সংবাদ
৮ই জুলাই ১৯৫৮
অবিলম্বে ১৯৩ ধারার শাসন প্রত্যাহার দাবী
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জনসভায় জনাব সােহরাওয়ার্দীর বক্তৃতা
প্রধানমন্ত্রীকে পূর্বদেশের অবস্থা প্রত্যক্ষ করার আহবান শেখ মুজিবের বক্তৃতা
ঢাকা, ৬ই জুলাই (এপিপি)।- আওয়ামী লীগ নেতা জনাব সােহরাওয়ার্দী অদ্য অপরাহ্নে নারায়ণগঞ্জের এক জনসভায় বক্তৃতাদানকালে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টের শাসন প্রবর্তন করিয়া “গণতন্ত্রের প্রতি মারাত্মক আঘাত হানা হইয়াছে।” জনাব সােহরাওয়ার্দী ১৯৩ ধারা প্রত্যাহার করিয়া অবিলম্বে আতাউর রহমানের নেতৃত্বে পুনরায় পার্লামেন্টারী সরকার গঠনের জন্য কেন্দ্রের নিকট আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব মজিবুর রহমান। জনাব সােহরাওয়ার্দী আরাে বলেনঃ তাহারা যে ১৯৩ ধারা প্রত্যাহারের দাবী জানাইতেছেন, তাহার অর্থ এই নয় যে, ক্ষমতা লাভের জন্য তাহারা বিশেষভাবে উদগ্রীব হইয়া পড়িয়াছেন। তাহারা ১৯৩ ধারা প্রত্যাহারের দাবী জানাইতেছেন তাহার কারণ হইতেছে ইহার দ্বারা গণতন্ত্রের উপর মারাত্মক আঘাত হানা হইয়াছে। তিনি বলেন, “আমি গ্যারান্টি দিয়া বলিতে পারি যে, ক্ষমতার বাহিরে থাকিলেও আমরা আগামী সাধারণ নির্বাচনে একটি আসনও হারাইব না।” ১৯৩ ধারা প্রত্যাহারের পর জনাব আতাউর রহমানকে পুনরায় প্রদেশের মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানান হইবে বলিয়া প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে বিবৃতি দান করিয়াছেন, তাহার উল্লেখ করিয়া জনাব সােহরাওয়ার্দী বলেন যে, ইহা অত্যন্ত সােজা কথা যে, ১৯৩ ধারা প্রত্যাহারের পর জনাব আতাউর রহমানকেই মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আহ্বান জানান হইবে- কারণ পরিষদে তাহার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রহিয়াছে। জনাব সােহরাওয়ার্দী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই উক্তির দ্বারা ন্যায় ও সাধারণ জ্ঞান এবং শাসনতন্ত্র অনুসারে যাহা সত্য, তাহাই প্রকাশ করিয়াছেন মাত্র। এই বিবৃতির দ্বারা প্রধানমন্ত্রীর কোন পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ পায় নাই।
বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করিয়া আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান লইয়া যে সন্দেহের সৃষ্টি করিয়াছে, দ্রুপ জনসাধারণ রাস্তাতে রাস্তাতে দাবী করিতেছে, কিন্তু জনসাধারণ যদি ঠিক পথে চলে, তবে যথাসময়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবেই হইবে। জনাব সােহরাওয়ার্দী দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলেন, আজ ১১ বৎসরে ভারতে দুইবার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে এবং তাহারা তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হইতেছে। কিন্তু পাকিস্তানে একবারও সাধারণ নির্বাচন হয় নাই।
আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করিয়া দিয়া বলেন যে, মুসলীম লীগ ও জামাতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ পৃথক নির্বাচন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রস্তাব চালাইতেছে।
শেখ মুজিবের বক্তৃতা
জনাব মুজিবুর রহমান তাঁহার বক্তৃতায় বলেনঃ মুসলিম লীগের শাসন আমলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম অবিচার করা হইয়াছে। মুসলিম লীগের সুদীর্ঘ শাসনকালে করাচীতে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তােলা হইয়াছে; কিন্তু দুর্ভাগ্য পূর্ব পাকিস্তানে একটিও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিতে দেওয়া হয় নাই। কেন্দ্রের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করিয়া জনাব শেখ মুজিব বলেন, পঞ্চাশ পঞ্চাশ ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানকে যদি সমান ভাগ না দেওয়া হয়, তবে জনসংখ্যারভিত্তিতে অংশ দেওয়ার দাবী জানাইব এবং কি করিয়া ইহা উসুল করিতে হয়, তাহা আমাদের জানা আছে।