দৈনিক মিল্লাত
৩১শে জুলাই ১৯৫৮
১৪৪ ধারার যাতাকলে আওয়ামী লীগের কণ্ঠরােধের অপচেষ্টা
কালাকানুনের প্রতিবাদে জনসভা অনুষ্ঠানের আবেদন নামঞ্জুর
পরিস্থিতি বিবেচনার জন্য মুজিবর কর্তৃক ওয়ার্কিং কমিটির সভা আহ্বান
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (বুধবার) এক বিবৃতিতে বলেন যে, নিবর্তনমূলক আটক অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আগামী ১লা আগস্ট পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য কর্তৃপক্ষ সমীপে আবেদন করা হইলে তাহা অজ্ঞাত কারণে নামঞ্জুর করা হয়। শেখ মুজিবর রহমান প্রকাশ করেন যে, পরপর দুইবার আবেদন করিয়াও কোন ফল পাওয়া যায় নাই। অপরপক্ষে অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহকে পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, অগণতান্ত্রিক নিবর্তনমূলক আটক অর্ডিন্যান্সের প্রতিবাদ করার জন্য আওয়ামী লীগের তরফ হইতে আমি আগামী ১লা আগস্টে “নিবর্তনমূলক অর্ডিন্যান্স বিরােধী দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানাই। এই উপলক্ষে উক্ত দিন অপরাহ্নে পল্টন ময়দানে একটি জনসভাও আহ্বান করি। শহরে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় জনসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি লাভের জন্য আমাকে আবেদন করিতে হয়। কিন্তু, আবেদনে জনসভা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য উল্লেখিত হয় নাই, এই অজুহাতে আবেদন নামঞ্জুর করা হয়, যদিও তাহারা নিবর্তনমূলক অর্ডিন্যান্স বিরােধী দিবসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত রহিয়াছেন। যাহা হউক, সভার উদ্দেশ্য উল্লেখ করিয়া আমি পুনরায় আবেদন করি। কিন্তু, অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সামান্য কারণে এবারেও আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এখানে ইহা স্মরণযােগ্য যে, প্রদেশে ১৯৩ ধারা জারী হইবার পর প্রতিবাদে আমরা পল্টন ময়দানে একটি জনসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত করি। কিন্তু, আমাদের জনসভা বন্ধ করার জন্য ১৪৪ ধারা জারী করা হয়, যদিও সভা অনুষ্ঠানের জন্য আমরা পূর্বাহ্নেই অনুমতি লাভ করিয়াছিলাম। এইবারও যখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহকে পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদান করা হয়, তখন আওয়ামী লীগ জনসভা অনুষ্ঠানের অনুমতি লাভে বঞ্চিত হয়। কোন অদৃশ্য হস্তের ইংগিতে এসব হইতেছে তাহা আমরা বুঝিতে পারিতেছি না। আমি সরকারের এই কার্যের নিন্দা করিতেছি। যদি অবস্থা এই ধরনেই চলিতে থাকে তাহা হইলে পরিস্থিতি মােকাবিলার জন্য বেদনাদায়কভাবে হইলেও আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হইব।
আমি এতদ্বারা অদ্য (বৃহস্পতিবার) বৈকাল পাঁচ ঘটিকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরী সভা আহ্বান করিতেছি। উক্ত সভায় এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইবে।