২৬ আশ্বিন ১৩৭৮ বুধবার ১৩ অক্টোবর ১৯৭১
-দিনাজপুর রনাঙ্গনের এক যুবক্যাম্পে তিনহাজার শিক্ষাপ্রাপ্ত মুক্তিবাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রধামন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ বলেন যে, বাংলায় জাগৃতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান প্রচারিত বাঙালী জাতীয়াবাদ রক্ষা এবং হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ জল্লাদ পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে এক মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে এবং তাঁদের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন সমাগত প্রায়। (সাপ্তাহিক জয় বাংলা ২২/১০/৭১)
-নয়াদিল্লীতে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের আলোচনার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, পাকিস্তানকে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথেই এ ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে।
-সুনামগঞ্জের উত্তরে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দু’টি পৃথক সংঘর্ষ হয়। প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা দ’ভাবে বিভক্ত হয়ে সীমান্তের আধা মাইল ভেতরে ঢুকে পাক-সেনাদের ঘাটিতে হামলা চালায়। সংঘর্ষ কালে মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন আব্বাস শহীদ হন।
-Prime Minister Indira Gandhi said whether or not there would be a war between Idna and Pakistan depended on Pakistan. She also said that a solution acceptable to the leaders of Bangladesh and elected representatives of the Awami League would be acceptable to India. Yahya Khan’s legal adviser and head of the so-called constitutional making body of Pakistan Mr. A.R Cornelius has tendered his resignation .Mr. Meiriz Mohd Khan,
Secretary, Karachi of Pakistan people’s party admits Rajakar terror in East Bengal and wholesale massacre of opponent. Bhutto says Pakistan must stop killing of Pakistanis by Pakistanis. (সংবাদপত্র)
-টঙ্গীর অদূরে রেলগাড়ী সমেত রেল-ব্রীজের ধ্বংস সাধন করে মুক্তিবাহিনী। এই অপারেশন থেকে দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা মুক্তিবাহিনী ধ্বংসত্মক ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
-পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্ণর মোনেম খা বনানীর বাসায় মুক্তিবাহিনীর দক্ষ গেরিলাদের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে গুরতর আহত হয়। পরে রাতে হাসপাতালে মোমেন খান মারা যায়। দাফন করা লাশ পাওয়া যায়নি। তিনি ১৩৬২-৬৯ আইয়ুব খান মনোনীত পূর্বপাকিস্তানের গভর্ণর ছিলেন।
-মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করার দায়ে বাঁশখালী থানার (চট্টগ্রাম) মিয়াপাড়া গ্রামের দালালরা বহু দেশপ্রেমিককে আটক করে অকথ্য অত্যাচার করে। মোক্তার মোহাম্মদ পোষ্টমাষ্টার জীবনমৃত অবস্থায় অব্যাহতি পায়। বিমল কান্তি গুহের নাপোড়া গ্রামে অকথ্য অত্যাচার চলে। জনৈক বাসন্তী সতীত্ব রক্ষার জন্য বিষপানে আত্মহত্যা করে।
-সাবেক প্রাদেশিক গভর্ণর আবদুল মোনেম খান সন্ধ্যায় বনানীতে স্বীয় বাসবনে গুলীবিদ্ধ হন। দু’জন মুক্তিযোদ্ধা একটা প্রাইভেট কারে সাবেক গভর্ণের বাসভবনে আসে এবং ড্রইং রুমে ঢুকে ষ্টেনগানের ব্রাশ ফায়ার করে বিনা বাধায় গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মোমেন খান শেষ রাতে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
-সামরিক সরকারের বেসমারিক রাজস্ব মন্ত্রী মওলানা একে এম ইউসুফ রাজাকারদের ভুয়সী প্রশংসা করেন। খুলনায় ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত এক সভায় ভাষণ দেন। উল্লেখ্য মওলানা ইউসুফ প্রথম বাগের হাটে রাজাকার বাহিনী গঠন করে মে মাসে। পরে সামরিক সরকার জুন মাসে রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারী করে।
-পাকবাহিনী ছাতকের অবস্থান আক্রমনের সময় জেড ফোর্স এর তৃতীয় ইষ্ট বেঙ্গলে মেলাসাব সেক্টরে পাঠানো হয়। তৃতীয় ইষ্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর শাফায়েত জামিনের নেতৃত্ব ছিল আলফা, ব্রাভো, চার্লি ও ডেল্টা কোম্পানী নামে চারটি কোম্পানী সেগুলি কমাণ্ড করতেন যথাক্রমে ক্যাপ্টেন মহসিন উদ্দীন ও লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী। জেড ফোর্সের ছাতক অভিযানের সময় ক্যাপ্টেন হেলালের নেতৃত্ব মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। ছাতক আক্রমণের নেতৃত্ব দেন মেজর মীর শওকত আলী ও মেজর শাফায়েত জামিল। এ যুদ্ধে বীরত্ব পূর্ণ ভূমিকার জন্যে ক্যাপ্টেন আকবর হোসেন কে রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া হয়। (মুঃযুঃসুঃ পৃঃ৫৬)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী