দি হিন্দু পত্রিকা
২৭ অক্টোবর ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানে উপনির্বাচন
সম্পাদকীয়
সম্প্রতি ঢাকা থেকে ঘুরে এসে এক বৃটিশ সাংবাদিক তাঁর নিবন্ধে লিখেছেন, “দেশের ৯০% এর বেশী জায়গায় নিরাপত্তা এতই অনিশ্চিত যে নির্বাচনের কথা চিন্তাও করা যায় না”। তিনি এও বলেছেন, দু’মাস আগেও রাতে ঢাকার বাইরে ড্রাইভ করে যাওয়া যেত কিন্তু এখন সেটা অত্যন্ত বিপদজনক এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থাকা সত্তেও ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারনা চালানো অসম্ভব। কিভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কেন্দ্রে ৭৮টি এবং পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৪ টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছেন? জানা গেছে যে হতে যাওয়া ওই দুই নির্বাচনে প্রচুর প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যে পাকিস্তানী রেডিও বলেছে যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৫ জন প্রার্থী আপাত:দৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ৫ জন, জামাতে ইসলামির ৫ জন, কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে ২ জন, নিজামে ইসলাম থেকে ২ জন ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ূম দল) থেকে ১ জন।
এ তথ্য যদি সত্যি হয় তবে ধরে নিতে হবে যে, গত নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে পরাজিত দলের প্রার্থীরা এবারে তাঁদের অঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারের কষ্ট না করে ও বিরোধী প্রার্থী ছাড়াই নির্বাচিত হবেন।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যপন্থী নেতাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় কিনা সে ব্যাপারে মি. ভুট্টোর পিপলস পার্টি প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলো, সে বিষয়ে আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্র ও প্রাদেশিক পরিষদের খালি হয়ে যাওয়া আসনগুলো পূর্ণ করতে জেনারেল ইয়াহিয়া হয়তো এই সুবিধাজনক পথ অবলম্বন করবেন; কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে মানিয়ে নিতে অনেক সমস্যা হবে। মুসলিম লীগের ভেঙ্গে যাওয়া তিন দলকে একত্রিত হতে হবে, ভুট্টোর পিপলস পার্টির “বিপ্লবী” কর্ম-পরিকল্পনা এখনো জামাতের মতো রক্ষণশীল দলকে ক্রুদ্ধ করছে, এবং কেন্দ্রীয় পরিষদের অধিবেশন করাটা পশ্চিম পাকিস্তানে নিরাপদ হলেও ঢাকায় প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন সহজ হবেনা। পাকিস্তান সরকার নিঃসন্দেহে ধরে নিয়েছে যে আজ বা কাল পূর্ব পাকিস্তানের বিরোধী শক্তি স্তিমিত হয়ে আসবে এবং জনগন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন মেনে নেবে যা তারা এতোগুলো বছর করেছে।
কিন্তু আসলে মুক্তি বাহিনীর আঘাত করার শক্তি বাড়ছে বই কমছে না। কিছু বিশ্লেষকের মতে বর্ষা শেষ হবার সাথে সাথে এক নূতন পরিস্থিতি হয়েছে যেখানে বড়ো শহরগুলো ও বিমান-বন্দরে যুদ্ধ হবার সম্ভাবনাই বেশী। সামরিক এই যুদ্ধের পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র বানানোর পরিকল্পনা অপরিপক্ক ও নিরর্থক। এটা কিছুটা অর্থবহ হতে পারে যদি জেনারেল ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের বন্দী নেতার সাথে কথা বলেন।
সম্পাদকীয়
দি হিন্দু মাদ্রাজ