You dont have javascript enabled! Please enable it! 1956.06.02 | খাদ্য সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা বন্ধ করাই ১৪৪ ধারা জারির উদ্দেশ্য- কেন্দ্রীয় কোয়ালিশন সরকারের মনােভাব সম্পর্কে শেখ মজিবরের বিবৃতি | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
২রা জুন ১৯৫৬
খাদ্য সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা বন্ধ করাই ১৪৪ ধারা জারির উদ্দেশ্য
কেন্দ্রীয় কোয়ালিশন সরকারের মনােভাব সম্পর্কে শেখ মজিবরের বিবৃতি
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মজিবর রহমান
গত পরশু (বৃহস্পতিবার) সংবাদপত্রে এক বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেনঃ “খাদ্য পরিস্থিতি এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলােচনার জন্য ১লা জুন জনসভা অনুষ্ঠানের কথা ঘােষণা করার পর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সহিত সাক্ষাৎ করার জন্য জনাব আতাউর রহমান এবং আরও কয়েকজন সহ আমি কাগমারী গমন করি এবং গতকল্য রাত্রি ৯টায় রাজধানীতে প্রত্যাবর্তনের পর এখানে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হইয়াছে শুনিয়া আমি বিস্মিত হইয়াছি। স্পষ্টতঃ খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আলােচনা বন্ধ করার জন্যই ১৪৪ ধারা জারি করা হইয়াছে। সরকারি ইশতাহারে খাদ্য সমস্যা সম্পর্কে যে পরােক্ষ উল্লেখ রহিয়াছে, তাহা হইতে কেন্দ্রের ‘যুক্তফ্রন্ট’-মুসলিম লীগ কোয়ালিশন সরকারের মনােভাব পরিষ্কার হইয়া উঠিয়াছে। বর্তমানে এই কোয়ালিশন সরকার শাসনতন্ত্রের ১৯৩ ধারা অনুযায়ী প্রদেশে শাসনকার্য পরিচালনা করিতেছেন। “এইভাবে জাতির কণ্ঠরােধ করিয়া ‘যুক্তফ্রন্ট’-মুসলিম লীগ সরকার নিজেদের দুষ্কর্মের প্রায়শ্চিত্ত নিজেরাই ডাকিয়া আনিতেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সাত বৎসর যাবৎ মুসলিম লীগ সরকার এখানে অনুরূপ কাজ করে এবং ইহাতেই তাহারা ধ্বংস হইয়া যায়। আজ ক্ষমতাসীন কোটা বীর পক্ষে এ কথা মনে করা সহজ যে, কোনরূপ শঙ্কা ব্যতিরেকে জনগণের উপর উৎপীড়ন, অত্যাচার ও দমনপীড়ন চালান যায় এবং তাহাদের কণ্ঠরােধও করা যায়। কিন্তু জনগণ একদিন তাহাদের বিরুদ্ধে। রুখিয়া দাঁড়াইবেন। তাই তাহাদিগকে পথে দাড়াইতে হইবে। “বুরােক্রেসির চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতি ও রাজনীতিকদের ত্রুটি ধরিতে শুরু করিয়াছেন। কিন্তু শুধু রাজনীতিকগণই দেশকে বাঁচাইতে পারেনআমলাতন্ত্র নহে। কারণ আমলাতন্ত্রের শাসনকর্তাগণ জনগণের দুঃখ কষ্ট এবং তাহাদের মনােভাব কখনই বুঝিতে পারেন না।
“আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ গত সেপ্টেম্বর মাস হইতে খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করিয়া আসিতেছেন। কিন্তু ‘যুক্তফ্রন্ট সরকার সেদিকে কর্ণপাত করেন নাই। এখন তাহারা স্বীকার করিয়াছেন যে, প্রদেশে ১০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি রহিয়াছে। এখন চারদিক হইতে অনাহার এবং অনাহারে মৃত্যুর খবর আসিতে দেখিয়া তাহারা বিভিন্ন দেশ হইতে খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করিতেছেন। খাদ্য আসিয়া পৌছিলেও পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাইতেছে। অথচ জনগণকে তাহাদের দাবী উত্থাপনের সুযােগ দেওয়া হইতেছে না।