You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.17 | কালান্তর পত্রিকা, ১৭ জুন ১৯৭১, মুক্তির দূত মুক্তিফৌজ - সংগ্রামের নোটবুক

কালান্তর পত্রিকা
১৭ জুন ১৯৭১
মুক্তির দূত মুক্তিফৌজ

বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শরনার্থি ভারতে এসেছেন, আজও আসছেন। তারা পীড়িত, আর্ত, অসহায়, আশ্রয়প্রার্থী। অতিশয় স্পষ্ট ও অত্যান্ত প্রকাশ্য এই ঘটনা, ফলে সাদা চোখেই মানুষ তা দেখেন। কিন্তু সাধারণের দৃষ্টির অগোচরে বাংলাদেশের যৌবন। বিভিন্ন শিক্ষা শিবিরে স্বদেশের পীড়া, দুঃসময় ও অসহায়তার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য যে মুক্তিফৌজের অঙ্কুরের মধ্যে জমেছে এবং ইয়াহিয়ার ফৌজের সঙ্গে লড়াই করে ঐ অংকুর যে চড়াগাছ হয়ে উঠেছে তা কজনে দেখছেন? এই পত্রিকার বুধবারের সংখ্যায় কমিউনিস্ট নেতা শ্রী বর্ধনের দেখা ঐরূপ কয়েকটি শিবিরের বর্ননা রয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান ছেলেরা একত্রে হাতেনাতে লড়াইয়ের শিক্ষা নিচ্ছেন। শিক্ষার্থিদের মধ্যে রয়েছে ১৩ বছরের কিশোর। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ফৌজি ক্রিয়াকর্মে অভিজ্ঞ ৫০ বছরের প্রৌড় শত্রুকে ঘায়েল করার বহু সাফল্যে মুক্তিফৌজের রেকর্ডও তাতপর্যপূর্ন।

এই মুক্তিফৌজই হল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ভারতে আগত অসহায় শরনার্থি এবং বাংলাদেশের ভিতরেও অসহায় কোটি কোটি মানুষের মধ্যে যোগসূত্র হল এই মুক্তিফৌক। ভারতে আগত ছিন্নমূল যারা, শুধু তারাই ছিন্ন মূল নয়, বাংলাদেশের ভিতরে যারা আছেন তারাও ছিন্নমূল। বাংলাদেশের ভিতরে কোন একটি কল কিংবা কারখানায় আজ ধোঁয়া ওড়ে না। ৪০ লক্ষ শ্রমিক একটানা ধর্মঘটে লিপ্ত। সেখানেও সমাজের চাকা স্তব্ধ। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের – তাড়া ভারতে রয়েছেন কিংবা বাংলাদেশে আছেন, সকলেই পুনর্বাসন চাই। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সমাজ ওঁ সভ্যতাকে ইয়াহিয়া খাঁ চুরমার করেছে। তাদের এক সপ্তমাংশ যদি ভারতে উৎক্ষিপ্ত, তবে ছয় সপ্তমাংশ বাংলাদেশেই আছেন। মুক্তিফৌজ হল কারিগর, যারা এই ভাঙা মানুষকে জোড়া দেবে। ভাঙা দেশকে পুনরায় গড়বে।

বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর এই খবরই বিশ্ব বিবেককে চাঙ্গা করে তুলেছে এবং তুলবে। পাঁচটি আরম রাজ্যের যুবসংস্থাগুলির একটি যৌথ ঘোষণা হল তারই চিহ্ন। ইসরায়েলের দস্যু আক্রমণে প্যালেস্টাইনের ছিন্নমূল শরনার্থিদের জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র ওঁ গণতন্ত্রের সাহায্যের মানে যারা বোঝেন, কতদিন তারা বাংলাদেশের ছিন্নমূলদের প্রতি নিজেদের আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কথা ভুলে থাকতে পারেন? বয়োবৃদ্ধ রাজনিতিক ও রাষ্ট্রনিতিকদের দৃষ্টির ঘোর কাটার জন্য কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু আরব দেশগুলির যুব সংস্থাগুলির যৌথ ঘোষণাই হল প্রমাণ যে, অংকুর ওখানেও ডালপালা মেলতে শুরু করেছে।

ভারতে আগন্তুক শরনার্থিদের কাছে, বিশেষ করে শরনার্থি শিবিরের যুবকদের কাছে আজ মাত্র একটি ডাক- তোমরা মুক্তিফৌজে যোগ দাও। স্বদেশের মুক্তির জন্য তোমাদের সংগ্রাম বিশ্ব মানবতাকে তোমাদের পাশে দাড় করিয়ে দিচ্ছে এবং দেবে। তোমাদের সংগ্রামই বাংলাদেশ থেকে ভারতে আগমনকারী ছিন্নমূলদের যেমন একমাত্র ভরসা, তেমনই বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থানকারী ছিন্নমূলদেরও পুনর্বাসন ওঁ পুনর্জিবনের একমাত্র সহায়। বাংলাদেশের মুক্তি অর্জন এবং স্বাধীনতাই হল একমাত্র ধ্রুব লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করার জন্য এদেশেরও কোন কোন দল ও ব্যাক্তি , যারা ভারতেই শরনার্থিদের পুনর্বাসন চাই বলে প্রচার করছে, তারা জ্ঞ্যাতসারে কিংবা অজ্ঞ্যাতসারে ইয়াহিয়ার চর।