You dont have javascript enabled! Please enable it! 1957.02.10 | শেখ মুজিবের বক্তৃতা | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
১০ই ফেব্রুয়ারী ১৯৫৭
শেখ মুজিবের বক্তৃতা

কথায় কর্ণপাত করেন নি। অতঃপর পূর্ব বাংলায় ফিরে আমি ও পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান ব্যাপক সফরে বের হই। প্রায় চার মাস কাল ব্যাপক সফরের ফলে প্রায় প্রত্যেকটি জেলা ও মহকুমার আওয়ামী লীগের ইউনিট গড়ে উঠে। এ সময় জেলের অভ্যন্তরে শ্রদ্ধেয় নেতা মওলানা ভাসানী ও জনাব শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে জনাব সােহরাওয়ার্দী পূর্ব বঙ্গে আসেন এবং জেলখানায় মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অতঃপর এক ব্যাপক সফরে তিনি প্রদেশে একাধিকক্রমে ৩৪টি সভায় বক্তৃতা করেন। তার এই সফরের ফলে রাজবন্দীদের মুক্তির আন্দোলন দুর্বার হয়ে উঠে। তাঁর সভায় হাজার হাজার লােক জমায়েত হয়। রাজবন্দীদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক শাসন দাবী করে সর্বত্র প্রস্তাবাদি গৃহীত হয়। প্রচণ্ড গতিতে আমাদের সংগঠনী কার্য চলতে থাকে। মওলানা ভাসানী ও সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কমিগণ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লাে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে থানায় থানায় শহরে বন্দরে সর্বত্র আওয়ামী লীগ গড়ে উঠলাে নির্বাচিত জনগণের আপন প্রতিষ্ঠান হিসেবে।
দীর্ঘ সাত বৎসরাধিককাল ফ্যসিস্ট শাসন পরিচালনা করার পর জনমতের চাপে বাধ্য হয়ে লীগ সরকার ১৯৫৪ সালে সাধারন নির্বাচন হবে বলে ঘােষণা করলেন। সেমসয়ে জনাব ফজলুল হক সাহেব পূৰ্ব্ব বাংলার এডভােকেট জেনারেল। তিনি ঢাকা জেলে মওলানা সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনকালে আওয়ামীলীগে যােগদান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে চাঁদপুরে এক বিরাট জনসভায় তিনি একথা জনসমক্ষেও ঘােষণা করেন। বলাবাহুল্য তিনি তার স্বভাবসুলভ নীতি অনুযায়ী তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।
দীর্ঘ ২৩ মাস কাল বিনা বিচারে আটক থাকার পর মওলানা সাহেবকে ১৯৫৩ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৫৩ সালেরই অক্টোবর মাসে নব সংগঠিত জনাব সােহরাওয়ার্দী কাউন্সিলের যে প্রথম প্রতিনিধিত্বমূলক সভা হয় তাতে আমি সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হই। এ সভায় আমি আওয়ামীলীগকে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব করি। এ ব্যাপারে আমি আমার নিজ মত ব্যক্ত করা প্রসঙ্গে বলি যে, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর ও সত্যিকার পাকিস্তান জাতি গঠনের জন্য আওয়ামীলীগকে অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান করা প্রয়ােজন। আমাদের কিছু সংখ্যক সহকর্মী ও পুৰ্ব্ব বাংলার জনসাধরণ যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য প্রস্তুত তা সেদিন বুঝতে পারেনি বলে এ প্রস্তাবের বিরােধিতা করেন। জনাব মওলানা ভাসানী আমাদের এ প্রস্তাব অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন করেন। বহু আলােচনার পর এ ব্যাপারে জনমত যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার মওলানা সাহেবের উপর ন্যস্ত করা হয়।
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে। দেশের যুবশ্রেণীর সম্মিলিতভাবে নিৰ্বাচন যুদ্ধে লীগ শাহীর মােকাবেলা করার দাবি জ্ঞাপন করেন। ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত ১৭ ও ১৮ই নবেম্বর তারিখে আওয়ামীলীগ কাউন্সিল সভায় সাধারন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলিম লীগ সরকারের মােকাবেলা করার দাবি উত্থিত হয়। প্রয়ােজনবােধে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিয়ে লীগ বিরােধী যুক্তফ্রন্ট গঠনের ক্ষমতা জনাব মওলানা ভাসানী ও জনাব সােহরাওয়ার্দীর উপর …।