You dont have javascript enabled! Please enable it! 1956.01.21 | ১লা জানুয়ারী হইতে করাচী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী হইবে -সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাদেশিক শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুরের ঘােষণা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
২১শে জানুয়ারি ১৯৫৬
১লা জানুয়ারী হইতে করাচী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী হইবে
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাদেশিক শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুরের ঘােষণা
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উভয় অঞ্চলে অসম অবস্থার সৃষ্টির জন্য প্রাক্তন
কেন্দ্রীয় নীতির সমালােচনা

স্টাফ রিপাের্টার
গতকল্য (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় সেক্রেটারিয়েটে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প সচিব শেখ মুজিবুর রহমান জানান যে, করাচীতে উচ্চপর্যায়ে অনুষ্ঠিত শিল্প সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ আগামী ১লা জানুয়ারী হইতে কার্যকরী হইবে।
জনাব মুজিবুর করাচী অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেন। তিনি জানান যে, বিদেশী মুদ্রার বিলি-বণ্টন সম্পর্কে বিবেচনার জন্য শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকারদ্বয়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইবে। তিনি আনন্দের সহিত ইহা উল্লেখ করেন যে, করাচী সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে যাবতীয় সুপারিশ করা হইয়াছে এবং কেন্দ্রীয় ও পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিগণ সকলেই এই প্রদেশের সমস্যা, প্রয়ােজন এবং অতীতের ত্রুটি সংশােধনের প্রয়ােজনীয়তা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করিয়াছেন। তিনি বলেন, গত নয় বৎসরে বাণিজ্যক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের ভূমিকা বলিতে আর কিছুই থাকে নাই এবং কেন্দ্রে প্রবর্তন সরকারের অনুসৃত নীতির ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়া উভয় অংশের মধ্যে অ-সম অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন:“গত নয় বৎসর ধরিয়া প্রাদেশিক সরকারকে শিল্পের ব্যাপারে প্রায় সকল ক্ষমতা হইতেই বঞ্চিত করা হইয়াছে। এই সময়ের মধ্যে প্রাদেশিক সরকার একে একে তাদের সমস্ত ক্ষমতা এবং দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে সমর্পণ করিয়াছেন। ইহার পরিণতি হিসাবে কেন্দ্রীয় শিল্প নিয়ন্ত্রণ আইন বিধিবদ্ধ হইয়াছে। এই আইনে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ২৭টি শিল্পের ব্যাপারে যাবতীয় ক্ষমতা ও পরিচালন ভার ন্যস্ত করা হইয়াছে। এই ২৭টি শিল্পের আওতায় প্রায় সব কিছুই পড়িয়াছে।” তিনি বলেন, নূতন শাসনতন্ত্র গৃহীত হওয়ার পরেও শিল্পের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রহিয়াছে এবং শিল্প সম্পর্কে শাসনতন্ত্রে উল্লিখিত বিষয়গুলি এখনও কার্যকরী হয় নাই। তিনি বলেন, প্রাদেশিক সরকার তাঁহাদের দায়িত্ব যাহাতে সুচারুরূপে পালন করিতে পারেন সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকার এতদসম্পর্কে শাসনতন্ত্রে উল্লিখিত ক্ষমতা ও দায়িত্বভার বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে করাচীতে উচ্চ পর্যায়ে সম্মেলন আহ্বান করেন। তিনি বলেন, এই প্রদেশে কোন মূলধন সংগঠিত হইতে পারে নাই। ইহার কারণ, এই প্রদেশের জনসাধারণকে এতদসংক্রান্ত সুযােগ-সুবিধা হইতে বঞ্চিত করা হইয়াছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে এই প্রদেশবাসীর ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য। ইহার ফলে এই প্রদেশবাসীর অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই শােচণীয় হইয়া পড়িয়াছে এবং তাহাদের ক্রয়ক্ষমতা আশঙ্কাজনকরূপে হাস পাইয়াছে। বর্তমানে এইরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার অতীতের নীতি পরিবর্তন করিলেও এবং আমরা প্রাণপণে চেষ্টা করিলেও পরিস্থিতির আশু পরিবর্তন সাধিত হওয়া অসম্ভব।
তিনি আশার বাণী উচ্চারণ করিয়া বলেন, আমাদিগকে আশা ও ভরসা রাখিয়া ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রাখিতে হইবে এবং সর্বাত্মক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্প প্রচেষ্টার দ্বারা এই প্রদেশের সাধারণ মানুষের অবস্থার উন্নতিসাধন করিতে হইবে। করাচী সম্মেলনের পক্ষ হইতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কতিপয় বিষয়ের বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশরক্ষার সহিত সংশ্লিষ্ট শিল্পসমূহ কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় হিসাবে গণ্য হইবে বলিয়া সম্মেলনে স্থির করা হইয়াছে। লৌহ ও ইস্পাত প্রস্তুত, জাহাজ নির্মাণ এবং এন্টিবায়ােটিক, সালফাড্রাগস ও এন্টিটি, বি, ভ্যাকসিন প্রস্তুত ইহার অন্তর্ভুক্ত। এতদ্ব্যতীত অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রস্তুত, দেশের সামুদ্রিক সীমানার বাহিরে মৎস্য শিকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান বাদে অন্যান্য যাবতীয় শিল্প প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় বলিয়া গণ্য হইবে। খনিজ তৈল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হিসাবে গণ্য হইলেও প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে পরিচালিত শিল্পগুলি প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় বলিয়া গণ্য করা হইবে। তিনি বলেন, উন্নয়ন পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রদেশে পি, আই, ডি, সি’র কার্যক্ষেত্র ও ভূমিকা প্রসারিত করা হইবে। নয়া ব্যবস্থার ফলে কয়লা, সিমেন্ট, লৌহ ও ইস্পাতের আভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও বণ্টন সম্পূর্ণরূপে প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারের অধীন হইবে। উভয় অঞ্চলে মালপত্র সরবরাহের ব্যাপারে জাহাজ বরাদ্দের ভার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির হাতে থাকিবে। এই কমিটিতে প্রাদেশিক সরকারের প্রতিনিধিও থাকিবে। এই ব্যাপারে প্রয়ােজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জাহাজে স্থানের ব্যবস্থা করা হইবে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ লৌহ প্রস্তর বাদে অন্যান্য খনিজ পদার্থ প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারে থাকিবে। খনিসমূহ নিয়ন্ত্রণ এবং খনিজ সম্পদের উন্নয়ন কার্যও প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারে থাকিবে। প্রদেশের জন্য বরাদ্দকৃত পণ্য আমদানী সম্পর্কে লাইসেন্স মঞ্জুরীর ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারের সুপারিশই চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে। সুপারিশ চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে সরবরাহ উন্নয়ন বিভাগের ডিরেক্টারজেনারেলের অধীনে। এই প্রদেশের জন্য একজন ডিরেক্টার-জেনারেল নিয়ােগ করা হইবে। এই প্রদেশের জন্য একটি ক্ষুদ্র আকারের শিল্প কপোরেশন স্থাপন করা হইবে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের হাতে ১০ লক্ষ টাকা ন্যস্ত করিয়াছেন।