You dont have javascript enabled! Please enable it! কালান্তর পত্রিকা, ১ জুন, ১৯৭১, বাংলাদেশ পাক ফৌজী বর্বরতা অবিশ্বাস্য কিন্তু সন্দেহাতীত - সংগ্রামের নোটবুক

কালান্তর পত্রিকা
১ জুন, ১৯৭১
বাংলাদেশ পাক ফৌজী বর্বরতা অবিশ্বাস্য কিন্তু সন্দেহাতীত
স্টাফ রিপোর্টার

কলকাতা ৩০শে মে, ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’- এর সভাপতি মিঃ ডোনাল্ড চেসওঅর্থ এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য মি: এম বার্নেস বাংলাদেশ থেকে আগত শরনার্থীদের শিবির পরিদর্শনের পর আজ এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী ফৌজের বর্বরতা ও হত্যাকান্ড সম্পর্কে সন্দেহের কোনও কারণ নেই এবং পাকিস্তানকে যেসব দেশ অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দিয়েছে, তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে পাকিস্তানের উপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করার- যাতে পূর্ব বাংলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহৃত হয় এবং সেখানকার প্রশ্নের একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক মীমাংসা সম্ভব হয়।
মিঃ বার্নেস বলেন, যদি ধরা যাক ৬ মাস পরেও এই সমস্যা অসমাধিত থাকে, মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাকফৌজের সংঘর্ষ এবং শরণার্থীদের আগমণ অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে এবং তাতে একটা গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান ট্রাজেডির সমাধানের একটা উপায় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলিকে অবশ্যই বার করতে হবে।

যে সব দেশ পাকিস্তানকে অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দিয়েছে এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে মি: বার্নেস বলেন, পাকিস্তানের সমস্ত নাগরিকের উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষার জন্য যে সাহায্য ও অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল, পাকিস্তান যাতে সাহায্যের এহেন অপব্যবহার না করতে পারে, তার জন্য পাকিস্তানকে উন্নয়নমূলক সাহায্য ও অস্ত্র সাহায্য দানকারী দেশগুলির এক্ষেত্রে বসে একটা উপায় বার করা উচিত। তিনি জানেন।

“এইড কনসোর্টিয়াম” (সাহায্যদানকারী রাষ্ট্রপুঞ্জ) আগামী জুলাই মাসে বৈঠকে মিলিত হয়ে এ বিষয়ে তাদের ইতিকর্তব্য স্থির করবে।

মিঃ ডোনাল্ড চেসওঅর্থ জানান যে, গত বছর পূর্ববঙ্গে ঘুর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য তাদের বেসরকারী সাহায্য সংস্থা ১৫ লক্ষ পাউন্ড সংগ্রহ করে যার অধিকাংশই ব্যয়িত হয়নি। তারা এখন মনে করেন, ঐ টাকার একটা অংশ পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে আগত শরনার্থীদের জন্য ব্যয়িত হওয়া উচিৎ। কিন্তু ঐ টাকা যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ে সাহায্যার্থে সংগৃহীত হয়েছিল, সেহেতু শরনার্থীদের জন্য এ টাকা ব্যয় করায় আইনগত জটিলতা আছে। তাঁদের এখানে আসবার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, শরণার্থীদের মধ্যে পূর্ব বাংলার ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষ আছে কিনা তা নির্ধারণ করা। তারা পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় শরণার্থীদের তিনি বলেন পূর্ব বাংলায় যা হচ্ছে তা এমনি অবিশ্বাস্য ও অবর্ণনীয় যে, দেশে ফিরে গিয়ে ইংল্যান্ডের মানুষকে একথা বুঝানো তাঁর পক্ষে কঠিন হবে যে, তিনি বাংলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে যা বলছেন তা অতিরঞ্জিত নয়।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ওপার বাংলায় এক ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, যা হয়তো আকারে ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষের মতোই ভয়াবহ হবে। ওখানে আ ঘটেছে তা যে শান্তির পক্ষে বিপজ্জনক তাই নয়, সমস্যার আকার এত বড় যে, বাইরে থেকে তা অনুমান করা কঠিন। সমস্যার এই ব্যাপ্তি সঠিকভাবে উপলব্ধি করবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের ব্যাপারে ১০ লক্ষ পাউন্ড সাহায্য দেবার কথা ঘোষনা করেছে। কিন্তু সমস্যার ব্যাপ্তি এবং বৃটেনের মতো একটি শিল্পোন্নত দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই সাহায্য কমপক্ষে এক কোটি পাউন্ড হওয়া উচিত।