দৈনিক মিল্লাত
১৪ই জুন ১৯৫৮
যথাসময়ে নির্বাচন না হইলে বিপ্লব হইবে
জনগণ কারসাজি বরদাশত করিবে না
পল্টনের বিপুল জনসমাবেশে আওয়ামী প্রধান জনাব সােহরাওয়ার্দীর বক্তৃতা
স্বচ্ছ ও সত্যের রাজনীতির জন্য আওয়ামী লীগের মরণপণ সংকল্প ঘােষণা
নির্বাচনী প্রশ্নে ইসলামের নামে লীগ ও মওদুদী গােষ্ঠীর ঘৃণ্য ভূমিকা বিশ্লেষণ
গতকল্য (শুক্রবার) পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিককালের বৃহত্তম জনসভায় আওয়ামী লীগ প্রধান জনাব সােহরাওয়ার্দী বলেন, যথাসময়ে সাধারণ নির্বাচন না হইলে বিপ্লব শুরু হইয়া যাইবে। নির্বাচন পিছাইয়া দিবার কারসাজি জনসাধারণ সহ্য করিবে না। বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর না হইলে শাসন কার্য্যের অগ্রগতি সম্ভব নহে, আর কেবলমাত্র নির্বাচনই এই অনিশ্চয়তা দূর করিয়া স্থায়িত্ব আনয়ন করিতে পারে।
পৃথক নির্বাচনের ধ্বজাধরীদের স্বরূপ উদঘাটন করিয়া জনাব সােহরাওয়ার্দী বলেন যে, সামান্য নির্বাচনের জন্য ইহারা ইসলামকে বিক্রয় করিতেছে। মুসলিম লীগ নেতারা গণপরিষদের মারী অধিবেশনে যুক্তনির্বাচনের সমর্থনে স্বাক্ষরদান করিয়াছিলেন, অথচ আজ মতলব হাসিলের জন্য ইসলামের নামে পৃথক নির্বাচনের প্রচারকার্য চালাইতেছেন। মওদুদীগােষ্ঠী সম্পর্কে আওয়ামী নেতা বলেন, যে মওলানা মওদুদী ১৯৪৬ সনে কায়েদে আজমকে কাফের, পাকিস্তানকে কুফরীস্তান এবং কাশ্মীরের জেহাদকে কুফরীর সহায়তা বলিয়া ফতােয়া দিয়াছিলেন, আজ তাঁহার মুখে পাকিস্তানের আদর্শের বুলি শােভা পায়না- পাকিস্তানের আদর্শ সম্পর্কে কোন কিছু বলার অধিকার তাহার নাই। আওয়ামী লীগের ভিত্তি, আদর্শ ও নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “গরীব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ গরীবের তথা জনগণের মহব্বতের উপরই ভরসা করে। মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলের ন্যায় মিথ্যা ও বেঈমানীর রাজনীতি আমরা করি না। আমরা পরিষ্কার। রাজনীতি, সত্যের রাজনীতি এবং নীতির রাজনীতি করিতেছি এবং করিব। এইজন্য প্রয়ােজন হইলে আমরা প্রাণ দিব এবং এই জন্য আমাদের জয় হইবেই।”
সমবেত জনসমুদ্র হর্ষধ্বনি করিয়া তাহাদিগকে স্বাগত জানায়। গতকল্যকার জনসভায় আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান, জনাব জহিরুদ্দীন আহমদ এবং মওলানা আসাদুল্লাহ সিরাজীও বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী তাহার হাস্যরস পরিপূর্ণ বক্তৃতায় লীগ ও তথাকথিত ইসলাম দরদীদের স্বরূপ বর্ণনা করিয়া বলেন যে, আমাদের একমাত্র দাবী পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যাবতীয় সম্পদের সমবণ্টন। এই দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই করা সম্ভব নয়।