সেতু, রেললাইন, এবং পাকবাহিনীর ৪০০ অফিসার, ৫০০০ সেপাই অকালে খতম হয়।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী