You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.09 | জেনারেল সুধীন কুমার ও বাঙলাদেশ | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

জেনারেল সুধীন কুমার ও বাঙলাদেশ
কুনাল সেন

খতমের রণকৌশল বিধ্বস্ত এপারের বাঙলার রেজিমেন্টহীন সেনাপতি সুধীন কুমার ওপার বাঙলার অভ্যুত্থানে খুবই আবেগ আপ্লুত হয়ে হয়ে পড়েছেন। ময়দান সংবাদপত্রে বিবৃতি মারফত এপারে রণকৌশলের দুটি নির্দেশ তিনি ঘােষণা করেছেন। প্রিফেস পড়া পণ্ডিতের যেমন রচনা থেকে ফুটনােট ভারী, জেনারেল সুধীন কুমারের প্রথম বক্তব্য অপেক্ষা দ্বিতীয়টি অনেক বেশি মারাত্মক। সেনাপতি হিসেবে সুধীন কুমার এপার বাঙলায় বেশ পরিচিত। বিগত যুক্তফ্রন্টের কোন দলই তার কূটনৈতিক দক্ষতা অস্বীকার করেনা। অবিরাম জ্বলন্ত পাইপ তার জঙ্গী প্রখরতার প্রমাণ। জি ও সি প্রমােদ দাশগুপ্তোর প্রতিটি নির্দেশ তিনি বিনা বাক্যে পালন করেন। শহরতলীর অনাদি রেজিমেন্ট তার কাছে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত ও পর্যদস্ত। রণকৌশল বিষয়ে পরামর্শদানের ‘হক’ তার অবশ্যই আছে।
তাঁর প্রথম বক্তব্য অবিলম্বে বাঙলাদেশের সার্বভৌম সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ প্রস্তাব সুদীন কুমারের পূর্বে সংসদের ভিতরে ও বাইরে অনেকেই পেশ করেছেন। ভারত সরকার অবশ্য ঘােষণা করেছেন যে, স্বীকৃতির অনুরােধ এলেই যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে প্রস্তাবটি বিবেচিত হবে। তা সত্ত্বেও একটা চাপ সৃষ্টির প্রয়ােজন আছে, এবং সংহতি জ্ঞাপনের জন্য একথা বারবার উচ্চারিত হওয়া প্রয়ােজন, এও ঠিক। সুধীন কুমার যথা কর্তব্য করেছেন। কিন্তু তার নির্দেশের অভিনবত্ব রয়েছে দ্বিতীয় প্রস্তাবে। অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সি আর পি ও মিলিটারি তুলে নিতে হবে। প্রস্তাবটি ইয়াহিয়া খাঁর পক্ষে এতই লােভনীয় যে সম্ভব হলে তিনি সুধীন কুমারকে একটা ডিনারে অন্তত নিমন্ত্রণ করতেন। জেনারেল সুধীন কুমার অবশ্যই দুই বাঙলার সীমান্তের মানচিত্র ও বাস্তব অবস্থার কথা ভাবার অবকাশ পাননি। জি ও সি প্রমােদ দাশগুপ্ত দীর্ঘদিন ধরেই এই রণকৌশলের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। জরুরি অবস্থায় সুকুমার ব্রিগেড বা সুধীন। রেজিমেন্ট …রেড, পাইপগান মারফত সীমান্ত…করবেন— এ প্রস্তাব ভুট্টো এবং ইয়াহিয়ার খুবই মনঃপুত হয়েছে। সর্বশেষ ফুটনােট হিসেবে… যে জেনারেল সুধীন কুমারের উপস্থিতিতেই তার মুক্তি ফৌজ আওয়াজ তুলেছে …‘ইয়াহিয়া এক হ্যায়’। অথচ জি ও ডি প্রমােদ দাশ গুপ্তের বহির্বিষয়ক …পার্লামেন্টে এই সেদিন সর্বসম্মত প্রস্তাব মারফত ঘােসনা করল যে… ব্যাপারে ইন্দিরা সুন্দরাইয়া এক হ্যায়। এরা কি তবে পঞ্চম বাহিনীর লোেক? না এটা একটা বিশেষ রণকৌশল?
কিন্তু সেনাপতি সুধীন কুমারের কাছে একটি বিষয়ে একটু আলােকপাতের অনুরােধ জানাতে হয় মুজিব তাে বুর্জোয়া নেতা। তার রণকৌশল অনুযায়ী তাে এদের… এবং নিপাত ইত্যাদির আওয়াজ তােলার কথা। তার বাহিনী দু একটি অফিসার এর মনে এ প্রশ্ন কিন্তু জেগেছে।
এপার বাঙলার রণাঙ্গনের পর্যবেক্ষক হিসেবে কয়েকটি সংবাদ সুধীন কুমার ও তার মারফত জি ও প্রমােদ দাশগুপ্তের কাছে … করছি। মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার ফলে সাধারণ সৈনিক ও উচ্চতর কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক গভীর পরিখা সৃষ্ট হওয়ার ফলে ‘শ্রেণীসংগ্রাম’ নামক … অভিযান কিছুটা স্তিমিততা। অত্যন্ত বিশ্বস্ত অফিসারদেরও অনেকের গােলমেলে রণকৌশলের নির্দেশে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। অপেক্ষার চতুর ও অভিজ্ঞ অধিনায়কদের…কেই এমন কি খতম’ ফ্রন্টে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদেরও কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী রণাঙ্গন থেকে যুদ্ধের কলাকৌশল সম্পর্কে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে উৎসাহী। হতচকিত কিছু কিছু সৈনিক আত্মগােপন করেছে বিচ্ছিন্ন টহলদারদের দল স্থানে স্থানে আত্মসমর্পণ করছে। কোথাও বা ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত হচ্ছে।
আগামী মরশুমের আগে এ সমস্ত প্রশ্ন যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা না করলে সামগ্রিক পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে।

সূত্র: সপ্তাহ, ৯ এপ্রিল ১৯৭১