You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.16 | আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ঢাকার ভিতরে ভারতীয় কামান গোলা দাগছে - সংগ্রামের নোটবুক

আনন্দবাজার পত্রিকা
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
‘নিরাপদ এলাকা’ ওঁ খালি বাড়ীতে পাক সৈন্যের ঘাঁটি
ঢাকার ভিতরে ভারতীয় কামান গোলা দাগছে

ভারতীয় পদাতিক সৈন্যরা ঢাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে এসে পৌঁছেছেন। শহরের মহল্লায় মহল্লায় তাঁরা বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর কামান দেগে চলছেন। ওদিকে মিত্রবাহিনী চট্টগ্রাম থেকে আসছেন মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে।

মেঘনার দক্ষিণ তীরে দাউদকান্দি থেকে যেসব পদাতিক বাহিনী আসছিলেন তাঁরা পথের সমস্ত নদীর বাধাই অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছেন। এখন চতুর্দিক থেকেই পদাতিক সৈন্যরা নগরীকে নাগপাশের মত এঁটে ধরেছেন।

বুধবার কলকাতায় একজন সামরিক মুখপাত্র আরও জানান পাকিস্তানী সৈন্যরা আমাদের গোলন্দাজ বাহিনীর মর্টারের গোলার জবাব দিচ্ছে।

খবর পাওয়া গিয়েছে, ঢাকার যে সব অসামরিক লোকজন বাড়িঘর ফেলে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, শত্রু সৈন্যরা তাঁদের পরিত্যাক্ত বাড়িঘরে ঢুকে ঘাঁটি গেড়েছে।

একজন বিদেশী সংবাদ দাতার প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এসব বাড়ীকে সামরিক লক্ষ্য বলে গণ্য করেছেন।

নয়াদিল্লীতে জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেছেন, ঢাকায় দখলদার বাহিনী আত্মরক্ষার এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে। পাক জঙ্গিশাহি তাঁদের সেনাদের ঢাকার নিরপেক্ষ অঞ্চল ওঁ অসামরিক এলাকায় জড়ো করেছে। খান সেনাদের সদর দফতর হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিমান বাহিনীর সদর দফতর করা হয়েছে যক্ষ্মা হাসপাতালে। আর সামরিক পর্যবেক্ষনস্তম্ভের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল। প্রসঙ্গত উল্যেখ্য, এইসব স্থানগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্মি এবং রেডক্রসের নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ এলাকা বলে ঘোষিত হয়েছে।

আমাদের বিমান বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া এক নির্ভর যোগ্য সংবাদে জানা যায় খান সেনারা ঢাকার উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি বাঙ্কারের উপরে অসামরিক লোকদের আটক করে রেখেছে। এর উদ্যেশ্য, ভারতীয় আক্রমণের হাত থেকে আত্মরক্ষা।

কলকাতায় সামরিক মুখপাত্র বলেন, দলে দলে ছাত্রী সৈন্যরা উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ঢাকার ১৮ কিলোমিটার দুরবর্তি জয়দেবপুরের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছেন। অন্যদিকে নরসিংদীর উত্তর পূর্ব দিক থেকে ভারতীয় সেনা ওঁ মুক্তিবাহিনীর আরেকটি দলও দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে আগুয়ান।

মুখপাত্র ঢাকার কাছাকাছি ভারতীয় বাহিনীর অবস্থান স্থলের বিস্তৃত বিবরণ দিতে অস্বীকার করেন।

ময়নামতির প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়েছে

কুমিল্লা খণ্ডে ভারতীয় বাহিনীর প্রবল চাপে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে শত্রুর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়েছে। এখন ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অর্ধেক ভারতীয় নিয়ন্ত্রণে।

ভারতীয় বাহিনী খুলনা শহরের শিরোমণি অঞ্চল মুক্ত করেছেন। বিচ্ছিন্ন পাকিস্তানী সৈন্যরা গত ৫ দিন ধরে এখানে জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় সৈন্যরা খুলনার পথে ইতোমধ্যে নদী ওঁ জলাভূমির বাঁধা অতিক্রম করে ফেলেছেন।

মুখপাত্র বলেন, ভারতীয় সৈন্যরা যশোরের উত্তরে মধুমতী নদী পার হয়ে অপর পাড়ে ঘাঁটি স্থাপন করেছেন। এখান থেকে ফরিদপুর শহর ওঁ ঢাকার পথ উন্মুক্ত।

শ্রীহট্ট খণ্ডে পাকিস্তানী সৈন্যরা কোণঠাসা। এখানে বালুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানি পাক সৈন্য বুধবার ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্তসমর্পন করেছে।

বুধবার ফরিদপুর খণ্ডে কুমারখালি ঘাঁটে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়েছে। মধুমতী নদী পাড় হয়ে ভারতীয় বাহিনী এখানে দ্বিমুখী আক্রমণ চালিয়েছে।

যশোর জেলার যোগাযোগ কেন্দ্র মাগুরা থেকেও ভারতীয় বাহিনী ওঁ মুক্তিবাহিনীর একটি সম্মিলিত দল মধুমতী নদী পাড় হয়ে গোয়ালন্দের দিকে এগিয়ে চলেছে। গোয়ালন্দ মুক্ত হয়ে গেলে যেসব পাক সৈন্য এখনো মরিয়া হয়ে জলপথে পালাবার চেষ্টা করছে, তাঁদের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।

যমুনা নদীর এপারে সিরাজগঞ্জ ওঁ ওপারে জগন্নাথগঞ্জে ঘাটের দিকেও ভারতীয় বাহিনী ওঁ মুক্তিবাহিনীর সৈন্যরা অগ্রসরমান। এই অভিযানেরও উদ্যেশ্য ছত্রভঙ্গ পাকসেনাদের পালাবার পথ রোধ করা।

দিনাজপুর, রংপুর ওঁ সৈয়দপুরের পাক ফৌজরা এখনো বাঁধা দিচ্ছে।

রামগড় মুক্ত
দুদিন যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনী ওঁ মুক্তিবাহিনী গত ১০ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের মহকুমা শহর রামগড় মুক্ত করেছেন।