যুগান্তর
৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
ফেনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা দখল, খানেরা প্রায় অবরুদ্ধ
(স্টাফ রিপোর্টার)
কলকাতা, ৬ই ডিসেম্বর- বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর আজকের সাফল্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা। সন্ধ্যায় ভারত বাহিনী লালমনিরহাট রেলশহরের উপকণ্ঠে পোঁছেছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনে আজ যশোর ক্যান্টনমেন্ট ও ঝিনাইদহের পশ্চিম পাকিস্তানীদের সামরিক ঘাঁটি ও লক্ষ্যবস্তুগুলির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। স্থলবাহিনী ঝিনাইদহ-যশোর রোড ধরে এগিয়ে কালিগঞ্জ দখল করেছে।
ইস্টার্ণ কম্যান্ডের জনৈক মুখপাত্র কলকাতার রাত্রে সাংবাদিকদের বলেন যে, যশোরে অসামরিক লোকদের ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে যশোর ভারতীয় বাহিনী তাদের আক্রমণ সীমাবদ্ধ রেখেছে। তবে তিনি পরিষ্কারভাবে জানান যে, বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের পালিয়ে যাবার কোন পথ নেই। তাদের সরবরাহেরও কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে সেখানে তাদের অবস্থা খুবই সংকটজনক।
সকালে ইস্টার্ণ কম্যান্ডের চীফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশে দখলদারী পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের যোগাযোগের সকল সূত্র স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী তরী বিক্রান্ত থেকে উড়ে গিয়ে বিমান বহর আজ খুব ভোরে খুলনার মংলা বন্দরের কাছে পদ্মা নদীতে দু’টি গানবোট উড়িয়ে দিয়েছে।
সাতক্ষীরা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী আজ তুমুল লড়াইয়ের পর সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করেছে। সাতক্ষীরা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা এখন খুলনা রোড ধরে পিছিয়ে যাচ্ছে।
মুক্তিবাহিনীর বৈমানিকেরা আজ প্রথম বিমান নিয়ে শ্রীহট্ট জেলার পাকিস্তানী ঘাঁটিগুলিতে বোমাবর্ষণ করে নির্বিঘ্নে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।
ইস্টার্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র জানান যে, লাকসাম থেকে ভারতীয় বাহিনী ঢাকার পথ ধরেছে। লাকসাম থেকে ঢাকার দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ৭০ মাইল।
ভারতীয় বাহিনী আজ পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে যে সকল জায়গা মুক্ত করেছে, তা হল ময়মনসিংহ সেক্টরে জয়ন্তীয়াপুর ও গোঁয়াইঘাট, শ্রীহট্ট সেক্টরে লাটু, জুড়ি, কুলাউরা ও মুন্সীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা ও কুটি। এখানে তিতাস নদীর উপর উজানীসার ব্রিজটি ভারতীয় বাহিনী অক্ষত অবস্থায় দখল করেছে।
পঞ্চমুখী অভিযান
বাংলাদেশের ভেতরে পঞ্চমুখী অভিযান চালিয়ে সৈন্যবাহিনী যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, আজ সকালে ফেনী, কুলাউড়া ও লাটু দখলের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।পূর্বাঞ্চল কম্যান্ডের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব এদিকে/এদিন সকাল এগারটায় এক সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেনঃ একদিকে যশোর শহরের থেকে প্রায় চার মাইল দূরে প্রচণ্ড লড়াই চলেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মেজর জেনারেল জানানঃ ভৌগোলিক দিক থেকে এবং মাটি ও নদী নালার জন্য আমাদের স্থলবাহিনী বাংলাদেশের ভেতরে অগ্রসর হতে অসুবিধে অবশ্যই দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ।
সামরিক বাহিনীর জনৈক মুখপাত্র আরো বলেনঃ প্রথম সেক্টরে অর্থাৎ গঙ্গা ও সমুদ্রের ধারা ঘেরা এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী আপাততঃ এগিয়ে গিয়ে যশোর শহরের সীমান্তে পৌঁছে গেছে। প্রায় তিন মাইল দূরে প্রচণ্ড লড়াই চলেছে। দর্শনা, জীবননগর দখল করেছে। আর সেনাবাহিনী
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ওপর প্রবল চাপ দিয়ে চলেছে। তাছাড়া মুখপাত্র বলেন, ব্রহ্মপুত্রের কাছে উত্তর সেক্টরে পার্বত্য অঞ্চলে প্রবল লড়াই চলেছে। নবাবগঞ্জের সামনে যুদ্ধ হচ্ছে। বোদা, ঠাকুরগাঁও দখল করে ভারতীয় জওয়ানরা আরো নিচের দিকে নেমে চলেছে।
কালিগঞ্জের দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতির উল্লেখ করে মুখপাত্র জানান, কালিগঞ্জ, কমলপুর আত্মসমর্পণ করেছে। বকসিগঞ্জ শহরও দখল হয়েছে। কানারিঘাটের দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলছে। শমশেরনগর বিমান ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত। মৌলভীবাজার দখলে এসেছে। পাক বাহিনীর ১২ নম্বর ফ্রনটিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। লাকসাম দখলের পর তারা মুকাদ্দরগঞ্জের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মেজর জেনারেল জানিয়েছেনঃ বেলোনিয়া পকেট সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সেনার হাতে এসে গেছে।
বিদেশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেজর জেনারেল বলেন, পাক সৈন্যদের হতাহতের তুলনায় ভারতীয়দের কমসংখ্যক সৈন্য আহত বা নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানী সেনারা প্রবলভাবে লড়ছে। তিনি আরো বলেন এখন পর্যন্ত ৩১৭ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। ১৯৯ জন আহত এবং ৪২৬ জনকে আজ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। একজন মুখপাত্র একথাও বলেন, কিন্টনের সাতটি লরী ভর্তি পাক সেনা ধৃত হয়েছে। পাক সেনাবাহিনী সবচেয়ে যে কয়টি জায়গায় ভারতীয় সেনাকে বাধা দিয়েছিল ও দিচ্ছে, তার মধ্যে আখাউড়া, লাকসাম যশোর আছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ধৃত পাক সেনাদের সঙ্গে জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী সৌজন্যমূলক ব্যবহার করা হচ্ছে। শত্রুসেনাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। তারা যদি আত্মসমর্পণ করে, তবে রক্তক্ষয় কম হবে। তিনি আরো জানান, ধৃত পাক সেনারা বলেছে, তাদের কাছে সর্বশেষ যে বার্তা এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আটকে রাখ। আমরা সাহায্য পাঠাচ্ছি। ইতিমধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে আমরা অমৃতশহর, শ্রীনগর দখল করে নিয়েছি। তিনি একথাও বলেন, এসব মিথ্যা বলা হচ্ছে। পাক সেনাদের মধ্যে নিহতের সংখ্যা তিন-চার শয়ের মত হবে।
পাকিস্তানের পনেরোটি স্যাবার জেট এই ভূখণ্ডে ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের ২২টি মার্কিনী ট্যাংক বিধ্বস্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে পোড়া মাটি নীতি অনুসরণ করে চলেছে।
মেজর জেনারেল বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী তীব্রবেগে এগিয়ে চলেছে। আমাদের নৌবাহিনী সমুদ্রপথে বাঁধা দিচ্ছে এবং আমাদের বিমান বাংলাদেশের আকাশের ওপর প্রভুত্ব করছে।
ইস্টার্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র বলেন যে, কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার কাজিপুর পাক সৈন্য মুক্ত হয়েছে। ঝিনাইদহে পাক সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ভারতীয় সৈন্যরা গুরুত্বপূর্ণ খালিসপুর সেতুটি দখল করেছে।
মুখপাত্রটি বলেন, হাতিবান্ধা থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় সৈন্যরা রংপুর জেলার উত্তরে লালমনিরহাটের দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
কুমিল্লাখণ্ডে আমাদের সৈন্যরা বরচাঁদ ও একতাবপুর মুক্ত করার পর গোমতী নদী পার হয়ে গেছে।
মেঘালয়খণ্ডে ভারতীয় সৈন্যরা কমলপুরের ৪০ কিঃ মিঃ দক্ষিণে জামালপুর ও চরবাংলি দখল করার পর ময়মনসিংহ জেলার দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গখণ্ডে ভারতীয় সৈন্যরা ঠাকুরগাঁও-এর ২৭ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পূর্বে বীরগঞ্জ এবং রংপুরের ২৫ কিঃ মিঃ উত্তরে কালিগঞ্জ আজ সকালে দখল করেছে।
হিলির ১৫ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্বে নবাবগঞ্জ এবং যশোরের ৩০ কিঃ মিঃ উত্তর-পশ্চিমে কোটচাঁদপুরও ভারতীয় বাহিনীর দখলে এসেছে। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহযোগিতায় সমস্ত খণ্ডেই পাক সৈন্যদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।
বিমান বাহিনীর ভূমিকা
শিলং-এ ইস্টার্ণ এয়ার কম্যান্ডের এয়ার মার্শাল দেওয়ান সাংবাদিকদের বলেছেন যে, কুমিল্লার উপর ভারতীয় বিমান আর একটি পাকিস্তানী স্যাবর জেট বিমানকে গুলিবিদ্ধ করে ভূপাতিত করেছে। এই নিয়ে বাংলাদেশে ১৫টি পাকিস্তানী বিমান ধ্বংস হলো। এখন পর্যন্ত এই খণ্ডে ভারতের ৫টি বিমানের ক্ষতি হয়েছে।
১৮৬ বার হানা
তিনি বলেন যে, ভারতীয় বিমান বাহিনী ১৮৬ বার আক্রমণাত্মক হানা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সামরিক লক্ষ্যবস্তু ও ঘাঁটিগুলির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ভারতীয় বিমান আজ কুর্মিটোলা ও তেজগাঁও বিমান ঘাঁটিতে ২৪ পাউন্ডের বোমা ফেলে বিমান ঘাঁটি দুটিকে সম্পূর্ণ অকেজো করে তুলেছে।
নয়াদিল্লী, ৬ই ডিসেম্বর (ইউ এন আই)- ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে আখাউড়ার ট্রাঙ্ক টেলিফোন অফিস চালু হয়েছে বলে আজ এখানে সরকারীভাবে জানান হয়েছে। জনসাধারণ এই টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারেন বলেও জানান হয়েছে।
২টি পাক ট্যাঙ্কার আটক
