You dont have javascript enabled! Please enable it! 19563.09.12 | সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হইলে পদত্যাগ করিব- করাচীর জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানের উক্তি | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৬
সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হইলে পদত্যাগ করিব
করাচীর জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানের উক্তি

করাচী, ১১ই সেপ্টেম্বর।- পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্য শেখ মুজিবর রহমান অদ্য এখানে ঘােষণা করেন যে, সুযােগ দেওয়া হইলে আওয়ামী লীগ খাদ্য সমস্যার সমাধান, দুর্নীতির মূলােচ্ছেদ, মােহাজের পুনৰ্ব্বসতি এবং সকলের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করিবে। আরামবাগে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি এই ঘােষণা করেন। কায়েদে আজমের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাশেষে এক মশাল শােভাযাত্রা কায়েদে আজমের মাজারে যায়। জনাব মুজিবর রহমান তাহার বক্তৃতায় ভাঙ্গা-ভাঙ্গা উরদুতে বলেন যে, তাহারা যদি তাহাদের আরদ্ধকাৰ্য্য সমাধানে ব্যর্থ হন অথবা দেশবাসী যদি তাহাদের না চায়, তবে তিনি নিজে পদত্যাগ করিবেন এবং দলের নেতা জনাব এইচ, এস, সােহরাওয়ার্দী সহ তাঁহার সহকৰ্ম্মীগণকেও পদত্যাগ করার জন্য চাপ দিবেন। পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের এই তরুণ নেতার এই ঘােষণায় শ্রোতৃমণ্ডলী আনন্দধ্বনি করে ও তাহাকে অভিনন্দন জানায়।
জনাব মুজিবর রহমান আরামবাগের সভায় পৌঁছার পূর্বে কিছু সংখ্যক লােকের দ্বারা সভার কার্য্য দুইবার ব্যাহত হয়। সভাপতি জনাব শিরাজী ১০ মিনিট পর সভায় শান্তি স্থাপনে সমর্থ হন।
করাচী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জনাব ইয়াকুব আজমলী সভায় বলেন যে, পাকিস্তানের জন্য যাহারা সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে জনাব সােহরাওয়ার্দীর স্থান দ্বিতীয়। কায়েদে আজমের পরেই তাহার স্থান। জনাব ইয়াকুব আজমলীর এই মন্তব্যে সভায় তুমুল প্রতিবাদ উত্থিত হয়। সকলে তাহাকে খােলাখুলিভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করিতে ও মরহুম লিয়াকত আলী খানের স্মৃতির প্রতি যথােচিত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিতে বাধ্য করে। কয়েক মিনিট পর সভার শামিয়ানার উপর হইতে আওয়ামী লীগ পতাকা অপসারণের দাবী জানাইয়া স্লোগান উত্থিত হয় এবং আওয়ামী লীগ পতাকা অপসারিত হওয়ার পর শ্রোতৃমণ্ডলী শান্ত হয়। ভাবী উজিরে আজম জনাব এইচ, এস, সােহরাওয়ার্দী এই সভায় যােগদান করেন নাই। জনাব মুজিবর রহমান তাহার বক্তৃতায় দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও সরকারগণকে দলাদলি ভুলিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন জানান। তিনি বলেন, আজ আমাদের শুধু স্মরণ করিতে হইবে যে, আজ কায়েদে আজমের মৃত্যুবার্ষিকী। যে কায়েদে আজম সাধারণ লােকের কল্যাণের জন্য শুধু একটি বিশিষ্ট শ্রেণীর জন্য নয়—এই পাকিস্তান আনয়ন করিয়াছেন। তিনি বলেন, দেশের সরকার কোন বড় কথা নয়। কারণ গণতান্ত্রিক দেশে সরকার প্রায়ই পরিবর্তন হয়। দেশ ও দেশবাসীই হইল আসল, কারণ এই দুইটি চিরকাল থাকিবে। তিনি বলেনঃ ইহা বড়ই দুঃখের বিষয় যে, যে সাধারণ লােক পাকিস্তানের জন্য সৰ্ব্বস্ব ত্যাগ করিয়াছে, তাহারাই চরম দুঃখকষ্ট ভােগ করিতেছে এবং বিশিষ্ট লােকেরা ফল ভােগ করিতেছে।
জনসাধারণের শােচনীয় অবস্থা
দেশের উভয় অংশেই সাধারণ লােক আজ অনশন করিতেছে এবং উপযুক্ত আশ্রয় ও বস্ত্র পাইতেছে না। পূর্ব পাকিস্তানীদের অবস্থা আজ খুবই শােচনীয়। সেখানে বর্তমানে চাউলের দর প্রতিমণ ৪০-৫০। গ্রামবাসীরা খাদ্যের জন্য সন্তান বিক্রয় করিতেছে। তিনি বলেন, তিনি ও তাঁহার দল বরাবর ইহাই বলিয়া আসিতেছেন যে, সাধারণ লােকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাই হইল সৰ্ব্বাগ্রে প্রয়ােজন। ইহা ছাড়া দেশের অগ্রগতি কখনই সম্ভব নয়। দুর্নীতি।
অতঃপর দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইহাও দেশের অগ্রগতি এতদিন ব্যাহত করিয়াছে। তিনি বলেন যে, প্রত্যেকটি দুর্নীতিপরায়ণ লােককে অবিলম্বে জেলে বদ্ধ করিতে হইবে এবং সম্ভব হইলে বেত্রাঘাত করিতে হইবে। শেখ মুজিবর রহমান কায়েদে আজমের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং দেশবাসীকে কায়েদে আজমের আদর্শ অনুসারে কাজ করিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন জানান।