দি স্টেটসম্যান , ৩০ জুলাই ১৯৭১
বাংলাদেশ এবং জাতিসঙ্ঘ
সম্পাদকীয়
নিয়া দিল্লি একটি বিষয়ে খুবই সজাগ – আর টা হল বাংলাদেশ বিষয়টি যেন কোনভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি বিষয় না হয়। ভারতের দুঃখিত বোধ করার কিছু নাই। জাতিসঙ্ঘের কাজ সম্পর্কে দেয়া মতামত ঘোলাটে। এর মূল কারণ মনোভাব ও আচরণ। যখন ইসলামাবাদ দাবি করেছিল যে বাংলাদেশের সংগ্রাম পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার তখন আসলে সমস্ত মানবতার উচিত ছিল জবাই, লুন্ঠন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু যখন ভারত আসছিল তখন এটা আর পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। এবং ভারতের যথেষ্ট কারণ থাকে যে তখন তারা এটাকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মেনে নিতে নারাজ। এটা ওই সময়ে আশা করা হয়েছিল যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাথে সাথে একশন নেবে। এবং পাকিস্তানকে থামাতে চেষ্টা করবে। এটা শুধু মানবতার দিক থেকেই নয় পার্শবর্তি দেশের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের প্রতি হুমকি। কিন্তু কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি। কিছু দেশ চেষ্টা করেছে তবে তেমন জোরালো নয়।
স্পষ্টরূপে, নয়া দিল্লি হয় এটা আগে থেকে অনুমান করেনি বা এটা নিয়ে তেমন চিন্তা করেনাই যে নেগেটিভলি ঘটনাগুলো ঘটলে কি করবে তারা। পাকিস্তান ও তার বন্ধু দেশগুলো এখন বাংলাদেশ বিষয়কে তাদের পক্ষে নেবার জন্য আন্তর্জাতিক প্রভাব ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। পূর্ববাংলার জনসংখ্যার সত্তর লক্ষেরও বেশি কমেছে এবং অনেক মানুষ সামরিক প্রশাসনের স্পর্ধা সম্পর্কে স্বীকার করবে। এবং এটাও ঠিক যে পাকিস্তানের লক্ষ্য তাদের ভারতের পূর্ব সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। এটা করা যাবে যদি সীমান্তের উভয় পাশে জাতিসঙ্ঘ অবস্থান করে। এতে করে শরনার্থিদের প্রবেশের ব্যাপারে ও পাশাপাশী বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীর ঐ এলাকায় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। শরনার্থিরা শুধু অপেক্ষা করছে বিদেশি কেউ এসে তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ীঘরে ফিরে যাবার ব্যাবস্থা করবে – যা স্বপ্নের মত আসলে – যা জাতসঙ্ঘের সবচাইতে অজ্ঞ সদস্য ধারণা করতে সক্ষম না যে এই ধারনা কতটা কঠিন এবং ভারতের তা যথারীতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
কিন্তু তারা জাতিসঙ্ঘের যে কোন অবস্থানকে অস্বীকার করতে পারেনা। যা তার নিজের সঠিক চিন্তাধারার বাইরে যায় – আর তা হল এটা পাকিস্তানের সম্পূর্ন আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়। ভারত এটাও মানতে নারাজ যে – পাকিস্তান আর পূর্ব বাংলার মধ্যে একটি সমঝোতার ব্যাবস্থা হবে – আর ভারত তাতে ইনভল্ভ হবেনা। এটা ভারতের স্বার্থের বিপরীত হবে। যেহেতু তারা শরনার্থিদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। যদি এটা নিরাপত্তা পরিষদে উঠে তখন ভারত মোটেই লজ্জা পাবেনা তার অবস্থানের পক্ষে যৌক্তিক কারণ প্রমাণ করতে। শরণ সিং বিরোধিতা করেন যে উ থান্ট নিরাপত্তা পরিষদের মিটিং ডেকেছেন আর সেখানে বাংলাদেশ ইস্যু উঠবে না। ভারতের এই আলোচনা এড়িয়ে যাবার কোন কারণ নেই। বরং তারা এতে সক্রিয়ভাবে আলোচনা করবে যাতে আলোচনা সঠিক দিকে যায়। স্বআরোপিত বিচ্ছিন্নতায় থেকে তেমন কোন লাভ হবেনা।