হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড , ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
আত্মসর্মপনের জন্য নিয়াজিকে কয়েক ঘণ্টা সময় বেধে দেওয়া হয়েছে
(আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি)
নিউ দিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর – বাংলাদেশে নিযুক্ত পশ্চিম পাকিস্তান সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল নিয়াজি ভারতকে যুদ্ধবিরিতর জন্য অনুরোধ করে। ভারতীয় আর্মি প্রধান জেনারেল মানিকশাহ পুনরায় আত্মসমর্পণ এর জন্য নিয়াজি কে ১৬ ই ডিসেম্বর সকাল ৯ টা পর্যন্ত সময় বেধে দেন।
শুদ্ধমতির নিদর্শন হিসেবে জেনারেল মানিকশাহ নিয়াজিকে জানান যে আজ বিকাল ৫ টা থেকে আগামীকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত আকাশ পথে আক্রমন স্থগিত থাকবে,তবে স্থল পথে ভারতীয় বাহিনীর এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ চলবে।
নিয়াজির বাংলাদেশে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ নয়াদিল্লী র আমেরিকার দূতাবাসের মাধ্যমে জেনারেল মানিকশাহের কাছে পৌছানো হয় দুপুর ১২ টায়।বার্তাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সেনা সরকারের গভর্নরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ফরমান আলী।জেনারেল মানিকশাহর উত্তর ও আমেরিকার দূতাবাসের মাধ্যমে গিয়েছিল। ভা
রতের মুখপাএ বলেছিল আজ বিকালে জেনারেল মানিকশাহ এবং জেনারেল নিয়াজির মধ্যে যে র্বাতা বিনিময় হয়েছে তা পূর্বের র্বাতার সাথে সামঞ্জস্যহীন। কিন্তু জেনারেল মানিকশাহর র্বাতা যার পুরোটা প্রকাশ করা হয়েছিল তা পশ্চিম পাকিস্তান আর্মির বার্তাকেই ইংগিত করে।
জেনারেল মানিকশাহ জেনারেল নিয়াজিকে বলেছিল ‘আমি নিউ দেল্লির আমেরিকার দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশর যুদ্ধবিরতি নিয়ে আপনার বার্তা পেয়েছি আজ বেলা ২ঃ৩০ এ আমি পূর্বে দুইটি র্বাতায় জেনারেল ফরমান আলীকে জানিয়েছি যে (ক)আপনার সকল মিলিটারী এবং প্যারামিলিটারী বাহিনী যারা আমার নিকট বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করবে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিব।
(খ) বিদেশী জনগন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং পশ্চিম পাকিস্তানী জনগন,তারা যেই হোক তাদের নিরাপত্তা প্রদান করব।যেহেতু আপনি যুদ্ধবিরতির ইংগিত দিয়েছেন আমি আশা করব আপনি অতিসত্বর বাংলাদেশে থাকা আপনার অধিনস্ত বাহিনীকে যুদ্ধবিরতির এবং আমার বাহিনীর নিকট আত্মসর্মপন করার আদেশ দিবেন। নিয়মের প্রতি অনুগত থাকব।
তদুপ আমি আপনাকে আশস্ত করছি যেসব সৈন্য আত্মসমর্পণ করবে তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হবে এবং আমি জেনেভা কনভেনশনের রি, আপনার আহত সৈন্যদের পরিচর্যা এবং যারা মৃত্যুবরন করেছে তাদের দাফণের ব্যবস্থা করব।এমনকি তারা যেখান থেকেই আসুক কারো নিরাপত্তার ব্যপারে ভয় পাবার কোন প্রয়োজন নেই অথবা আমার বাহিনী দ্বারা প্রতিহিংসার শিকার হবার কোন ভয় নেই।
এইমাত্র আমি একটি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি -জেনারেল অরোরার আদেশে ভারতীয় এবং বাংলাদেশের সেনারা পূর্বমুখীর রনাঙ্গনে আকাশ এবং স্থলপথের আক্রমন থেকে বিরত থাকবে।আপনার উপর আমার বিশ্বাসে ঢাকায় আজ বিকাল ৫ টা থেকে আকাশ পথে অভিযান বন্ধ করেছি।
আমি আপনাকে আশস্ত করছি আপনার সেনাদের উপর অহেতুক আক্রমণ করার কোন ইচ্ছা আমার নেই যেহেতু আমি মানুষের মৃত্যুকে আমি পরিহার করি।যাইহোক আমার সাথে আপনি ভিন্নমত পোষন করছেন যার কারনে আগামীকাল সকাল ৯ টায় সর্বাঙ্গ শক্তি দিয়ে আক্রমন করতে বাধ্য থাকব।
আমি আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে সমাধানে আসার জন্য একটি রেডিও লিংকের ব্যবস্থা করেছি যার ফ্রিকোয়েন্সি দিনের বেলা ৬৬.০৫ এবং রাতে ৩২.১৬ আমি আপনাকে অনুরোধ করব দ্রুত মাইক্রোওয়েভে যোগাযোগ ঠিক করে নিতে।বার্তা শেষ।
ভয়েস অব আমেরিকা আজ শেষ রাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের বরাত দিয়ে ঢাকা থেকে একটি রিপোর্ট এ বলছে-তিনি নিয়াজিকে বলেছে দরকার হলে যুদ্ধ বন্ধ করতে।
আজ রাতে আবার বিবিসি রিপোর্ট করেছেr যে -রাওয়ালপিন্ডিতে একজন অফিসিয়াল মুখপাত্র ব্যপারটি অস্বীকৃতি জাণিয়ে বলেছে যে -ঢাকায় পাকিস্তানী মিলিটারী এবং ভারতীয় অথরিটির মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি।