You dont have javascript enabled! Please enable it! 1957.05.24 | আওয়ামী লীগে অন্তর্দ্বন্দ ময়দানের মারামারীতে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের উল্কট বিফোরন | সাপ্তাহিক সৈনিক - সংগ্রামের নোটবুক

সাপ্তাহিক সৈনিক
২৪শে মে ১৯৫৭
আওয়ামী লীগে অন্তর্দ্বন্দ ময়দানের মারামারীতে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের উল্কট বিফোরন
বগুড়ায় ভাসানী সমর্থক ও বিরােধী দলের মধ্যে সংঘর্ষে ৯ জন আহত
ইত্তেফাক কর্তৃক ভাসানীর নূতন দল গঠনের সংবাদ পরিবেশন
রণক্ষেত্রে অবতরণের জন্য শেখ মুজিবর রহমানের পাঁয়তারা

সম্প্রতি বগুড়ার একটি জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দুইটি দলের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ৯ জন আহত হইয়াছে। ভাসানী সমর্থক এবং ভাসানী বিরােধী বলিয়া কথিত আওয়ামী লীগের দুইটি উপদলের মধ্যে এই সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। উত্তর বঙ্গ কৃষক সম্মেলন উপলক্ষে বগুড়ায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান জনাব আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতির ভাষণদানকালে এই সংঘর্ষ অনুষ্ঠিত হয় বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। জনাব ভাসানী বক্তৃতা দিতে শুরু করিলে আওয়ামী লীগের ভাসানী বিরােধী উপদল কাগমারী সম্মেলন সম্পর্কে ভাসানীকে কতকগুলি প্রশ্ন করেন। ইহাতে চটিয়া যাইয়া ভাসানী সমর্থক দল তাহাদের বসাইয়া দিতে চেষ্টা করার ফলেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযােগ্য যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির সভাপতিত্বে উত্তরবঙ্গ কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইলেও পূর্বাহ্নে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবর রহমান কৃষক সম্মেলনের সহিত আওয়ামী লীগের কোন যােগাযােগ নাই বলিয়া ঘােষণা করেন। ফলে কৃষক সম্মেলনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের ভাসানী বিরােধী উপদল কর্তৃক বগুড়ায় কৃষক সম্মেলনের বিরুদ্ধে ইশতেহার পােষ্টার ও মাইকযােগে প্রচার করিতে থাকে। আওয়ামী লীগের ভাসানী বিরােধী দল এবং আওয়ামী লীগের ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ অফিসের নির্দেশ অনুসারে কৃষক সম্মেলনের জোর বিরােধীতা শুরু করে। পক্ষান্তরে গণতন্ত্রীদল, যুবলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়ন কৃষক সম্মেলন সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য এবং ভাসানী নেতৃত্বকে। জনপ্রিয় ও জোরদার করিবার অভিপ্রায়ে কাজ করিতে থাকে।
অফিসিয়াল আওয়ামী লীগের প্রচারের প্রধান বাহন দৈনিক ইত্তেফাক খবর দিয়াছেন যে, জনাব ভাসানী কৃষক সমিতি নামে একটি নৃতন প্রতিষ্ঠান গঠন করিবেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে ভাসানী সমর্থক কমুনিষ্ট প্রভাবিত ধর্মনিরপেক্ষবাদী উপদলটি আওয়ামী লীগ দখল করিতে সমর্থ না হইলে জনাব ভাসানীর নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করিবেন বা ধর্মনিরপেক্ষবাদী অন্য কোন দলে সদলবলে যােগদান করিবেন। কৃষক