You dont have javascript enabled! Please enable it! 1956.05.20 | আওয়ামী লীগ কাউন্সিল -ঢাকায় দুই দিবসব্যাপী অধিবেশন আরম্ভ | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক আজাদ
২০শে মে ১৯৫৬
আওয়ামী লীগ কাউন্সিল
ঢাকায় দুই দিবসব্যাপী অধিবেশন আরম্ভ

(স্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (শনিবার) সকালে স্থানীয় রূপমহল সিনেমা হলে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জনাব আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের দুই দিনব্যাপী অধিবেশন আরম্ভ হয়। ৬৫০ জন কাউন্সিলারের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ। মুজিবর রহমান তাহার রিপাের্টে বলেনঃ বন্যা পূৰ্ব্ব পাকিস্তানীদের জীবনে নুতন নয়। কিন্তু বিজ্ঞান সমৃদ্ধ ও সম্পদ বলিষ্ঠ মানুষ অসহায়ের মত আজও প্রকৃতির রুদ্র পীড়ন সহ্য করিবে কিনা ইহাই হইল সবচেয়ে বড় সওয়াল। হােয়াংহাে নদীর প্লাবন, ট্যানিসিভ্যালির তাণ্ডব ও দানিয়ুবের দুর্দৰ্মতাকে বশে আনিয়া যদি মানুষ জীবনের সুখ সমৃদ্ধির পথ রচনা করিতে পারে তবে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মত শান্ত নদীকে আয়ত্ত করিয়া আমরা কেন বন্যার অভিশাপ হইতে মুক্ত হইব না? কেন্দ্রীয় সরকারের স্বীকৃতি অনুসারে বন্যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে ৫ শত কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির পরও পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের বন্যা নিরােধের জন্য কি করা হইয়াছে?
তিনি বলেন যে, বন্যার প্রশ্নকে পিছনে রাখিয়া দুর্ভিক্ষের প্রশ্নে আসিলেও কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের জনবিরােধিতা আরও সুস্পষ্ট। এই কথা আজ অনস্বীকার্য যে, পূর্ব পাকিস্তানের ৬০ হাজার গ্রামের শতকরা ৯৫ জন লােকই অনাহার ও অর্ধাহারে আছে। সহায় সম্বলহীন মানুষের এই অনিবার্য মৃত্যুকে রােধ করিবার কি ব্যবস্থা এই পর্যন্ত প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকার করিয়াছেন? চোরাকারবারী আর সমাজবিরােধীদের গভীর ষড়যন্ত্রের ফলে বুভুক্ষ মানুষের মুখের অন্ন যখন গগনস্পর্শী মূল্যে বিক্রয় হইতেছে তখন উহাকে মানুষের মুখে তুলিয়া দিবার জন্য সরকার কি ব্যবস্থা করিয়াছেন? টেস্ট রিলিফ, বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে চাউল বিতরণের কথা ছাড়া এই পর্যন্ত এই সম্পর্কে সরকার কি কার্যকরী ব্যবস্থা করিয়াছেন? তিনি আরও বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে আজ রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও তাহারা পূর্ব পাকিস্তানকে শােষণ করিয়া চলিয়াছে। জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গঠিত হওয়া সত্ত্বেও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পরই গত বাজেটেও পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের স্বার্থ সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হইয়াছে। এমন কি খসড়া পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও উহা মুৰ্ত্ত হইয়া উঠিয়াছে। ১০০ কোটী টাকা priority-র কথা ঢাকঢােল সহকারে প্রচার করিবার পরও দেখা গেল যে, ১১৬০ কোটী টাকার পরিকল্পনায় পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে মাত্র ৩০০ কোটী টাকা পড়িয়াছে। ১১৬০ কোটী টাকার পরিকল্পনার মধ্যে ৩০০ কোটী টাকা এক তৃতীয়াংশও নয়। পাবলিক সেক্টর ও প্রাইভেট সেক্টর বিচার করিলে দেখা যাইবে প্রাইভেট সেক্টরের ৩৬০ কোটী টাকারও প্রায় সবই পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হইবে। পাবলিক সেক্টরের আটশত কোটীর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০০ কোটী এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ৩৫০ কোটী বাদ দিয়া কেন্দ্র কর্তৃক ব্যয়িত বাকী অংশের ফায়দাও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাগ্যেই জুটিবে।
অদ্য (রবিবার) সকালে কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইবে।