যুগান্তর
৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেলঃ
‘জয় বাঙলা’ ধ্বনির মধ্যে লোকসভায় ঘোষণা
(দিল্লী অফিস)
৬ই ডিসেম্বর-ভারত সরকার আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই স্বীকৃতির ফলে এই উপ-মহাদেশে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের অভ্যুদয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হলো।
প্রধাণমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আজ সকালে সংসদের যুক্ত অধিবেশনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের গুরুত্বপূর্ন ঘোষণাটি করেন এবং উভয় সভার সদস্যগণই দাঁড়িয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবল হর্ষধ্বনি উত্থিত হয় এবং সদস্যবর্গ উৎসাহ আবেগে মিলিত ধ্বনি তুলেন- ‘জয় বাংলা’, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকার ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত হবে। এই সভা নিশ্চই চান যে, আমি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও অন্যান্য সহকর্মীদের কাছে আমাদের ঐকান্তিক সম্বর্ধণা ও আন্তরিক অভিনন্দন পৌঁছে দিই।
সংসদের অধিবেশন আরম্ভ হওয়ার অব্যবহিত পরেই শ্রীমতী গান্ধী একতি বিবৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিরাট বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের’ ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
শ্রীমতী গান্ধী বলেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার ও জনগণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য যে একসাথে কাজ করেছেন, তাঁর ভাল প্রতিবেশীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
শ্রীমতী গান্ধী বলেন, একমাত্র এরুপ একটি নীতিই এই অঞ্চলে শান্তি, স্থায়িত্ব ও প্রগতির দৃঢ় প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ সরকার ভারতে আগত শরনার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের এবং তাঁদের জমিজিমা ও জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেবার ব্যাবস্থা করার জন্য পুনরায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। ভারত স্বাভাবিকভাবেই এই প্রচেষ্টা কার্যকারী করার ব্যাপারে সর্বতোভাবে সাহায্য করবে।
বেলা সাড়ে দশটার সময় শ্রীমতী গান্ধী এই নাটকীয় বিবৃতি প্রদানের জন্য উঠে দাঁড়ান এবং বিবৃতি পাঠের সঙ্গে সঙ্গে হর্ষধ্বনি ওঠে।
শ্রীমতী গান্ধী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের প্রসঙ্গ এলে লোকসভায় অভূতপূর্ব উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়; সদস্যগণ দাঁড়িয়ে উঠে বিপুল হর্ষধ্বনি সহকারে ঐতিহাসিক ঘোষণাকে অভিনন্দন জানান।