You dont have javascript enabled! Please enable it! দি স্টেটসম্যান, ৫ জুন ১৯৭১, শান্ত রাখা - সংগ্রামের নোটবুক

দি স্টেটসম্যান, ৫ জুন ১৯৭১
শান্ত রাখা

যখন নতুন দিল্লি সিদ্ধান্ত নেয় যে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুদের আসার জন্য ভারত সীমান্ত খুলে দেয়া ছাড়া তাদের আর কোন বিকল্প নেই অন্তত মানবিক কারণে। এই একটি নীতি যার সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব হতে পারে না। যেহেতু পরিস্থিতির শিকার। তবুও রাজনৈতিক উদারতার এটিকে সমাধান করবে না। সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। শরণার্থী প্রবাহের পরিমাণ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকি, রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা এই দুর্ভাগ্যের শোষণ, পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের সীমিত ক্ষমতা, স্থানীয় ও জাতীয় উভয় অর্থনীতির উপর চাপ, সাম্প্রদায়িক চাপের ঝুঁকি এবং ” শরনার্থী কলকাতা শহরে আক্রমণ – এই সমস্ত বিষয়গুলি এক রাত্রিকালে আবির্ভূত হয়নি, তারা সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ছিল এবং এটা প্রত্যাশিত হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে কি উদ্বাস্তুদের বাইরে বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত? সীমান্ত রাজ্যগুলির মধ্যে বেশ কিছু সমীকরণ এবং মোট অনুপস্থিতি রয়েছে, কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। সব পরিস্থিতিতেই নির্দেশ করে যে এটি বিচ্ছিন্ন করার কোন বিকল্প নেই তবে এখানে স্পষ্ট নীতি গ্রহণের কোন প্রমাণ নেই এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি স্পষ্ট সম্মতি নেই। সব বিষয় বিবেচনায় নিলে দেখা যায় এখন ডিস্পারসাল অনুমোদন ছাড়া কোন উপায় নেই। তবে এখানে আপাত ইচ্ছার কোন পরিষ্কার পলিসি নেই। ডিস্পার্সালের ব্যাপারে নয়াদিল্লীর অনিচ্ছার কারণে রাজ্য দরকারি সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে – এটিই প্রধান কারণ। এভাবে সীমান্ত এলাকায় বিস্ফোরক পরিস্থিতি বিরাজমান।পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।

আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রধান থিম হতে পারে অপর্যাপ্ততার নিয়ে; এবং এ যুক্তিতে কয়েকজন আগ্রহী হবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সঙ্কটগুলি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারা নয়াদিল্লীর উদ্বেগ। শরণার্থীদের অব্যাহতির উন্নতির তেমন সম্ভবনা নেই। সমস্যা প্রতিদিন আরো জটিল হয়ে উঠছে এবং তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে বলে আশা করা যায়। সরাসরি সেন্ট্রাল তত্ত্বাবধানে এই পরিস্থিতির জন্য একটি নীতি করা বাধ্যতামূলক এবং যা না হলে তাত্ক্ষণিক সমাধান পাওয়া যায় না। প্রাথমিক লক্ষ্য হল এই প্রতিরোধ্য অবস্থার পরিণতির কি হবে সেটা। ছয় মাসে এ অঞ্চলে একটি প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছান গেলে সেখানে সবচাইতে খারাপটা মাথায় রেখে ভালো সময়ে তা প্রতিরোধ করতে হবে। সব কিছুর উপড়ে শুধু ত্রাণ দেয়া সম্ভব – তাও সামর্থের উপর নির্ভরশীল।এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক লেভেলে হতাশা জন্ম নিয়েছে – নয়াদিল্লীর সামনে নতুন বিপদ – তাদের সামনে যে চাপ তাতে করে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য অথবা আবেগের সন্তুষ্টির জন্য – অথবা কোন দলে নৌকার পালে হাওয়া লাগালে – তা জাতীয় স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

প্রেশার যাই হোক না কেন – শরণার্থী প্রবাহ দ্বারা উত্পাদিত চাপ এবং উত্তেজনা নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে ঠান্ডা রেখেছে। ইসলামাবাদের নিজস্ব চাপ বাড়ছে যদিও এইগুলি প্রথম দিকে ফলপ্রসূ হবে না, তবে শেষ পর্যন্ত তারা ভারতের তুলনায় আরো বেশি সুবিধা পেতে পারে।

রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের উক্তি যে পাকিস্তানের অর্থনীতি “এত খারাপ যে আমি তোমাকে বলতে পারব না” – এটাই মিথ্যাবাদ ও বিকৃতির বাঁধের মধ্যে এক নিখুঁত নিরবচ্ছিন্ন সত্য। জনাব স্বরান সিংয়ের মিশন সম্ভবত অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব মতামতকে জানানো। রাজ্যসভায় তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন পূর্ববাংলার সঙ্কটটি “মূলত” বাংলাদেশের জনগণ ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। মুল বিষয় হল বড় শক্তিগুলোকে বুঝাতে হবে যে এই পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার কোন ইচ্ছা ভারত সরকারের নেই। কারণ ইতোমধ্যেই এটি অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। তা এতটাই জটিল যে যদি কেউ এটাকে আরও মাখাতে যায় তাহলে উল্টো তার নিজেরই সমস্যা হবে – বৃহত্তর স্বার্থে। এবং তা বাংলাদেশের স্বার্থের বাইরেও যাবে। ইতোমধ্যে ভারত যতোটুকু জড়িয়েছে তার মূল্য তাকে শোধ করতে হচ্ছে। পাকিস্তানের ভারতকে প্রধান উশকানিদাতা প্রমাণ করার চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে এবং একথাও ভুল প্রমাণিত হয়েযে যখন তারা বলে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ইসলামাবাদের দাবি ও বিবৃতিগুলিতে আন্তর্জাতিকভাবে সংশয়বাদীরা এখন এমন চাপের সম্মুখীন হতে পারে যা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়াকে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে প্রকাশ করছে। সমাধানের কোন শর্টকাট পথ নেই। এবং সেইসাথে নিয়াদিল্লির উদ্বেগকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। দায়িত্বজ্ঞানহীন দাবির প্রতি আত্মসমর্পণ না করে সীমান্ত এলাকায় কীভাবে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায় সে ব্যাপারে “দৃঢ় পদক্ষেপ” নিতে হবে।