যুগান্তর
৬ জুলাই ১৯৭১
ভারতে আটক রাখা সম্পর্কে পাকিস্তানের মিথ্যা কূটনৈতিক প্রচার
৬ই জুলাই- পাকিস্তান সরকার এবার এক নতুন মিথ্যা কূটনৈতিক প্রচার শুরু করেছেন। পাক সরকার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সেক্রেটারী জেনারেল উত্থান্ট, রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী দপ্তরের হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন ও কয়েকটি বিদেশী মিত্র রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যে, ভারতীয় জেলে যেসব পাকিস্তানী রয়েছে তাদের প্রত্যাবর্তনে তাঁরা যেন সাহায্য করেন।
পাক বৈদেশিক দপ্তর থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ হাঙ্গামার জন্য চা-বাগান, ব্যাংক, বানিজ্যিক সংস্থা ও সরকারী কিছু সংখ্যক কর্মচারী ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং ভারত সরকার নাকি তাদের গ্রেফতার করে জেলে পুরেছেন।
পাকিস্তান সংবাদপত্র, রেডিও ও টেনিভিশনেও ভারতের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা প্রচার চলছে।
পাক সরকার আরও অভিযোগ করেছেন যে, ধৃত ব্যক্তিদের খবরাখবরের জন্য কয়েকটা চিঠি লিখেও তাঁরা কোন জবাব পাননি।
ভারত সরকার জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ থেকে যেসব পশ্চিম পাকিস্তানী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদের সংবাদের জন্য পাকিস্তান সরকারের অনুরোধ ভারত সরকার ‘মানবতার ভিত্তিতে’ বিবেচনা করে দেখতে প্রস্তুত আছেন। তবে পাকিস্তানের জেলে যে ২৫০ জনেরও বেশি ভারতীয় এখন কষ্টভোগ করছেন আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি অনুযায়ী তাঁদের কথাও পাকিস্তানকে বিবেচনা করতে হবে। পাক জেলে আটক এই ভারতীয়দের অপরাধ কি, তাঁরা কেমন এবং কোথায় আছেন সে সম্পর্কে পাকিস্তানের কাছে চিঠি লিখে ভারত কোন জবাব পায়নি।
বাংলাদেশের যেসব লোককে ভারতে আটক করে রাখা হয়েছে বলে পাকিস্তান মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে এবং যাদের নামের তালিকা পাক সরকার দিয়েছে তারা সংখ্যায় মাত্র ৩১ জন এবং সকলেই পশ্চিম পাকিস্তানী, তারা পূর্ব বঙ্গের লোক বলে পাক সরকার যে দাবি করেছেন তা মিথ্যা। জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেন যে, বাংলাদেশ থেকে ৭০ লক্ষ লোক ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন কিন্তু তাদের জন্য পাক সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। মাত্র ৩১ জন পশ্চিম পাকিস্তানির জন্যই পাক সরকার চিন্তিত।
পাকিস্তানের জেলে আটক ভারতীয়দের মধ্যে সাংবাদিকরাও আছেন। ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে এপ্রিলের গোড়ার দিকে তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে। তাঁদের খবরাখবরের জন্য পাক সরকারের কাছে চিঠি লিখেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।