সমিতি গঠন ইহারই প্রাথমিক পদক্ষেপ বলিয়া মনে হয়। শ্রেণী সংগঠনের ভাওতা দিয়া বর্তমানে ভাসানী দল ব্যাপক আকারে কৃষক সমিতি গঠনে তৎপর হইবেন এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সুবিধা করিয়া উঠিতে না পারিলে কৃষক সমিতিকে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দল রূপে খাড়া করিবেন। এই ব্যাপারে ভাসানী সমর্থক উপদলের সহিত জোট পাকাইয়াছেন গণতন্ত্রী দল, যুবলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, বগুড়া কৃষক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কোন নেতা যােগদান না করিলেও গণতন্ত্রীদলের সভাপতি এবং অনুরূপ অন্যান্য নেতা উপনেতারা কৃষক সম্মেলনে যােগদান করেন।
কাগমারী সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব যেভাবে চরম আকারে আত্মপ্রকাশ করে তাহাতে বগুড়ার ঘটনাকে সুবিধাবাদী রাজনীতির স্বাভাবিক পরিণতি বলিয়া পর্যবেক্ষক মহল অভিমত প্রকাশ করিতেছেন।
পৃথক নির্বাচন আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের উভয় উপদল এবং অন্যান্য ধর্ম নিরপেক্ষবাদী চক্রের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণতন্ত্রী শিবির পৃথক নির্বাচনের দাবীদারদের উপর যে জঘন্য হামলা চালাইয়াছিল, আজ সময়ের পরিবর্তনে সুবিধাবাদী রাজনীতির স্বাভাবিক পরিণতিতে তারাই তথাকথিত গণতন্ত্রী শিবিরের মধ্যে মারামারিতে পর্যবেশিত হইয়াছে। যে গুণ্ডামী একদা তাহারা অন্যের উপর করিত আজ তাহারা নিজেরাই নিজেদের সেই গুণ্ডা ঐতিহ্যের শৃঙ্খলে আটকা পড়িয়াছে। ইহা শুধু অদৃষ্টের নির্মম পরিশােধ নয়, বাস্তবতার অমােঘ বিধান।
জনাব শেখ মুজিবর রহমান বলিয়াছেন যে, তিনি শীঘ্রই মন্ত্রীত্ব ছাড়িতেছেন। তাঁহার এই মন্ত্রীত্ব ত্যাগ দল রক্ষার খাতিরেই। প্রকাশ মন্ত্রীত্ব ত্যাগে তাহাকে রাজী করাইতে অফিসিয়াল আওয়ামী লীগের যথেষ্ট বেগ পাইতে হইয়াছে এবং মন্ত্রীত্ব চলিয়া গেলেও তাহারা শেখজীকে বিকল্প অনেক সুবিধা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। জনাব মুজিবরও দল রক্ষার এবং ভবিষ্যতে নিশ্চয়তার অন্য কোন উপায় না দেখিয়া অবশেষে মন্ত্রীত্ব ত্যাগে রাজী হইয়াছেন। জনাব মুজিবর মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করিয়া পুর্ণদ্যোমে সেক্রেটারীর কাজ শুরু করিলে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই উপদলের মধ্যে চরম সংঘর্ষ শুরু হইবে বলিয়া ওয়াকেবহাল মহলের অভিমত। প্রকাশ ভাসানী সমর্থক দল সম্পর্কে অফিসিয়াল আওয়ামী লীগ কঠোর মনােভাব গ্রহণ করিবে। মন্ত্রীত্ব ত্যাগের পর জনাব মুজিবরের দায়িত্ব হইবে আওয়ামী লীগ হইতে ভাসানী সমর্থকদের প্রভাব দূর করা এবং এই দায়িত্বভার গ্রহণ করিয়া অফিসিয়াল আওয়ামী লীগ প্রধানের আর্শীবাদ লইয়া জনাব শেখ মুজিবর রহমান রণক্ষেত্রে ঝাপাইয়া পড়ার পাঁয়তারা করিতেছেন। রণদামামা ইতিমধ্যেই বাজিয়া উঠিয়াছে, কাগমারী বগুড়ায় ইতিমধ্যে ছােটখাট সংঘর্ষও সংঘটিত হইয়াছে। কিন্তু লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফলাফল দেখিবার জন্যই আজ জনসাধারণ আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করিতেছে।