আনন্দবাজার পত্রিকা
১৫ আগস্ট ১৯৭১
মঙ্গলবার বিদেশী সত্যাগ্রহী দল
বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন
(নিজস্ব প্রতিনিধি)
বাংলাদেশে পাকিস্তানী নির্যাতন এবং বিদেশ থেকে অবাধ সাহায্য দানের পথে সীমান্ত বাহিনীর অবরোধ সৃষ্টির প্রতিবাদ ‘অপারেশন ওমেগা’ নামীয় বৃটিশ ও আমেরিকান সত্যাগ্রাহীদের একটি দল আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। শুক্রবার কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেন, পশ্চিম বাংলা থেকে তাঁরা ‘সীমান্তের বেড়া ভেঙে’ ভেতরে ঢুকবেন এবং পাক বাহিনীর মোকাবেলা করবেন। তাঁরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র এবং নিরস্ত্রই থাকবেন। বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অবশ্যই তাঁরা ইয়াহিয়া সরকারের অনুমতি চাননি-কারণ তেমন অনুমতির প্রয়োজন আছে বলে তাঁরা মনে করেন না। তাঁদের সুস্পষ্ট অভিমত : কোন দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ওপর অত্যাচার, লাঞ্ছনা, গণহত্যা ঘটলে, অভাব-অনটন ঘটলে, এই দুর্গত মানুষদের পাশে ছুটে যাবার সম্পূর্ণ মানবিক অধিকার অন্য দেশের মানুষদের আছে- এই অধিকারকে রাজনৈতিক ও ভৌগলিক বেষ্টনী দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। অবশ্য, অহিংস সৈনিকের নীতি অনুসারে তাঁরা তাঁদের এই সত্যাগ্রহ পরিচালনার কথা পাক সরকারকে জানিয়ে রেখেছেন- তাঁরা প্রকাশ্যেই সীমান্তের বেআইনী আইন লঙ্ঘন করবে এবং যে কোন ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন।
৪ জন মহিলাসহ এই সত্যাগ্রহী দলে মোট আছেন ১১ জন। এঁদের মধ্যে ৮ জন দু’টি ল্যান্ডরোভার গাড়ীতে ত্রাণসামগ্রী বোঝাই করে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন।
সত্যাগ্রহী দলের মুখপাত্রের লন্ডনের বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘পীস নিউজ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক মিঃ রজার মুডী (বৃটিশ) এবং মিঃ ড্যানিয়েল গ্রটেন (আমেরিকা) সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করব আমাদের কাজের দ্বারা এমন একটি নজীর স্থাপিত হবে যা শুধু পাক-ভারত পরিস্থিতিতেই নয়, বিশ্বের যে কোন স্থানে সংঘাতের ক্ষেত্রে কর্যকর করা যাবে। তাঁরা বলেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদে যা-ই লেখা থাকুক, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ওপর অত্যাচার চলছে, গণহত্যাও সংঘটিত হচ্ছে। এ ধরনের মানবতাবিরোধী কান্ডকে কোন দেশের ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলে কিছুতেই গন্য করা যায় না। একটি প্রশ্নের উত্তর তাঁরা জানান, ভেতরে ঢুকে সরাসরি জনসংযোগ এবং সসাহায্য বন্টনই তাঁদের অভিপ্রায়।