You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.20 | দি স্টেটসম্যান, ২০শে অগাস্ট, ১৯৭১, চুক্তির পর - সংগ্রামের নোটবুক

দি স্টেটসম্যান, ২০শে অগাস্ট, ১৯৭১
চুক্তির পর

যারা আশা করেছিলেন যে ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি নয়া দিল্লিকে পূর্ব বাংলার ঘটনাবলী এবং তার পরিণতির প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করবে তাদেরকে এখন দারুণভাবে হতাশ হতে হয়েছে। যারা বলিষ্ঠতাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সদগুন বলে মনে করে তাদের হতাশাকে গুরুত্বসহকারে নেয়ার কিছু নেই, কিন্তু আরো অনেকে আছে যারা মনে করেছিল এই চুক্তি ভারতকে বাংলাদেশ বিষয়ক সমস্যা তাৎক্ষনিকভাবে সমাধানে আগের চেয়ে আরো অনেক দৃঢ়ভাবে দাবী তুলতে সাহায্য করবে এবং সত্যিকার অর্থে সমাধানের একমাত্র উপায় হবে এটি। সমস্যা সমাধানে ভারতের দাবী তোলার অধিকার প্রশ্নাতীত, কেননা আর কোনোকিছুই এই দেশটিকে শরণার্থীদের অসহনীয় বোঝা থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। এটিও কখনো যুক্তি দিয়ে বলা যাবে না যে পূর্ব বঙ্গের মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। বিভিন্ন সময়ে নয়া দিল্লী থেকে এই দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যদি ৯ই অগাস্ট পর্যন্ত পাকিস্তান এই বিষয়গুলোকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে থাকে, তাহলে মনে করার কারণ রয়েছে যে নয়া দিল্লী থেকে তোলা দাবীগুলোর পেছনে তেমন শক্তি ছিল না। ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি স্বাক্ষরের সাথে সাথেই এই শক্তির অভাব দূর হয়েছে বলে অনেকেই এমন মনে করতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে এমন মানুষও আছে যাদের মনে এই চুক্তির দীর্ঘ-মেয়াদি প্রভাব নিয়ে সংশয় রয়েছে কিন্তু তারপরও তারা একে কিছুটা স্বাগত জানিয়েছে এই আশায় যে এই চুক্তি পূর্ব বঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করতে ভারতের হাতকে আরো শক্তিশালী করবে। এখন পর্যন্ত কোন প্রমান নেই যে নয়া দিল্লীর হাত আরো শক্তিশালী হয়েছে। বরং, সমাধানের দাবী কিছুটা প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

এই চুক্তি এই যুদ্ধ সংক্রান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আলাপচারিতা বন্ধ করে দিয়েছে যা একটি ভালো পরিণতি, যদিও এটি আশ্চর্যজনক বলে মনে হয় যে সম্ভাব্য সামরিক সহায়তার আশ্বাস আন্তরিকতাবিহীন আচরণকে বশীভূত করতে পারে। পাকিস্তানের প্রতি রাশিয়ার প্রকাশিত হুমকি হয়তো ইসলামাবাদে কিছুটা সংযম সঞ্চারিত করেছে, এতে করে ভারতের দিক থেকে আর পাল্টা হুঁশিয়ারি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা নেই। সবদিক থেকে, এই চুক্তি হয়তো ইতিমধ্যেই তার একটি প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য সফল করেছে ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলোকে হালকা করে দিয়ে। তবে উৎসাহী সমর্থকদের কাছে তারা যেমনটা ভেবেছিল এটি এই চুক্তির সেই উদ্দেশ্য নয়। নিশ্চয়ই, এই চুক্তি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের পরও মানা হচ্ছে না যদিও অনেকেই মনে করেছিল যে তা হবার সম্ভাবনাই বেশী ছিল এবং যুদ্ধরত দলগুলোর মধ্যে সবচে কম অনুপ্রেরণা দেয়ার কথা। সম্ভাব্য বহিঃশক্তির সহায়তার উপর নির্ভর করে তাড়াহুড়ো বা দৃঢ়তার সাথে কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থেকে ভারত ততটা পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে যতটা হয়তো তাকে কেউ কৃতিত্ব দেয় না, কিন্তু এখন এটি ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে যে এই সংযম প্রদর্শন সোভিয়েত সহায়তার প্রতিশ্রুতির পূর্বশর্ত ছিল।

এই চুক্তির ফলে ভারতের পদক্ষেপ নেয়ার স্বাধীনতা ঠিক কতটা খর্ব হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কিনা তা কেবলমাত্র অনুমানের বিষয়। কিন্তু এটাও বিবেচনা করতে হবে যে যদিও সংযম কাম্য এমনকি বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া হলেও তারপরও পাকিস্তানের সাথে ভারত কেবলমাত্র একটি যুদ্ধ এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে একটি সমাধানে আসতে পারবে এমনটা আশা করতে পারে না। তার এমন কোন আশা করারও সুযোগ নেই যে দায়সারা চাপের মুখে আন্তর্জাতিক প্ররোচনায় বা আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে ইসলামাবাদের সামরিক জান্তা তাদের হুঁশ ফিরে পাবে। তার সীমিত উপায়ের মধ্যে হয়তো সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক হচ্ছে যে দলগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে তাদের সবাইকে সম্ভাব্য সব উপায়ে সাহায্য করা, যেটির মাধ্যমে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে কিছুটা শিক্ষা দেয়া যাবে। দুঃখজনকভাবে, মুক্তি বাহিনী এখনো অনেকটা অক্ষম রয়ে গেছে পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাবে; এবং বর্ষাকাল, যে সময়টায় গেরিলারা সবচেয়ে বেশী কার্যকর, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আশা করতে হবে যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করাটা মুক্তি যোদ্ধাদের সাহায্যে পুরোপুরিভাবে এগিয়ে আসার আপাত ব্যর্থতার কারণ হয়ে না দাড়ায়।