দিল্লীতে সরকারী মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানের জন্য সম্ভারবাহী ২টি বড় ট্যাংকারকে আজ ভারতীয় নৌ বাহিনী মেঘনা নদীর উপকূলে আটক করেছে। বিমানবাহী নৌবহন খুলনার চালনা ও মঙ্গলা বন্দরের লক্ষ্যবস্তুগুলির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। খুলনার উপকূলে একটি পাক বাণিজ্য জাহাজ ভারতীয় বিমানকে লক্ষ্য করে গোলা ছুড়লে বিমান বাহিনী জাহাজটিকে আক্রমণ করে।
আগরতলা বিপদমুক্ত
আগরতলা অফিস থেকে অনিল ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী এখন আখাউড়া এবং কুমিল্লা জেলায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানী ঘাঁটি অধিকার করায় আগরতলা এখন বিপদমুক্ত বলা যেতে পারে।
ভারতীয় বাহিনী এখন আগরতলার সর্ব উত্তরে অবস্থিত ধর্মনগর থেকে জুড়ি রেল স্টেশন পর্যন্ত(ধর্মনগর থেকে ১২ মাইল) এলাকা দখল করে নিয়েছে।
শ্রীহট্টের শালুটিকর বিমান ক্ষেত্রের তিন মাইলের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী পৌঁছে গেছে। শ্রীহট্টের কোটাক ও লালখন্ড চা-বাগান ভারতীয় বাহিনী দখল করেছে এবং শ্রীমঙ্গল ও শায়েস্তাগঞ্জের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে পাক বাহিনীর সেরা দুর্গ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পাক বাহিনীর একাংশ চাঁদপুর চলে গিয়েছিল। এখন চাঁদপুর ও ময়মানতির মধ্যে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাকবাহিনী এখন ক্রমশঃ পিছু হটে যাচ্ছে।
কুমিল্লা-ফেনী খণ্ডে ৭০০ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে।
শ্রীহট্টের কয়েকটি থানা এলাকা মুক্তিবাহিনী দখল করেছে এবং সেখানে বাংলাদেশ সরকার চালু হয়েছে। ৩রা ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী যখন চট্টগ্রাম আক্রমণ করে তখন স্থানীয় অধিবাসীরা ‘জয় বাংলা’ ও বিভিন্ন ধ্বনি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের নাট্যরূপ লেখককে মুক্তিবাহিনী গুলি করে খতম করেছে।
আগরতলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল আখাউড়াতে আজ এক বিরাট সমাবেশের মাঝে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। মুক্তিপরিষদের সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতায় অসামরিক প্রশাসন দেখার জন্য ঐ এলাকায় প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের মুক্তি পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জহুর আহমদ চৌধুরী পতাকা উত্তোলন করে বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত করার দিন আর দূরে নেই।
বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্যদানের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর, তাঁর সরকার ও ভারতের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ই বি আর-এর বিশেষ ভূমিকা
কলকাতায় ইস্টার্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, লাকসাম সেক্টরে ভারতীয় বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাবেক ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের লোকেরা সাহায্য করেছে এবং ফেনী দখলে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে।
হিলির উত্তর পশ্চিমে রংপুরের হাতীবান্দা ভারতীয় বাহিনী দখল করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে সুলতানপুরে ভারতীয় বাহিনী এক কোম্পানী ইঞ্জিনিয়ার, ৭টি গাড়ী ও সামরিক সাজ-সরঞ্জাম, আটক করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখলের পর ভারতীয় বাহিনীকে ভৈরববাজারের দিকে রওনা হতে হবে। ভৈরববাজার ঢাকার উত্তরে টঙ্গী যাবার পথে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
ঢাকা, ৬ই ডিসেম্বর- ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানগুলি পশ্চিম দিক থেকে আঘাত হেনে আজ ঢাকা শহরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিগ ২১ ওয়াই এবং সুহই-৭ এস গত শনিবার ভোরে শহরের ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং আধ ঘণ্টা পর বিকেল পর্যন্ত বোমা বর্ষণ চলে। পরে রাতের অন্ধকারে আবার শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণীতে প্রকাশ, বিমান হানার ফলে সম্ভবতঃ ১২ জন পাকিস্তানী মারা গেছে। ভারতের দুটি বিমান খোয়া গেছে। উইং কম্যান্ডার বলে চিহ্নিত জনৈক বিমান চালককে বন্দী করা হয়েছে।
বিমানগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিমান বন্দর। পূর্বাঞ্চলে এখানেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের ইহাই একমাত্র প্রাণকেন্দ্র।
রাষ্ট্রসংঘ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন দূতাবাসের ইউরোপীয়দের পরিবারবর্গকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে দেশ ত্যাগের অপেক্ষায় আছে।