দ্যা স্টেটসম্যান
২২ মে ১৯৭১
সম্পাদকীয়
ক্ষমতার ভারসাম্য
পূর্ববাংলার ঘটনাসমূহের বিশ্ব রাজনৈতিক প্রভাবগুলি ভারত তার কূটনৈতিক কর্মকান্ডে এখনো সফলভাবে বিশ্বকে উপলব্ধি করাতে পারেনি। শরণার্থীদের ব্যাপক আন্দোলন এটিকে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যে একটি সংকীর্ণ অর্থেও পূর্ব পাবংলার ঘটনা পাকিস্তানের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবেচিত হতে পারে না। তবুও, কয়েক দিন আগেই ভারত শরণার্থী সমস্যার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে ও আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে ও কিছুটা সরাসরি ভারতের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করার কথা বলছে। কিন্তু অন্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলি মনে করে সমস্যাটি মানুষের ভোগান্তি সংক্রান্ত এবং তারা মনে করে কেবলমাত্র পাকিস্তান সরকারের সহযোগিতায় এটি সমাধান করা যেতে পারে। ওয়াশিংটন লন্ডনে ইসলামাবাদের দূত রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলছে; এবং এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে পাকিস্তানী কূটনৈতিক সম্পূর্ণভাবে অবিশ্বাসযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে, ওয়াশিংটন ও লন্ডন উভয়ই সাহায্যের জন্য ইসলামাবাদের অনুরোধে কিছুটা বিবেচনা করেছে, এটি কেবলমাত্র পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনর্বাসন করার জন্য নয় বরং পূর্ববাংলার কোটি কোটি মানুষের জন্য তাত্ক্ষণিক ত্রাণও তারা প্রদান করবে।
পাকিস্তানের বিষয়টি বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারে। তারা এটাকে বড় মানবিকতার দিক থেকে দেখতে পারে। তবে নয়াদিল্লিকে প্রথম থেকে উদ্দিপনাময় মনে হয়েছে। তারা এর রাজনৈতিক প্রভাবগুলির উপর জোর দিচ্ছে। তারা এখন এটা নিয়ে আলোচনাও করছে। যদিও পূর্ব বাংলার সমস্যার মোকাবিলায় তাদের অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। এটা ভাবার কারণ নেই যে কোন স্পষ্ট কারণ বা চিন্তাভাবনা ছাড়াই এরকম করছে তারা। সম্ভবত কিছু ইচ্ছাকৃত চিন্তাভাবনা ছিল যে পূর্ববাংলার জনগণ দ্রুত বিজয় লাভ করবে, অথবা খারাপ হলে আরও খারাপ হতে পারে – মিলিটারি প্রশাসন দ্রুত শাসন কায়েম করবে সেক্ষেত্রে। যাই হোক না কেন এমন কোন দির্ঘ মেয়াদি সমস্যা তৈরি হবেনা যা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা যত বিস্তৃত হোক বা প্রভাবিত করুক না কেন – একটি ভয়ঙ্কর বাস্তবতা না সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত অনুমান করা যাবে বলে মনে হয় না। এমনকি যখন শরণার্থী প্রবাহ শুরু হল তখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী ত্রাণ সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল: গত কয়েক দিন হল যে তারা দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। কিন্তু এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে কিনা।
কোন পদক্ষেপ নেয়া খুব সহজ হবে বলে মনে হয়না। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে নির্দিষ্ট স্বার্থ রক্ষায় নেয়া যে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ বড় ধরনের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে। অন্য শক্তি গুলোও তাতে জড়িত হতে পারে। অন্তত পরোক্ষ ভাবে। কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্ত এড়ানো যাবে যদি বড় শক্তিগুলো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তাদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদের মত গড়ে নিতে বলার ব্যাপারে ইসলামাবাদকে বলে। কিন্তু সত্য হচ্ছে গত দুই সপ্তাহ ধরে পূর্ব বাংলায় যা ঘটেছে তাতে সেখানে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা সম্ভব নয়। কারণ তারা কোন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গ্রহণ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। তারা এই ব্যাপারে ভিত যে পশ্চিম পাকিস্তান চিনের সাথে আতাত করবে যেহেতু পশ্চিমা দেশ অ রাশিয়া ইসলামাবাদকে এমন মুভমেন্টে অনুৎসাহিত করেছে।
দৃশ্যত এটিও যুক্তিযুক্ত যে পূর্ব পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলে উপমহাদেশের ক্ষমতার ভারসাম্য এলোমেলো হবে এবং পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। ক্ষমতার কৃত্রিম ভারসাম্য বজায় রাখার নামে অনেক অপকর্ম করা হয়েছে; পশ্চিম পাকিস্তান এই ব্যালেন্স রক্ষা করতে যেয়ে গত কয়েক বছরে পূর্ব বাংলায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবং তর্ক হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে বিশাল এলাকা জুড়ে একটি দুর্বল আন্দোলন হতে পারে। তাদের কাজের গতি অনেক বেড়ে যাবে যদি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধ অনির্দিস্টকালের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড গেরিলা আক্রমণে রূপ নেয়। এমনকি যদি পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পূর্ববাংলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে তবুও বিছিন্নভাবে গেরিলা আক্রমণ চলতেই থাকবে। এতে তাদের নেতৃত্ব অ লক্ষ্যের ব্যাপক পরিবর্তন হবে। যদি তা হয় তবে চায়না তেমন উদ্বিগ্ন হবেনা যেহেতু পাকিস্তানের স্বার্বভৌমত্ত বজায় থাকবে যা এখন আছে। জেতাই হোক না কেন পিকিং তার দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প পরিকল্পনা বন্ধ করেনি।